পূর্ব জেরুজালেম অঞ্চল ও ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের আবাসন নির্মাণের হার রেকর্ড হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন। এর ফলে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা অনেকটাই হুমকির মুখে পড়েছে।
শুক্রবার (৮ মার্চ) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও বার্তাসংস্থা রয়টার্সের পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের হালনাগাদ পরিস্থিতি সম্পর্কিত জেনেভায় পেশ করা একটি প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবরে পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় নতুন ২৪ হাজার ৩০০টি হাউজিং ইউনিট বা অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা।
প্রতিবেদন জমা পড়ার পর এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভোলকার তুর্ক বলেন, ‘এই নতুন আবাসন প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো দখলকৃত এলাকাগুলো থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে ইসরালের জনসংখ্যার বিস্তার ঘটানো যা নিশ্চিতভাবেই এটি একটি যুদ্ধাপরাধ।’
মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম তীরে বসবাসরত ফিলিস্তিনি এবং ইহুদি বসতকারীদের মধ্যে দাঙ্গা-সংঘাত বিরল কোনো ঘটনা না হলেও গত ৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিম তীরে দাঙ্গা-হাঙ্গামার হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। দু’পক্ষের সংঘাতে গত ৫ মাসে ৪ শতাধিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
ভোলকার তুর্ক আরও বলেন, ‘গত ৫ মাসে পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি এবং ইহুদি বসতকারীদের মধ্যকার সংঘাত এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং এটি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যাবতীয় সম্ভাবনা শেষ হয়ে যেতে বেশি দিন লাগবে না।’
এ ইস্যুতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। আইডিএফ বলেছে, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা থেকে ‘শিক্ষা নিয়ে’ গত কয়েক মাস ধরে পশ্চিম তীরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে আইডিএফ এবং ইসরায়েলি পুলিশ। সেই অভিযানে নিহত হয়েছেন এই চার শতাধিক ফিলিস্তিনি। নিহত ফিলিস্তিনিদের ‘জঙ্গি’ বলেও দাবি করেছে আইডিএফ।
এদিকে প্রতিবেদনটি জমা পড়ার পর জেনেভায় জাতিসংঘের ইসরায়েলি মিশনের সদস্যরা পাল্টা এক বিবৃতিতে মানবাধিকার কমিশনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ উল্লেখ করে বলেছে, গত ৫ মাসে ফিলিস্তিনিরদের হামলায় পশ্চিম তীরে ৩৬ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। কমিশনের প্রতিবেদনে তার কোনো উল্লেখ নেই বলে উল্লেখ করেন তারা।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের পর এই প্রথম পশ্চিম তীরে এত বেশি সংখ্যক অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইসরায়েলের সরকার। ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে এবং গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে।