সুখি ভুটানে শনিবারের ডাক্তার প্রধানমন্ত্রী

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 12:38:53

শনিবারের ভুটান। জিগমে দর্জি ওয়াংচুক ন্যাশনাল রেফারেল হসপিটালে লোটে শেরিং মাত্র একটি ইউরিনারি ব্লাডার রিপেয়ার সার্জারি শেষ করে বের হয়েছেন। তবে শেরিং শুধু চিকিৎসকই নন, হিমালয়ের দেশ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। যে দেশটি গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেসের জন্য বিখ্যাত।

সাড়ে ৭ লাখ মানুষের দেশ ভুটানে ২০০৮ সালে রাজতন্ত্রের অবসানের পর থেকে তৃতীয় জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেরিং। তিনি বলেন, 'এটা আমার দ্বিতীয় কর্তব্য।’

৫০ বছর বয়সী এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অনেকে গলফ খেলেন, অনেকে তীর-ধনুকের চর্চা করেন আর আমি এই রোগী দেখতে পছন্দ করি। আমি আমার সাপ্তাহিক ছুটির দিনটি এখানে কাটাই।'

হাসপাতালে কেউই শেরিংয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করছেন না। একটি বিবর্ন অ্যাপ্রোন পরে হাসপাতালের করিডরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শেরিং। হাসপাতালের নার্স এবং অন্যান্য কর্মকর্তারাও নিজেদের কাজ নিয়েই ব্যস্ত। 

এই বৌদ্ধ প্রধান দেশটি বিভিন্ন কারণেই নিজেকে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চেয়ে সুখের সমৃদ্ধির প্রতি দৃষ্টি দিয়েছে বেশি।

এই সুখ সমৃদ্ধি বৃদ্ধির অন্যতম একটি উপাদান হিসেবে বলা হয়েছে, পরিবেশ রক্ষাকে। ভুটানে কার্বন শূন্য দেশ এবং সাংবিধানিকভাবে দেশের মোট আয়তনের ৬০ শতাংশের বেশি বন রয়েছে। এটি ইকো-ট্যুরিজমকে উৎসাহ দেয় এবং মৌসুমে একজন পর্যটককে আড়াইশ ডলার বা প্রায় ২১ হাজার টাকা দিয়ে এই দেশে প্রবেশ করতে হয়।

রাজধানী থিম্পুতে নেই কোনো ট্রাফিক লাইট। এখানে তামাক বিক্রি নিষিদ্ধ এবং মাত্র ১৯৯৯ সাল থেকে টেলিভিশন দেখার অনুমতি দেয়া হয়।

তবে থান্ডার ড্রাগনের এই দেশেরও নিজ সমস্যা রয়েছে অনেক। দুর্নীতি, প্রান্তিক দারিদ্রতা, বেকার সমস্যা এবং অপরাধীদের গ্যাংসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত দেশটি।

শেরিং বাংলাদেশ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকায় চিকিৎসা শাস্ত্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ২০১৩ সালে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন শেরিং। তবে সেই সময় নির্বাচনে পরাজয় লাভ করে তার দল।

নির্বাচনে হারের পর রাজা জিগমে খেসার নামজিল ওয়াংচুকের আদেশে শেরিংয়ের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল ভুটানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেন।

এখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার কাছে রেফার করা রোগীদের দেখেন শেরিং এবং বৃহস্পতিবার সকালে ইন্টার্ন এবং চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেন তিনি। রোববারের সময়টুকু দেন পরিবারকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও তার চেয়ারের পেছনে একটি অ্যাপ্রোন ঝুলানো রয়েছে।

তিনি বলেন, এই অ্যাপ্রোনটি আমাকে সকলের জন্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দেয়। ভুটানে রোগীদের চিকিৎসার জন্যে সরাসরি কোনো টাকা দিতে হয় না। তবে স্বাস্থ্য সেবার জন্যে আমাদের আরও অনেক কিছু করার রয়েছে।

ভুটান যখন জীবন যাপনে উন্নতি সাধন করেছে, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমেছে এবং সংক্রামিত রোগ নিয়ন্ত্রণে  এসেছে, একই সঙ্গে মদ্য পান এবং ডায়াবেটিস এবং অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শেরিং বলেন, আমাদেরকে এখন আরও উচ্চতর স্বাস্থ্যসেবার দিকে নজর দিতে হবে। শনিবার বাদে অন্য দিনগুলোতে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন তিনি।  হাসপাতালে শেরিংয়ের ৪০ বছর বয়সী রোগী বুমথাপ বলেন, আমি যখন দেশের সেরা চিকিৎসক এবং প্রধানমন্ত্রীর অধীনে চিকিৎসায় রয়েছি, তখন অনেক বেশি আস্বস্ত বোধ করি।

প্রধানমন্ত্রী শেরিং বলেন, রাজনীতিটা হচ্ছে একজন ডাক্তার হয়ে ওঠার মতো। হাসপাতালে আমি রোগীদের শরীর স্ক্যান করি এবং সেবা দেই। আবার রাজনীতির স্বাস্থ্য ঠিক করতেও আমাকে কাজ করতে হয়। আমি আমৃত্যু এই কাজটি করে যেতে চাই।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে নিজের অফিসিয়াল চালক ছাড়া নিজেই গাড়ি নিয়ে থিম্পুতে ঘুড়ে বেড়ান তিনি। বলেন, ছুটির দিনগুলোতে হাসপাতালে আসার চেষ্টা থাকে সবসময়ই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর