যে কাজ আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়

বিশেষ নিবন্ধ, ইসলাম

মুফতি শরিফুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-10-06 20:05:16

বিয়েশাদি ইসলামের দৃষ্টিতে একটি ইবাদত। নিছক আনন্দ লক্ষ নয়। বিয়ের মাধ্যমে নিজের ঈমান-আমলকে সুদৃঢ় করা বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য। আজীবন সংসার করার মানসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দেয় ইসলাম। তাছাড়া এই সম্পর্কের মধ্য দিয়ে বিস্তার ঘটে মানব বংশের। এ হিসেবে বিয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী নির্বাচন করতে হবে অনেক চিন্তাভাবনা করে।

নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘চারটি গুণ দেখে পাত্রী নির্বাচন করা হয়। সম্পদ, উচ্চবংশ, রূপ ও দ্বীন। তুমি দ্বীনদার পাত্রীকে প্রাধান্য দাও, সফল হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৫০৯০

তাই এই বন্ধনকে মজবুত করতে এবং সুখময় করতে ইসলাম স্বমী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি কিছু দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হলো-

স্বামীর ওপর স্ত্রীর হক : সাধ্যমতো স্ত্রীর খোরপোশ ও উপযুক্ত বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। স্ত্রীর মন্দ আচরণে ধৈর্য্যধারণ করা। স্ত্রীর সঙ্গে শত্রুসুলভ আচরণ পরিহার করা। মারধর বা গালাগাল না করা। বিনাকারণে তালাক না দেওয়া। একাধিক স্ত্রী থাকলে সবার সঙ্গে ইনসাফভিত্তিক আচরণ করা ইত্যাদি।

স্ত্রীর ওপর স্বামীর হক : স্বামীর অনুগত হওয়া। সর্বদা স্বামীকে খুশি রাখা। স্বামীর সাধ্যের বাইরে কিছু না চাওয়া। স্বামী বাড়িতে থাকলে তার অনুমতি ব্যতীত নফল নামাজ ও রোজা না রাখা। স্বামীর সম্পদের হেফাজত করা ও তার মাল অন্য কাউকে না দেওয়া এবং নিজেও প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খরচ না করা। স্বামীর অনুমতি ব্যতীত বাইরে কোথাও না যাওয়া। স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া না করা। স্বামীর অনুমতি ব্যতীত অন্য কাউকে ঘরে আসতে না দেওয়া। কথায় কথায় তালাক না চাওয়া।

তালাক বিয়ের চুক্তি বাতিল করাকে বোঝায়। ইসলামি শরিয়ত বিয়ের ক্ষেত্রে চুক্তির চেয়ে ইবাদতের গুরুত্ব বেশি দিয়ে একে সাধারণ বৈষয়িক চুক্তি অপেক্ষা অনেক ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছে। তাই এ চুক্তি বাতিল করার ব্যাপারটিও সাধারণ ব্যাপারের চেয়ে কিছুটা জটিল। যখন খুশি, যেভাবে খুশি তা বাতিল করে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা চলবে না, বরং এর জন্য একটি সুষ্ঠু আইন রয়েছে।

ইসলামের শিক্ষা হলো- যে বিয়ের চুক্তি সারাজীবনের জন্য সম্পাদন করা হয়, তা ভঙ্গ করার মতো কোনো অবস্থা যাতে সৃষ্টি না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। কেননা এ সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিণাম শুধু স্বামী-স্ত্রী পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এতে বংশ ও সন্তানদের জীবনও বরবাদ হয়ে যায়। এমনকি অনেক সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদও সৃষ্টি হয় এবং সংশ্লিষ্ট অনেকেই এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তাই তালাকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পবিত্র কোরআনে পুরুষদের ব্যক্তিগতভাবে যথাক্রমে তিনটি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাদের সদুপোদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং প্রহার করো।’ -সুরা আন নিসা : ৩৪

অর্থাৎ অবাধ্য স্ত্রীদের সংশোধনকল্পে সর্বপ্রথম তাকে নরমভাবে বুঝিয়ে-শুনিয়ে অনুগত করে রাখার চেষ্টা করবে। যদি তাতে কাজ না হয় তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে চরম অসন্তুষ্টি প্রকাশের উদ্দেশ্যে এক ঘরেই নিজে পৃথক বিছানায় শোবে। এটি উত্তম সতর্কীকরণ। আর যদি সে এমন ব্যবস্থা গ্রহণের পরও স্বীয় অবাধ্যতা থেকে ফিরে না আসে, তাহলে হালকা শাসনের ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এ পর্যায়ের শাস্তিদানকে রাসুল (সা.) পছন্দ করেননি, বরং তিনি বলেছেন, ভালো লোক এমন করে না। এভাবে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় যদি স্ত্রী সংশোধন হয়ে যায়, তবে তার সঙ্গে সহনশীলতা অবলম্বন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লিখিত তিন পদ্ধতিতে ব্যক্তিগত চেষ্টায় কলহ মেটাতে না পারলে উভয় পরিবারের মুরব্বি-অভিভাবকদের দ্বারস্থ হতে হবে। তালাক থেকে বাঁচানোর জন্য এটি অধিক সতর্কতামূলক একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মতো পরিস্থিতিরই আশঙ্কা করো, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে মীমাংসা চাইলে আল্লাহতায়ালা তাদের কাজে সহায়তা প্রদান করবেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সব কিছু অবহিত।’ -সুরা আন নিসা : ৩৫

তালাক দেওয়ার পূর্বে দুই পক্ষের দুই সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা হয়ে গেলে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে যেতে পারে এবং তালাকের কষ্ট ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে। তবে অনেক সময় দাম্পত্য কলহ এমন রূপ ধারণ করে যে সংশোধনের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় এবং বৈবাহিক সম্পর্কের কাঙ্ক্ষিত ফল লাভের স্থলে উভয়ের একত্রে মিলেমিশে থাকা আজাবে পরিণত হয়। এমতাবস্থায় এ সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়াই উভয় পক্ষের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার পথ। তেমন কিছু করতে হলে এক তালাকের বেশি দেবে না। তালাকের ক্ষমতা স্ত্রীর হাতে অর্পণ করা হলে, সেও চিন্তাভাবনা করে উভয়পক্ষের অভিভাবকের মাধ্যমে সালিসি করে তবেই সিদ্ধান্ত নেবে।

ইসলাম অন্যান্য ধর্মের মতো বৈবাহিক বন্ধনকে ছিন্ন করার পথ বন্ধ করে দেয়নি, আবার কথায় কথায় তালাক দেওয়াকে সমর্থন করেনি। বরং চিন্তাভাবনা করে ধাপে ধাপে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে। অতএব একান্ত অপারগতা ছাড়া তালাকের ক্ষমতা প্রয়োগ একটি ঘৃনিত কাজ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম হালাল বিষয় হচ্ছে- তালাক।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২১৭৮

এ সম্পর্কিত আরও খবর