মহিমান্বিত শবেকদর

রামাদ্বান কারীম, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-04-07 04:09:22

আজ ২৬ রমজানের দিবাগত রাত। রাতটি শবেকদর হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। তাই রাতটি এ দেশের মুসলমানরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিভিন্ন নফল ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে পালন করবেন। এ রাতকে কদরের রজনী কেন বলা হয়, এ ব্যাপারে তাফসিরকাররা বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। কদর শব্দের অর্থ পরিমাণ নির্ধারণ ও হুকুম। যেহেতু এ রাতে সৃষ্টিকুলের ভাগ্যলিপিতে নির্ধারিত অংশের যেটুকু এ রমজান থেকে পরবর্তী রমজান পর্যন্ত বাস্তবায়নযোগ্য, তা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আদিষ্ট ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাই এ রাতের নামকরণ করা হয় লাইলাতুল কদর।

আবার কদর শব্দের আরেক অর্থ হলো- সম্মান, মাহাত্ম্য। হজরত আবু বকর ওয়াররাক (রহ.) বলেন, এ রাতকে কদরের রাত এ জন্য বলা হয়েছে, এ রাতে মর্যাদাবান ফেরেশতা হজরত জিবরাইল (আ.), মর্যাদা ও মাহাত্ম্যপূর্ণ কিতাব আল কোরআন, সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী, সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে আসেন।

শবেকদরের ফজিলত
লাইলাতুল কদরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এ গৌরবময় রজনীতে মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও মুক্তির সনদ ঐশীগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। শবেকদর সম্পর্কে কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ -সুরা কদর : ১-৩

এটি শ্রেষ্ঠতম রাত। এ রাতের ইবাদতের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদত করবে তার পূর্ববর্তী সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ -সহিহ বোখারি

শবেকদর সম্পর্কে অভিমত
শবেকদর সম্পর্কে সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও বিতর্কমুক্ত অভিমত হলো, শবেকদর রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একান্ত যদি এটা কারও জন্য সম্ভবপর হয়ে না ওঠে, তাহলে ছাব্বিশ রোজার দিবাগত রাতে কিছুতেই গাফেল থাকা উচিত নয়। বিশেষ করে ওইদিন মাগরিব ও এশার নামাজ কেউ মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আদায় করলে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী সে শবেকদরের ফজিলত পেয়ে যাবে।

এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ বলে থাকেন, সাতাশতম রাতকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া অবৈধ কিংবা বেদআত। অথচ এর সপক্ষে হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল রয়েছে। হজরত শোবা (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) শবেকদরের রাত সম্পর্কে বলেন, ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি তা সম্পর্কে অবগত আছি, (তা হলো সাতাশতম রাত্রি)। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ রাতে আমাদের নামাজে দাঁড়াতে আদেশ করতেন।’ -সহিহ মুসলিম : ২৬৯

হজরত মুয়াবিয়া (রা.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), হজরত হাসান (রা.) ও হজরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) অনুরূপ ধারণা পোষণ করতেন।

শবেকদরের আমল
হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের শবেকদর সম্পর্কে অবগত করানোর জন্য বের হয়ে এসেছিলাম, কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তির ঝগড়ার কারণে আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ সহিহ বোখারি : ২৭১

সুতরাং দুই ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যকার ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া এ রাতের অন্যতম ইবাদত। তাছাড়া হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! যদি আমি শবেকদর পেয়ে যাই, তবে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রাসুল (সা.) বলেন, ‘এ দোয়া পড়বে, হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাকারী এবং আপনি ক্ষমা পছন্দ করেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৫১৩

এ সম্পর্কিত আরও খবর