মেয়েকে ছেলে সাজিয়ে মানুষ করছে আফগান বাবা-মা

মধ্যপ্রাচ্য, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 15:50:48

মঙ্গল কারিমি, শারিরীক বেশ-ভূষায় প্রথম দেখায় যে কেউ মনে করবে একজন ছেলে। আর কাজকর্ম, তাও ছেলেদের। খামারে বাবার কাজে সাহায্য করে। পশ্চিম আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশের ছোট্ট গ্রাম সানজুরে মঙ্গল তার পরিবারের সঙ্গে থাকে। 

দুই বছর বয়স পর্যন্ত মঙ্গলকে ডাকা হত মদিনা নামে। তখন পর্যন্ত মঙ্গলকে একটি মেয়ে ভাবা হত। মদিনা থেকে মঙ্গল হবার পেছনের গল্পটা একটু আলাদা। এ গল্প সাজানোর পিছনে মঙ্গলের বাবা-মা।

শুরুর দিকটার কথা মঙ্গলের যতটুকু মনে পড়ে, সে একটা সময় তার লম্বা চুলগুলো উলের টুপির মধ্যে লুকিয়ে রাখা শুরু করে। ছেলেদের জ্যাকেট এবং ট্রাউজার পরে মাঠে আর খামারে বাবাকে সাহায্য করতে শুরু করে।

আফগানিস্তানের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় ছেলেদেরকে অনেক বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। অনেকটা ছেলের অভাব পূরণ করতেই এই প্রথা মেনে চলা হয়। মেয়ে থেকে ছেলে হওয়ার এই প্রথাকে আফগানিস্তানে ‘বাছা পোষ’ অর্থাৎ ‘ছেলেদের মতো সজ্জিত’ বলা হয়। সেখানে ছেলে ছাড়া একটা পরিবারকে অসম্পূর্ণ মনে করা হয়।

বিখ্যাত লেখিকা নাদিয়া হাসমি ‘দ্যা পার্ল দ্যাট ব্রোক ইটস শেল’ (খোসা ভাঙ্গা মুক্তা) নামে একটি বইয়ে এমনটাই উল্লেখ করেন। এমনকি ২০১৪ সালের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইয়ের তালিকায় ছিলো বিখ্যাত এই বইটি। 

আফগানিস্তানের ওমেন্স নিউজ এজেন্সির প্রধান নির্বাহী সম্পাদক বলেন, এখানে মেয়েদেরকে পরিবারের বোঝা মনে করা হয়। তিনি নিজে বেশ কয়েকটি পরিবারের বাবা-মায়ের সাথে কথা বলেন।  

তারা বলেন, মেয়েরা ছেলেদের মতো উপার্জন করে তাদের পরিবারকে সাহায্য করতে পারে না। এমনকি তারা একা থাকতেও পারে না । এমন আরও অনেক কারণ আছে বিধায় আমরা এই প্রথা মেনে চলি।

জন্ম থেকেই মেয়েদের এই বৈষম্যের স্বীকার হতে হয়। এমন একটিও পরিবার দেখতে পাওয়া যাবে না, যেখানে মেয়েদের পোশাকে কায়িক পরিশ্রম করতে দেওয়া হয়। 

সাময়িক সময়ের জন্য তাদেরকে ছেলে সেজে থাকতে হয়। মেয়েরা যখন বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করে তখন তারা আবার মেয়েদের মতো সাজ পোশাকে চলাফেরা করতে থাকে।

এই প্রথার পিছনের ব্যাখ্যাটিকে অন্ধ কুসংস্কার ছাড়া আর কোনো শিরোনাম দিতে পারবেন না। তারা এই প্রথাকে তাদের পরিবারের জন্য আর্শীবাদ মানে এবং এরই কল্যাণে পরে ছেলে সন্তান জন্ম নিবে বলে ধরে নেওয়া হয়। 

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মঙ্গলের বাবা বলেন, মঙ্গলকে  মেয়ে থেকে ছেলে রূপান্তরিত করে আমরা খুশি। কারণ এখন আমাদের পরিবারে একটি ছেলে সন্তান আছে। সে এখন একটি ছেলের মতোই সব কাজে আমাদের সাহায্য করে। একটা সময় পরে বয়ঃসন্ধিকাল আসলে, মঙ্গল অবশ্য আবার মেয়ে হয়ে যাবে।  

এ সম্পর্কিত আরও খবর