বিশ্ব বাণিজ্যে অসম শুল্কনীতি

আমেরিকা, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-23 04:01:02

'বিশ্বায়ন আর বাণিজ্য নীতি'- যার উপর গোটা বিশ্ব এক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবাধ বাণিজ্য নীতি বলতে বিশ্বের দেশগুলো একে অপরের সঙ্গে জল-স্থল-আকাশ পথে অবাধে পণ্য আমদানি ও রফতানি করার স্বাধীনতাকে বোঝায়। বাণিজ্য নির্ভর অর্থনীতির সূচকে প্রতিটি দেশই আমদানি-রফতানি নির্ভর। নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষায় বাণিজ্য পথকে অবাধ ও উন্মুক্ত করার কথা বললেও সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনার ইঙ্গিত দিচ্ছে ভবিষ্যত বাণিজ্য যুদ্ধের।

যদিও এই সমস্যা সমাধানে আত্মপ্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। কিন্তু অবাধ বাণিজ্য প্রশ্নে সবার প্রথমে যে শর্তটি আসে সেটি হলো শুল্কনীতি। বিশ্ব বাণিজ্যে অসম শুল্কনীতির প্রসঙ্গে প্রথমে যে নাম আসে সেটি হলো ১৮২৪ সালের ভারত ও ইংল্যান্ডের অসম শুল্কনীতি। যেখানে দুই দফায় ভারতের বস্ত্রশিল্পের উপর ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ইংল্যান্ড।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন

 

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও চীনের ৩০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন।

খবরে জানানো হয়, ট্রাম্প তার টুইটার অ্যাকাউন্টে এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ শুল্ক কার্যকর হবে। ইতোমধ্যে যেসব চীনা পণ্যে নতুন করে শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে তার মধ্যে স্মার্টফোন ও পোশাক আছে বলেও জানানো হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের এবারের ঘোষণার ফলে সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা সব চীনা পণ্যেই শুল্ক বসানো হবে বলে জানানো হয়।

এদিকে চীনের ২৫ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে আগে থেকেই ২৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। ওই সব পণ্য নতুন ঘোষণার আওতায় পড়বে না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার অনুষ্ঠিত বৈঠক  

 

চীনের রফতানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও শুল্ক আরোপ করেছে। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীনও থেমে নেই। মার্কিন পণ্যেও শুল্ক বসিয়েছে চীন।

যদিও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উত্তেজনা হ্রাসের লক্ষে করা কয়েক দফা বৈঠকের পরই এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর বিশেষজ্ঞরা চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সংকট নিরসনে এ বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (বামে) ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (ডানে) 

 

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতির পর থেকেই চীনের রফতানি করা সকল পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক বসিয়ে আসছে ট্রাম্প। ২০১৮ সালে তিন দফায় চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। স্বল্প সময়ের নোটিশে ২৬৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘটনা ঘটে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বে প্রথম বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করতে যাচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে বেইজিং। অবাধ বাণিজ্য নীতির প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক দ্বিমুখী নীতি নিত্য নতুন সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে।

শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র-চীনের দ্বন্দ্ব নয়, সম্প্রতি ইরাকের হরমুজ প্রণালিতে ব্রিটিশ মালবাহী দুইটি নৌযান আটক করা হলে সমুদ্র পথে বাণিজ্য নীতি নিয়ে তোপের মুখে পড়ে ইরান। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেশ কয়েক দফা বৈঠক শেষে বলেন, সমগ্র বিশ্বে সমুদ্র বাণিজ্য পথ উন্মুক্ত হওয়া উচিত। একইসঙ্গে তিনি বিরূপ মন্তব্য করেন ইরানের এহেন কর্মকাণ্ডে। যদিও এটা নিয়ে ইরানের অবস্থান ছিল বরাবরের মতোই একরোখা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর