রমজানে নারীদের ইবাদত প্রসঙ্গে কিছু কথা

রামাদ্বান কারীম, ইসলাম

যাইনাব আল গাযী, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-08-31 01:52:12

পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন আজ। রমজান মাসের চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে মুসলমানরা অনন্য রহমতের মাসে প্রবেশ করেছে। রমজানের চাঁদ দেখার পর থেকে ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষ আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে মনোনিবেশ করেছ। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে তওফিক দান করুন, যেন আমরা বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

রমজান মাসে আমাদের মাথায় রাখতে হবে, এ মাসটি মূলত ইবাদত-বন্দেগির মাস। খাবারের আয়োজনের মাস নয়। কিংবা অন্যকোনো অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় কাটানোর মাস নয়।

আমাদের মা-বোনদের অবস্থাতো বড় করুণ। তারা দিনের একটা অংশ কাটান রান্নাঘরে বাহারি ইফতার বানাতে। আর একটা অংশ কাটান রমজান উপলক্ষে প্রচারিত বিভিন্ন টেলিভিশনের আয়োজন নিয়ে।

হ্যাঁ, রমজান উপলক্ষে অনেক বাড়িতে কোরআন তেলাওয়াত হচ্ছে, নফল নামাজ হচ্ছে। তার পরও আমরা খেয়াল করবো, সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে যেন নিজেকে হেফাজত করতে পারি। এ জন্য ঘরের সবাইকে সর্বাগ্রে একমত হতে হবে যে, আমরা সবাই খাবারের পেছনে সময় কম দেবো। পরস্পরে পরস্পরকে সাহায্য করব, যেন রান্নাঘরে একা নারীর সময় বেশি না কাটে।

আমাদের দেশে বাহারি ইফতার আয়োজনের যে প্রচলন ও ঐতিহ্য রয়েছে, তা পালন করতেই হবে এমনটা নয়। রসম-রেওয়াজে পালন কষ্টসাধ্য ক্ষেত্রবিশেষ এটা জুলুমের শামিল। তা আমরা অবশ্যই বাদ দেবো। ঘরের মহিলাদের কষ্ট কম হয় এমন দু’একটা আইটেম, খেজুর, পানি ও শরবতই তো যথেষ্ট ইফতারের জন্য। এর বেশি আয়োজন করে ঘরের মানুষকে কষ্ট দেওয়ার কোনো অর্থ নেই।

আমাদের মনে রাখতে হবে, পেটের ৩ ভাগের ১ ভাগ খাবার খাবো আর একভাগ পানি ও একভাগ খালি রাখবো। অথচ আমরা পেট ভরে খেয়ে এরপর তারাবির নামাজে অংশ নেই, কিন্তু বেশি খাবারের চাপে নামাজে দাঁড়িয়ে শারীরিক শান্তি পাওয়া যায় না; মনে তৃপ্তি আসে না।

ঘরের নারীদের রমজান মাসে ইফতার বানানো ছাড়াও সেহেরির আয়োজন করতে হয়, বাচ্চাদের সামাল দিতে হয় ও সংসারের নানা কাজ করতে হয়। এসব কাজ করতে বরতে ইবাদতের জন্য সময় খুব কমই পান, কিংবা সময় পেলেও ক্লান্তি তাকে ঘিরে ধরে। বাড়ির অন্য সদস্য, বিশেষ করে মুরুব্বি ও পুরুষরা আশা করি এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেবেন। চেষ্টা করবেন, আপনার স্ত্রী, মা কিংবা বোনকে ইবাদতের সুযোগ করে দিতে।

রমজানে চেষ্টা করবো প্রতিদিন কমপক্ষে এক পারা কোরআন তেলাওয়াত করার। সেই সঙ্গে রান্নাঘরে কাজ করার সময় সর্বদা জিকির করবো, ৫ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে পড়বো, সুন্নতগুলো বাদ দেবো না। বিকেলে ইফতার বানানোর সময় বেশি করে রান্নার উপকরণ বিশেষ করে পেঁয়াজ-রসুন কেটে রাখলে, তরি-তরকারি ও মাছ-গোশত প্রস্তুত করে রাখলে সেহেরির সময় কষ্ট কম হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর সময় বেঁচে যাবে। সেহেরির সময় যদি আগেভাগে রান্নার কাজ শেষ করে রাখেন, তবে রাতের তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে পারবেন- ইনশাআল্লাহ।

নিজের ইবাদতের পাশাপাশি সন্তানাদি ও পরিবারের অন্যদেরও তাগাদা দেবেন ইবাদত-বন্দেগি করতে। সময়-সুযোগ হলে তাদের কাজ করে দিয়ে হলেও ইবাদতের সুযোগ করে দেবেন।

পুরুষদের মসজিদে যেয়ে সম্পূর্ণ নামাজ আদায়ের সুযোগ রয়েছে, রয়েছে বিভিন্ন দ্বীনি মজলিসে অংশ নেওয়ার সুযোগ। ইচ্ছে হলে তারা মসজিদের নিরিবিলি পরিবেশে বসে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন। কিন্তু নারীদের এসব সুযোগ নেই। তাদের বাচ্চা-কাচ্চা ও সংসারের নানান দায়িত্বের চাপ থাকে। বিষয়গুলো পরিবারের পুরুষ সদস্যরা মাথায় রাখলে নারীদের জন্য ইবাদত-বন্দেগি করার সুযোগ মিলবে বেশি। আল্লাহতায়ালা ইবাদতের কাজে পরস্পরকে সহযোগী হওয়ার তওফিক দান করুন। আমিন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর