স্বর্গীয় আবহ সৃষ্টির দিন

, ইসলাম

মুহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাত, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2024-04-11 07:54:35

ইসলাম মানবতার ধর্ম। তাই মুসলমানদের সমস্ত আনন্দ উৎসব মানবিক ও সর্বজনীন। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের দিনটির সর্বজনীনতা ও ব্যাপকতা এতই বিস্তর যে, পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তের মুসলমানরা এ দিনটি মহা ধুমধামের সঙ্গে উদযাপন করেন। সারা বছর অধীর আগ্রহে বিশ্ব মুসলিম অপেক্ষা করে মহিমান্বিত এ দিনটির জন্য। মুসলিম জাতি তথা অন্যান্য জাতির কাছেও ঈদুল ফিতরের মতো এত ব্যাপক ও আকাঙ্ক্ষিত দিন বা অনুষ্ঠান আর নেই। ঈদুল ফিতর নিছক কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং এর রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ ও সুদূর প্রসারী ভূমিকা। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধ ও অর্থনৈতিক সাম্যতা গঠনে ঈদুল ফিতর এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেব অনাদি কাল থেকে চলে আসছে।

ঈদের নির্মল আনন্দে ভেসে যায় মানুষের মনের সমস্ত হিংসা বিদ্বেষ, পরিচ্ছন্ন হয়ে ওঠে অন্তরাত্মা। ঈদুল ফিতর সমাজের নিরন্ন অসহায় মানুষগুলোর আর্থিক দৈন্যতা গুচিয়ে ঈদের আনন্দে যাতে শামিল হতে পারে সে ব্যবস্থা করে সমাজে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্যতাকে কিছুটা হলেও লাগব করে। ঈদুল ফিতরের সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম ও অনবদ্য। মানুষ হিসেবে আমরা প্রত্যেকে সমাজ বা রাষ্ট্রে বসবাস করলেও প্রত্যেকের মতামতের বা চিন্তার ভিন্নতা রয়েছে। ভিন্নতা রয়েছে আমাদের রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক রীতি-নীতি, আচার-ব্যবহার কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে ভাষার ভিন্নতা যা প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের একে অন্যের প্রতি অনেক সময় বিষিয়ে তুলে এবং পরস্পরকে দূরে ঠেলে দেয় সৃষ্টি হয় সামাজিক সংঘাত। কিন্তু ঈদুল ফিতর আমাদের সারাজীবনের এ সব কলুষতাকে দূর করে, সব ভেদাভেদ ভুলে একত্র করে দেয়।

ঈদের নামাজে ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়, মালিক-শ্রমিক, শিক্ষক-ছাত্র, সাদা-কালো, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব শ্রেণির-পেশার মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায় এবং পরস্পর পরস্পরের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে; তখন এক স্বর্গীয় আবহ সৃষ্টি হয় এবং ঈদগাহ ময়দান হয়ে ওঠে এক অনন্য সামাজিক মিলনমেলা। নামাজ শেষে সবাই মিলে একে অপরের সঙ্গে যখন কোলাকুলি করে জড়িয়ে ধরে তখন সারা বছরের মলিনতা, বৈষম্যতা যেন নিমিষেই ধুয়ে মুছে যায়, যা পৃথিবীতে আর কোনো দিন বা অনুষ্ঠানে বিরল।

পেশাগত কারণে আত্মীয়-স্বজন যারা দেশের বিভিন্নস্থানে থাকেন তারাও ঈদের দিনের একত্র হয় এবং একে অপরের বাড়িতে গিয়ে ভাব বিনিময় করে। এমনও দেখা যায়, কোনো কারণে সারা বছর হয়তো প্রতিবেশির বাড়িতে যাওয়া হয় না বা কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ ছিল অথচ ঈদের দিনে নির্দ্বিধায় পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে নিমিষেই বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করে দিল। এ যে সাম্যের জয়গান তা একমাত্র সম্ভব মহাসাম্যের এই ঈদে। ঈদুল ফিতর মানুষকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে, শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করে, আত্মীয়ের বন্ধনকে দৃঢ় করে এবং সামাজিক সাম্যকে পরিপক্ব ও ব্যাপকতা দান করে।

তাই আসুন, ঈদকে ধর্মীয় ও সামাজিক চেতনার বাহন হিসেবে এর মর্ম উপলব্ধি পূর্বক সারা মাসের সিয়াম সাধনায় অর্জিত সৎ গুণাবলি এবং ঈদের দিনের পবিত্র, নিষ্কলুষ আনন্দ সবার মধ্যে বিলিয়ে দিই। তাহলে নানা জটিলতায় ভরে থাকা এই সমাজ সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ হিসেবে গড়ে উঠবে, পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন আরও মজবুত হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর