ইরানের ইস্পাহানকেই কেন টার্গেট করে হামলা চালালো ইসরায়েল

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-04-19 21:24:47

ইসরাইলি ভূখণ্ডে তেহরানের নজিরবিহীন হামলার ছয় দিনের মাথায় একটি ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র ইরানে আঘাত করেছে বলে দাবি করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। মার্কিন কর্মকর্তারা বিবিসি’র যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী সিবিএস নিউজকে জানিয়েছে, একটি ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র ইরানে আঘাত হেনছে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকালে ইরানের কেন্দ্রীয় শহর ইস্ফাহানের চারপাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে ইরানের গণমাধ্যমে এসেছে।

ইরানের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করার মাধ্যমে তিনটি ড্রোনকে ধ্বংস করা হয়েছে।

ইরানি গণমাধ্যম এবং দেশটির কর্মকর্তারা ইস্ফাহান এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের তাবরিজ শহরে হামলার খবরটিকে হালকাভাবেই উপস্থাপন করছেন।

ইরানিয়ান স্পেস অ্যাজেন্সি একজন কর্মকর্তা হোসেইন দালিরিয়ানের দাবি, সীমান্তের বাইরে থেকে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি।

এদিকে মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, একটি ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র ইরানে আঘাত হেনেছে।


বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে শুক্রবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে দেশটির মধ্যাঞ্চলের নগরী ইস্পাহানের বিমানঘাঁটির কাছে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করার কথা জানানো হয়েছে।

তবে ইরানের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ইরানে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়নি। ইরানের আকাশ সুরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার কারণে ইস্পাহান বিমানঘাঁটির কাছে বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া গেছে।

ইরানের বার্তা সংস্থা ফারস বলেছে, মধ্যাঞ্চলের শহর ইস্পাহানের একটি সেনাঘাঁটির কাছাকাছি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছে, এটা কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নয়। ইরানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার কারণেই এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, মধ্যরাতের একটু পরেই ‘ইস্পাহানের আকাশে তিনটি ড্রোন দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে আকাশ নিরাপত্তাব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়। আর এর ফলে ড্রোনগুলো আকাশেই ধ্বংস করে ফেলা হয়।


যে কারণে ইস্পাহানই ইসরায়েলের লক্ষবস্তু-


বিবিসিকে একজন পারমাণবিক এবং রাসায়নিক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, সম্ভাব্য লক্ষ্য হিসেবে ইরানের দ্বিতীয় শহর ইস্ফাহানকে বেছে নেয়া ‘অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ’।

যুক্তরাজ্য ও ন্যাটোর পারমাণবিক বাহিনীর সাবেক কমান্ডার হামিশ ডি ব্রেটন গর্ডন উল্লেখ করেছেন, শহরটির আশপাশে অনেকগুলো সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। সেগুলোরই একটি ছিল লক্ষ্যবস্তু। যেখানে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে বলে ধারণা করা হয় সেই স্থানটির খুব কাছেই আলোচিত আক্রমণটি করা হয়েছে। সুতরাং এটা তাদের জন্য একটা ঝাঁকুনি,’ বিবিসিকে বলেন তিনি।


এছাড়াও, ইস্পাহান ইরানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ও প্রধান পর্যটন নগরী। সমৃদ্ধ মুসলিম ঐতিহ্য ও নান্দনিক স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত এটি। একসময় শহরটিকে ‘ইস্পাহান নিসফে জানান’ বলা হতো, যার অর্থ ইস্পাহান পৃথিবীর অর্ধেক। ছন্দোবদ্ধ এই প্রবাদ আসলেই সত্য। এটি পৃথিবীর অন্যতম বড় শহর ছিল এবং দুবার ইরানের রাজধানী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল। মুসলিম ঐতিহ্যের শহর ইস্পাহানকে ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। ব্রিটিশ পর্যটক রবার্ট বায়রন এথেন্স বা রোমের মতো বিরল স্থানগুলোর সঙ্গে ইস্পাহানকে তুলনা করেছেন। ইস্পাহানের ইতিহাস ও চিত্তাকর্ষক স্থাপত্যের কারণে শহরটিকে ‘ইরানের লুকানো রত্ন’ও বলা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর