‘ঠিকমতো জাকাত দিলে কেউ দরিদ্র থাকত না’

জাকাত, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 02:05:55

আলো ঝলমলে এই সভ্যতায় বহু মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই, শিক্ষা-স্বাস্থ্য তো অনেক দূরের কথা। পৃথিবীতে কী সম্পদের সঙ্কট রয়েছে? পৃথিবীতে আসলে সম্পদের কোনো সঙ্কট নেই, সঙ্কট সুষম বণ্টন, ব্যবস্থাপনা তথা জীবনদৃষ্টির। পৃথিবীর সিংহভাগ সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে আছে গুটিকয় মানুষের হাতে। ফলে ব্যাপক জনগোষ্ঠী অভাব-অনটনে পীড়িত।

এটা বলতে দ্বিধা নেই, সভ্যতাগর্বী এই পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষ এখনও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আর দরিদ্রসীমায় থাকাদের অধিকাংশই মুসলিম। এই বাস্তবতার মাঝে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান শোনালেন আরও ভয়াবহ কথা।

তিনি জানিয়েছেন, মুসলিম বিশ্বে ৩৫ কোটি মানুষ বর্তমানে চরম দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। এমতাবস্থায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বিশ্বব্যাপী যেসব দুঃস্থ মুসলিম দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন, তাদের সহায়তার জন্য মুসলিম দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইস্তাম্বুলে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) দু’দিনব্যাপী (৮-৯ ডিসেম্বর) বিনিয়োগবিষয়ক সম্মেলনে এ আহ্বান জানান এরদোগান।

এরদোগান বলেন, ধনী মুসলিমরা ঠিকমতো জাকাত দিলে সমাজে কেউ দরিদ্র থাকত না। তিনি বলেন, মুসলিম দেশগুলোর ২১ শতাংশ অর্থাৎ ৩৫ কোটি মুসলিম ভাইবোন দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। অন্যদিকে ধনী মুসলিমরা গরিবদের চেয়ে ২০০ গুণ বেশি সম্পদশালী। এমতাবস্থায় তারা যদি ইসলামি শরিয়া মতো জাকাত দিতো, তা হলে মুসলিমদের কেউ গরিব থাকত না। মুসলিম দেশগুলো মাথা উঁচু করে চলতে পারত বিশ্ব দরবারে।

এ ব্যাপারে তিনি ওআইসিকে ধনী মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সহায়তায় একটি তহবিল গঠনের পরামর্শ দেন। এ সময় তিনি ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে গত মাসে আলবেনিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থতের সাহায্যের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, সবকিছু একত্রিত করে আলবেনিয়ার ভাইদের সাহায্য করুন।

গত ২৬ নভেম্বর আলবেনিয়ায় ৬ দশমিক চার মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ওই ভূমিকম্পে ৫১ জন মারা যান এবং ৯ শতাধিক মানুষ আহত হন। ঘর-বাড়ি ও রাস্তা-ঘাট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান মুসলিম বিশ্বের আলোচিত নেতাদের একজন। ২০০২ সালে ক্ষমতায় আসার পর একটানা ১৬ বছর ধরে তিনি দেশটির ক্ষমতায় রয়েছেন। তিনি তুর্কি শাসন পদ্ধতিকে উগ্র সেক্যুলারিজমের ধারা থেকে রক্ষণশীল উদারনৈতিক জাতীয়তাবাদী ধারায় নিয়ে এসেছেন। এটা তার বিশাল কৃতিত্ব।

তিনি শক্তিমান মধ্যপন্থী ইসলামিক দেশগুলোর মধ্যে কার্যকর ঐক্যের জন্য অনেক দিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। ন্যাটোর সদস্য দেশ হওয়ার পরও এরদোগান রাশিয়ার সঙ্গে সমান্তরাল সম্পর্ক বজায় রেখে তুরস্কের পররাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে দ্বিমুখী বিকল্প উন্মুক্ত রেখেছেন। এমনকি ইরান ও সৌদি আরবের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছেন।

এদিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়াসহ বিশ্বের ১৭০ কোটি মুসলমানের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের কর্মপন্থা নির্ধারণে ৫ জাতি মুসলিম ঐক্যের কনভেনশন ডেকেছেন। ১৮ থেকে ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে অংশ নেবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট উইদোদো ও কাতারের আমির শেখ তামিম আল থানি।

ওআইসির বিনিয়োগ সম্মেলনে ৫ জাতির করভেনশনকে সামনে রেখে এরদোগানের এমন আহ্বান অর্থপূর্ণ কোনো কিছু বয়ে আনে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর