তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জ্বালামুখে পড়ছে বিশ্ব : ন্যাটোর ভবিষ্যদ্বাণী

ইউরোপ, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2024-01-24 00:05:13

গাজায় ইসরাইলের হামলা, ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠীর ওপর মার্কিন নেতৃত্বাধীন ১০ দেশীয় জোট, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ-এসবের মধ্যেই আবার নতুন আরেক যুদ্ধের পূর্বাভাস দিচ্ছে ৩১ রাষ্ট্রের সামরিক জোট দ্য নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অ্যালায়েন্স (ন্যাটো)।

পলিটিকো জানিয়েছে ন্যাটো দাবি করেছে, আগামী ২ দশকের মধ্যে ইউরোপ তছনছ করে ফেলবে রাশিয়া। সম্প্রতি এমনই এক ভয়ংকর ভবিষ্যদ্বাণী করেছে ন্যাটো। সব মিলিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জ্বালামুখে পড়ছে বিশ্ব।

রাশিয়াকে ইঙ্গিত করে সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ন্যাটোর সামরিক কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডমিরাল রব বাউয়ার বলেছেন, ‘আগামী ২০ বছরে একটি বৃহৎ আকারের সশস্ত্র সংঘাতের মুখোমুখি হবে বিশ্ব।’

ন্যাটোর ঊর্ধ্বতন পরামর্শদাতা জেনারেল হজেস সতর্ক করে বলেছেন, ‘সারা ইউরোপে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে শত শত দূরপাল্লার নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে রাশিয়া দ্বিধা করবে না।’

হজেস আরও বলেছেন, ‘রাশিয়া ইতোমধ্যেই বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। যদি রাশিয়া ন্যাটো আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তবে তারা ইউরোপের সব প্রধান সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর এবং পরিবহণকেন্দ্রগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও দূরপাল্লার ড্রোন হামলা শুরু করবে।’

সেই সঙ্গে প্রধান সামরিক সদর দপ্তর ও বিমানঘাঁটিতেও হামলা চালাবে। এটি করতে রাশিয়া কখনো লজ্জা পাবে না। এ কারণেই ইউরোপজুড়ে পর্যাপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন হজেস।

ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি কোম্পানির বিশ্লেষক স্যাম ক্র্যানি-ইভান্স একমত হয়ে বলেছেন, ‘ন্যাটো দেশগুলোকে অবশ্যই বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।’

নতুন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ন্যাটোপন্থি পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকরাও। তারা বলেছেন, পরবর্তী বড় আন্তর্জাতিক সংঘাত একটি বিশাল সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে শুরু হতে পারে।

জেনারেল হজেস বলেছেন, ‘যদি রাশিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা করে তাহলে আমাদের অবকাঠামোতে সাইবার বিঘ্ন ঘটাতে পদক্ষেপ নেবে। সমুদ্রবন্দরের সরবরাহ চেইন ব্যাহত করতেও সাইবার হামলা চালাতে পারে। সমুদ্রের তলদেশে অত্যাবশ্যক ফাইবার অপটিক তারগুলো কাটার জন্য সাবমেরিন বা সাবমারসিবল মোতায়েন করতে পারে। ভবিষ্যতে সংঘর্ষের বৃদ্ধির মধ্যে অভূতপূর্ব ক্ষয়ক্ষতি এবং পশ্চিমা অবকাঠামো এবং যোগাযোগের বিঘ্ন ঘটাতে পারে।’

ক্র্যানি-ইভান্স বলেছেন, ‘এমনকি মহাকাশেও এক ধরনের সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়া তার প্রভাব টিকিয়ে রাখতে দেশগুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। সাইবার যুদ্ধে ন্যাটোর সামরিক কার্যকারিতাকে অস্থিতিশীল করার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি সম্ভবত একটি নৃশংস ক্ষেপণাস্ত্র হামলার রূপ নেবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কেভিন রায়ান বলেছেন, ‘রাশিয়া এবং ন্যাটোর মধ্যে যেকোনও যুদ্ধ শুধু ধ্বংস ও মৃত্যুর বিষয়টি চিহ্নিত করবে। ন্যাটোর পূর্বপ্রান্তে স্থল আক্রমণ এবং বিমান হামলা শুরু করার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমের পুতিন একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশনের জন্য তার নৌবাহিনীকে মোতায়েন করবেন। উত্তর আর্কটিক (পৃথিবীর সর্ব উত্তরের অঞ্চল) রুটের নিয়ন্ত্রণ নেবেন।’

হজেস আরও বলেন, ‘যদি তারা আমাদের তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, তাহলে তা হবে ধ্বংসাত্মক।’

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উত্তর মেরুর বরফ গলে যাওয়ায় নতুন শিপিং রুটগুলো আরও অ্যাক্সেসযোগ্য হয়ে উঠছে। রাশিয়া সেই উত্তর রুটেও আধিপত্য বিস্তার করতে চাইবে। এমনকি তাদের দূরপাল্লার অস্ত্রের সাহায্যে, তারা আর্কটিক থেকে উত্তর আটলান্টিকের ভেতরে এবং বাইরে যা যায় তা আয়ত্ত করতে সক্ষম হবে।

হজেসের দাবি, রাশিয়া ইতোমধ্যেই উত্তর সাগর রুটের (এনএসআর) অধিকাংশের ওপর মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের দাবি করেছে। আর্কটিক শিপিং পাথ সবচেয়ে অ্যাক্সেসযোগ্য যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য একটি নতুন পথ হয়ে উঠতে পারে।

এদিকে, পশ্চিমের সঙ্গে উত্তাল সম্পর্কের মধ্যে, এনএসআর পুতিনকে তার প্রাকৃতিক সম্পদ এবং অন্যান্য রপ্তানি চীন, ভারত ও প্রাচ্যের অন্যান্য ক্রেতাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের হস্তক্ষেপ ছাড়াই পাঠানোর একটি উপায় প্রস্তাব করেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর