শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)-এর ত্যাগ

বিশেষ নিবন্ধ, ইসলাম

মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-09-01 23:34:42

 

নবুওয়তের আগে জাহেলিয়াতের যুগটি ছিলো- মানব ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন, অজ্ঞতা ও বর্বরতায় পূর্ণ। ওই সময়ে ছিলো না কোনো মানবতা ও হৃদ্যতা। জুলুম-অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন ও দুঃশাসনে ভরপুর ছিলো ওই সময়ের সমাজ। ছিলো না মানুষে মানুষে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহনশীলতা। মদ, জুয়া, পাপাচার-অনাচার ও ব্যভিচার ছিলো তাদের নিত্যদিনের অভ্যাস। তারা নিজ হাতে কন্যাসন্তানকে জীবিত দাফন করতো। তাদের কাছে ছিল না নারীর কোনো মান-মর্যাদা। বিত্তশালীরা অন্যায়ভাবে দরিদ্রদের ওপর জুলুম করতো। সর্বোপরি কথা হলো, সেকালের সমাজ ব্যবস্থায় ছিলো না কোনো শান্তির ছোঁয়া। যুদ্ধ, হানাহানি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা সবসময় লেগেই থাকতো। চারদিকে ছিল শুধু অশান্তির আগুন, এরই মাঝে মানুষ জীবনযাপন করছিল। ঠিক ওই সময় শান্তির বার্তা নিয়ে আগমন করেন মানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি ছিলেন গোটা পৃথিবীর জন্য রহমত। পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে গোটা পৃথিবীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ -সুরা আল আম্বিয়া : ১০৭

নবী কারিম (সা.)-এর দূরদর্শিতা, সত্যপ্রিয়তা এবং চিন্তাশীলতার এক সুউচ্চ মিনার ছিলেন। তিনি উত্তম গুণাবলী যথা- উন্নত চরিত্র, সত্যবাদীতা, আমানতদারিতা, অঙ্গিকার পালন ও পরিচ্ছন্ন হৃদয় দিয়ে মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন। স্বজাতির লোকেরা তার নাম রেখেছিলো- আল আমীন। সবাই তাকে আল আমীন বা বিশ্বাসী বলে চিনতো।

নবী কারিম (সা.) সমাজের এ করুণ পরিস্থিতি দেখে খুবই মর্মাহত হন এবং সমাজকে নতুনভাবে নির্মাণে দৃঢ়সংকল্প গ্রহণ করেন। এ লক্ষে নানামুখি পরিকল্পনা হাতে নেন। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও অশান্তি দূর করতে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি গঠন করেন হিলফুল ফুজুল নামের শান্তি সঙ্ঘ।

তিনি স্বজাতির লোকদের মূর্তিপূজা এবং নোংরা জীবনযাপন দেখে বিচলিতবোধ করতেন। কিন্তু তার সামনে সুস্পষ্ট কোনো পথ-পদ্ধতি ছিল না। যার মাধ্যমে প্রচলিত পথের বিপরীত চলে স্বস্তি-শান্তি পাবেন। নবীজির বয়স যখন ৪০ বছর, তখন আল্লাহতায়ালা তার ওপর অবতীর্ণ করেন মানবজাতির সঠিক পথ-নির্দেশিকা পবিত্র কোরআন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সত্যের এ বাণী নিয়ে ছুটে চললেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে চাদর আবৃত (মুহাম্মদ সা.), ওঠো তোমার শয্যা ছেড়ে দুনিয়ার মানুষদের ঈমান না আনার পরিণাম সম্পর্কে সাবধান করো এবং তুমি নিজে তোমার মালিকের মাহাত্ম্য বর্ণনা করো।’ -সুরা মুদ্দাসসির : ১-৩

নবীজি (সা.) শান্তিময় সমাজ গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে শুরু করেন তার দাওয়াতি মিশন। প্রথমে চুপিসারে, পরে প্রকাশ্যে। মক্কার মানুষ নবীজির সততা, ইনসাফ, আমানতদারিতা ও উত্তম চরিত্র দেখে ধীরে ধীরে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিতে লাগলো। কাফেররা এটা টের পেয়ে নবীজির বিরুদ্ধে নানামুখি ষড়যন্ত্র শুরু করলো। অথচ তারাই কিন্তু নবীজির সুন্দর চরিত্র ও গুণাবলীর কারণে তাকে আল আমীন উপাধি দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে শুধু ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কায় তারা নবীজিকে হত্যার মতো ভয়ানক পরিকল্পনা গ্রহণ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি।

মক্কার কোরায়েশদের একাংশ নবীজির মিশন ঠেকাতে নানাবিধ পরিকল্পনা হাতে নেয়। তারা নবী কারিম (সা.) কে ধনসম্পদ, ক্ষমতা, সুন্দরী নারীর লোভ দেখায়। সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েও কাজ হাসিল করতে না পেরে অপপ্রচার ও নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। কিন্তু তারা কোনোভাবেই নবীজিকে ঠেকাতে পারেনি। তখন তারা নবীজির সাথী-সঙ্গীদের ওপর নির্মম নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করে, যার বিবরণ পাঠ করলে দেহমন শিউরে ওঠে।

নবী কারিম (সা.) ও তার সাথীরা এমন দুঃসময়ে সত্য ও ন্যায়ের ওপর অটল-অবিচল ছিলেন। কি ছিলো সেই সম্মোহনী শক্তি, যার কারণে তারা এতটা অবিচল থাকতে পেরেছেন! তা হলো, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও প্রগাঢ় বিশ্বাস। এ কারণেই মুমিন বান্দা ঈমানের মিষ্টতা ও মাধূর্যতার সামনে কোনো বাধাকে পরোয়া করে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যা আবর্জনা তা ফেলে দেওয়া হয় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিনে থেকে যায়।’ -সুরা আর রাদ : ১৭

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর