কাশ্মীরে সেই তুষারঢাকা পাহাড়ের দেখা নেই, হতাশ পর্যটক

ভারত, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-01-16 15:13:34

তীব্র শীতে কাঁপছে রাজধানী নয়াদিল্লী। অন্য সময়ের চেয়েও তাপমাত্রা কম দিল্লীতে। কিন্তু ভূস্বর্গ কাশ্মীরে তার বিপরীত দৃশ্য। এই সময়ে বরফে আচ্ছাদিত থাকার কথা রাজকুমারি কাশ্মীরকে। কিন্তু জানুয়ারির অর্ধেক সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও কাশ্মীরে নেই বরফের দেখা। পর্যটকদের সঙ্গে যেন একরকম ছলই করছে চিরসুন্দরী কাশ্মীর। কাশ্মীরের সেই তুষারঢাকা পাহাড়, গাছপালা, রাস্তাঘাটের চিরায়িত ছবি চোখের মণিকোঠায় আঁকা থাকলেও ভেসে উঠছে না কোথাও। এই রুক্ষ কাশ্মীরে মোটেও অভ্যস্ত নয় কাশ্মীরপ্রেমীরা।

ছবি: কাশ্মীরের সেই তুষারঢাকা পাহাড়, গাছপালা, রাস্তাঘাট

কাশ্মীরের কোথাও সেই বরফ নেই, নেই শ্বেতশুভ্র পাহাড়! তুষারপাত হলেও তা খুবই সামান্য। এই মৌসুমে জম্মু-কাশ্মীরের বেশির ভাগ অঞ্চলে তাপমাত্রা যেখানে হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায়, এ বার কিন্তু তার বিপরীত ছবি ধরা পড়ছে সেখানে। ভূস্বর্গ কাশ্মীর হতাশ করছে পর্যটকদের। 

জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে রোববার (১৪ জানুয়ারি) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কার্গিলে যখন এই সময়ে চারদিক শুধু বরফের পুরু স্তরে ঢেকে থাকে, সেখানেও কোনো বরফ দেখা যাচ্ছে না। রোববার কার্গিলের দ্রাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা নয়াদিল্লীর চেয়েও বেশি। ফলে জম্মু-কাশ্মীরের যে আকর্ষণ, এবার আর তা অনুভব করতে পারছেনা পর্যটকরা।

ছবি: চিরায়িত কাশ্মীর

কাশ্মীরের এমন প্রাকৃতিক বদল দেখে স্তম্ভিত হচ্ছেন আবহাওয়াবিদরাও। পরিবেশের ভারসাম্য পরিবর্তন এবং জরবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তারা। শ্রীনগরের আবহাওয়া দফতরের কর্মকর্তা মুখতার আহমেদ জানিয়েছেন, ‘যা পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, তাতে আগামী গ্রীষ্মের পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। কারণ পাহাড়ে বরফ না জমলে হিমবাহ সৃষ্ট নদীগুলোতে পানির সংকট তৈরি করবে।

অপর আবহাওয়া কর্মকর্তা মহেশ পালাওয়াত জানিয়েছেন, ‘যদি তুষারপাত কম হয় বা একেবারেই না হয় তাহলে হিমবাহ গলে যাওয়া অংশ ভরাট হবে না। শুধু তাই নয়, দ্রুত গতিতে গলতেও শুরু করবে হিমবাহগুলো। এতে কাশ্মীরের ভৌগোলিক পরিবেশের পরিবর্তন ঘটার আশঙ্কা আরও বেড়ে যাবে।’

ছবি: অক্টোবরেই তুষারপাত শুরু হওয়ার কথা ছিল কাশ্মীরে

শ্রীনগর, সোনমার্গ এবং গুলমার্গের মতো আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলোতেও বরফের দেখা মিলছে না। কাশ্মীর আবহাওয়া দফতরের কর্মকর্তা সংবাদসংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, এবারের ডিসেম্বর এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ জুড়ে একেবারে শুকনো আবহাওয়া ছিল কাশ্মীরে। আগামী দিনগুলোতেও বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনাও নেই। ফলে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আবহাওয়া পুরোপুরি শুকনো থাকবে। গত তিন-চার বছর ধরে তুষারপাতের একটি ভিন্ন ধরন দেখা যাচ্ছিল। নির্ধারিত সময়ের আগেই তুষারপাত হচ্ছিল। কিন্তু এ বার সেটাও দেখা যাচ্ছে না। নভেম্বর থেকে ‘এল নিনো’র প্রভাব চলছে। আগামী মাসেও এর প্রভাব দেখা যেতে পারে। 

তিনি আরও বলেন, ‘এল নিনো’র প্রভাবে এই এলাকায় বৃষ্টিপাত থমকে গিয়েছে। তুষারপাতের উপরও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ডিসেম্বরে অঞ্চলটিতে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি ছিল ৭৯ শতাংশ।  তাপমাত্রাও খুব একটা কমেনি তাই তুষারপাতও হয়নি।

চিরসুন্দরী কাশ্মীর তার ভক্তদের হতাশ করে দিয়ে এবার এক রুক্ষ অবয়ব ধারণ করেছে যার নেপথ্যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এল নিনো‘র ভয়ংকর প্রভাব রয়েছে। ভবিষ্যতে এর প্রভাব আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর