মহাকাশে পথে নাসা থেকে স্নাতক প্রথম আরব নারী

মধ্যপ্রাচ্য, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2024-03-07 15:42:48

সংযুক্ত আরব আমিরাতের নারী মহাকাশচারী নোরা আলমাতরোশি জীবনের বেশিরভাগ সময় তার পূর্বপুরুষদের মতো আকাশে তারার দিকে তাকিয়ে এবং চাঁদে পা রাখার স্বপ্ন দেখে কাটিয়েছেন।

চলতি সপ্তাহে তিনি নাসার প্রশিক্ষণ প্রোগাম থেকে স্নাতক হওয়া প্রথম আরব নারী নভোচারী হিসেবে মহাকাশ যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

৩০ বছর বয়সি আলমাতরোশি মহাকাশ সম্পর্কে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠের কথা মনে রেখেছেন, যেখানে তার শিক্ষক চন্দ্রপৃষ্ঠে ভ্রমণের অনুকরণ করেছিলেন। সেই সময় শিল্প-কারুশিল্পের স্পেসস্যুট এবং রকেটের জন্য একটি তাঁবু তৈরি করা হয়েছিল।

আলমাতরোশি এএফপিকে বলেন, ‘আমরা তাঁবু থেকে বেরিয়ে এলাম এবং আমরা দেখলাম যে শিক্ষক আমাদের শ্রেণীকক্ষের আলো নিভিয়ে দিয়েছেন। তার সবকিছু ধূসর কাপড়ে ঢেকে ছিল এবং সে আমাদের বলছিল যে, আমরা চাঁদের পৃষ্ঠে রয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সেই দিনটি আমার আমার স্মতির সাথে জড়িয়ে ছিল। আমার মনে আছে, এটি ছিল আশ্চর্যজনক। আমি আসলে এটি বাস্তবে দেখতে চাই, আমি আসলে চাঁদের পৃষ্ঠে যেতে চাই। তখন থেকেই এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল।’

তখনই তিনি তার নাম এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পতাকাসহ এমব্রয়ডারি করা একটি নীল ফ্লাইট স্যুট পরিহিত অবস্থায় নিজেকে কল্পনা করেন।

আলমাতরোশি একজন যান্ত্রিক প্রকৌশলী, যিনি তেল শিল্পে কাজ করেছেন। তিনি ২০২১ সালে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার সঙ্গে একটি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে নাম লেখাতে সংযুক্ত আরব আমিরাত স্পেস এজেন্সির (ইউএইএসএ) নির্বাচিত দুজন মহাকাশচারী প্রাার্থীদের একজন ছিলেন।

এখন অনুশীলন স্পেসওয়াকসহ দুই বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর তিনি এবং তার সহকর্মী মোহাম্মদ আলমুল্লা এবং তাদের প্রশিক্ষণ ক্লাসে থাকা অন্য ১০ জন সম্পূর্ণ যোগ্য মহাকাশচারী নির্বাচিত হন।

‘দ্য ফ্লাইস’ নামে পরিচিত এই দলটি এখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আএসএস) মিশনের জন্য যোগ্য এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তারা আর্টেমিস চন্দ্র মিশন এমনকি মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার জন্যও প্রস্তুত।

আলমাতরোশি বলেন, ‘আমি মানবতাকে আগের চেয়ে আরও এগিয়ে নিতে চাই। আমি চাই মানুষ চাঁদে ফিরে আসুক এবং আমি চাই মানুষ চাঁদের বাইরে দূর মহাকাশের দিকে আরও এগিয়ে যাক এবং আমি সেই যাত্রার অংশ হতে চাই।’

উল্লেখ্য, আলমাতরুশি নাসার প্রথম আরব নারী স্নাতক ডিগ্রিধারী হলেও একাধিক আরব নারী এরই মধ্যে ব্যক্তি খাতে পরিচালিত মহাকাশযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সৌদি আরবের বায়োমেডিকেল গবেষক রিয়ানাহ বার্নাবি। এক্সিওম স্পেস প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গত বছর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যান তিনি। আগের বছর ২০২২ সালে ব্লু অরিজিনের মহাকাশ অভিযানে অংশ নেন মিসরীয় বংশোদ্ভূত লেবাননি প্রকৌশলী সারা সাবরি।

আলমাতরোশি যিনি তার মুসলিম বিশ্বাসের অংশ হিসাবে হিজাব পরেন, তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে নাসা তাকে এজেন্সির আইকনিক সাদা স্পেস স্যুট এবং হেলমেট দেওয়ার সময় তার চুল ঢেকে রাখার অনুমতি দেওয়ার জন্য একটি কৌশল তৈরি করেছে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে এক্সট্রাভেহিকুলার মোবিলিটি ইউনিট (ইএমইউ) নামে পরিচিত।

তিনি বলেন, ‘ইএমইউতে প্রবেশ করলে একটি ক্যাপ (মাইক্রোফোন এবং স্পীকার লাগানো) পরানো হয়, যা চুল ঢেকে রাখে।’

কাস্টমাইজড স্যুটের সঙ্গে আলমাতরোশি তার সহকর্মী নভোচারীদের সঙ্গে মহাকাশে পা রাখার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। নাসা আর্টেমিস ৩ মিশনের জন্য ২০২৬ সালে চাঁদের পৃষ্ঠে মানুষের অবতরণের পরিকল্পনা করেছে।

তিনি এএফপিকে বলেন ‘আমি মনে করি একজন মহাকাশচারী হওয়া কঠিন, আপনার ধর্ম বা আপনার পটভূমি যাই হোক না কেন।’

আলমাতরোশি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে, একজন মুসলিম হওয়া এটাকে কঠিন করেছে। কিন্তু, একজন মুসলিম হওয়া আমাকে আমার পূর্বপুরুষদের অবদান সম্পর্কে সচেতন করেছে। কারণ, আমার আগে আসা মুসলিম পন্ডিত এবং বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করছিলেন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর