হাজীদের সেবায় টানা ১৮ ঘণ্টা: নেই ক্লান্তি, আছে আনন্দ

হজ, ইসলাম

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 23:58:06

মক্কা মোকাররমা (সৌদি আরব) থেকে: ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা টানা কাজ করেও ক্লান্তি নেই সুলাইমান হোসেনের (৩১) চোখে-মুখে। হাজী সাহেবদের সেবা করেই পার্থিব আনন্দ পান তিনি। এ কাজের জন্যে গর্বেরও শেষ নেই তার।

সুলাইমান হোসেন আদতে মক্কা ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থী। শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে আরবি ভাষার ওপর উচ্চশিক্ষা নিতে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন তিনি। হজ উপলক্ষ্যে তিন মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। বন্ধের অবসরটুকু হাজীদের সেবা করে সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছেন। আর এটাকে বেশ ভালোভাবে উপভোগও করছেন তিনি।

সুলাইমান বাংলাদেশ হজ মিশন মনোনীত হজকর্মী হলেও সে সুপারভাইজার। তার অধীনে অন্তত ২০ জন হজকর্মী কাজ করেন এখানে। তার দায়িত্ব মক্কার ছয়টি বড় হাসপাতালের সঙ্গে হজ মিশনের সমন্বয় সাধন করা।

হজ করতে এসে হাজী সাহেবদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সুলাইমানের নেতৃত্বে দলটি মূলতঃ দোভাষী হিসেবে কাজ করেন। হাজীদের কষ্টের কথাগুলো মূলতঃ তারাই ভাষান্তর করে জানান এখানকার চিকিৎসক ও সেবিকাদের। এ ছাড়া আরবিতে চিঠি চালাচালিসহ অসুস্থ হাজীদের দেশে পাঠানো পর্যন্ত সব প্রক্রিয়াতে যুক্ত থাকতে হয় সুলাইমানকে।

খুলনা জেলার কয়রা থানার আমাদি গ্রামের কেরামত আলীর ছেলে সুলাইমান। মিরপুর বাঙলা কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স শেষ করে ভর্তি হন শাহ আলী কামিল মাদরাসায়। সেখান থেকে কামিল পাশ করে উচ্চ শিক্ষার্থে বৃত্তি নিয়ে চলে আসেন সৌদি আরবে।

ছয় ভাই-বোনের মধ্যে বড় সুলাইমান মাসে ৮শ'৪০ রিয়াল বৃত্তি পান। ক্যান্টিন খাবার খরচ ১শ' ৫০ রিয়াল বাদে অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে বেশ ভালোভাবেই দিন চলে যায় তার।

এর বাইরে হজ মিশনে সুপারভাইজার হিসেবে প্রতিদিন পান ১শ' ৩০ রিয়াল। বাড়তি আয় হিসেবে পুরোটাই সঞ্চয় থাকে তার।

‘তার চেয়ে বড় কথা মহান আল্লাহর ঘরের মেহমানদের জন্যে কাজ করার সুযোগ পাওয়া। গত তিন বছর ধরেই এ কাজটি করছি আমি। প্রতিটি হাজীই যেন আমার স্বজন। সেই চেতনা থেকে কাজ করি। ১৬ ঘন্টা থেকে টানা ১৮ ঘন্টা কাজ করেও কোনো ক্লান্তি আসে না। বরং আনন্দ পাই। গর্ব হয় নিজের কাজে’- কাজের ফাঁকে বলছিলেন সুলাইমান।

জনপ্রশাসন ক্যাডারের যুগ্মসচিব ও জেদ্দায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হজ মিশনের কাউন্সেলর মুহাম্মাদ মাকসুদুর রহমান জানান, হাজীদের সুযোগ-সুবিধা দেখার জন্যে সুলাইমানের মতো প্রায় সাড়ে ৪শ' হজকর্মী রয়েছেন। তাদের সবাই হাজীদের খেদমতে নিয়োজিত। এরা সবাই এখানকার প্রবাসী ও নিবেদিত প্রাণ।

তিনি জানান, হজ মৌসুমে এখানে কাজ করে হজকর্মীরা একদিকে আর্থিকভাবে বেশ ভালো সন্মানী পান, তারচেয়ে বড় কথা, দেশের মানুষদের প্রত্যক্ষ সেবা তথা আল্লাহর মেহমানদের জন্যে নিবেদিত প্রাণে কাজ করে নিজেরাও আনন্দ পান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর