বিলকিস বানু ধর্ষণ মামলা, ১১ আসামিকে যেতে হবে জেলে

ভারত, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম | 2024-01-08 15:53:01

ভারতের গুজরাটে বিলকিস বানু ধর্ষণ মামলায় ধর্ষকদের মুক্তির সিদ্ধান্ত সোমবার (৮ জারুয়ারি) খারিজ করেছেন দেশটির শীর্ষ আদালত। অর্থাৎ, মুক্তি পাওয়া ওই ১১ জন আসামিকেই আবার ফেরত পাঠানো হবে জেলে। তবে মামলার শুনানি চলবে। শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি পেয়েছে বিলকিসের পরিবার।

শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পর সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বিলকিসের পরিবারের এক ঘনিষ্ঠ জানান, এই সিদ্ধান্তে তারা স্বস্তি পেয়েছেন ঠিকই, তবে এখনও জয় আসেনি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে ওই ব্যক্তি বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশে বিচার ব্যবস্থার উপর আবার আস্থা ফিরে পেলাম আমরা। বিচার ব্যবস্থা যে এখনও বেঁচে আছে, এই নির্দেশেই তা বোঝা গেল। কিন্তু একেবারেই মনে করছি না যে, আমরা জিতে গিয়েছি।’

সুপ্রিম কোর্ট সোমবার জানিয়েছেন, ‘১১ জন ধর্ষককে মুক্তির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গুজরাট সরকার, তা এখতিয়ার বহির্ভূত। বিচারপতি বিভি নাগরত্ন এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুয়ানের পর্যবেক্ষণ, জালিয়াতি করে ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।’

ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনও এখতিয়ারই ছিল না গুজরাট সরকারের। যেহেতু মামলার শুনানি মহারাষ্ট্রে হয়েছে, তাই মহারাষ্ট্র সরকারই পারে এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে।’

এই বক্তব্যেই আশঙ্কিত বিলকিসের পরিবার। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিলকিসের পরিবার-ঘনিষ্ঠ ওই ব্যক্তি বলেন, ‘অপরাধীরা আবার মুক্তির জন্য অন্য রাজ্যের সরকারের কাছে আবেদন করতে পারে। সেটা যদি আবার আদালত বিবেচনা করে! যা বুঝতে পারছি, লড়াই এখনও শেষ হয়নি। যতক্ষণ না অপরাধীরা আবার জেলে যাচ্ছে, ততক্ষণ এই লড়াই চলতেই থাকবে।’

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট ভারতের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে বিলকিসকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাট সরকার। তার আগে মুক্তির জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন ওই ধর্ষণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা। ওই আবেদনের ভিত্তিতে গুজরাট সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল আদালত।

বিজেপি শাসিত গুজরাট সরকার ১১ অপরাধীর মুক্তির পক্ষে সওয়াল করেছিল। এরপরই ১১ জনকে ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় আদালত। মুক্তির পর স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব ওই অপরাধীদের সংবর্ধনা দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

১১ জনের মুক্তির পরেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল ভারতজুড়ে। কেন মেয়াদ শেষের আগে ১১ জন ধর্ষক এবং খুনিকে ছাড়া হল, এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়।

বিতর্কের মধ্যেই গুজরাট সরকার জানায় যে, জেলে ওই ১১ জন ধর্ষক এবং খুনি ‘ভাল আচরণ’ করেছেন, সে কারণেই তাদের সাজার মেয়াদ কমানো হয়েছে।

যদিও প্রতিপক্ষ দাবি করেছে, ওই ১১ জন বিভিন্ন সময় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যখন জেলের বাইরে ছিলেন, তখনও তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল। এদের মধ্যে দুজনের বিরুদ্ধে প্যারোলে মুক্ত থাকার সময় অপরাধমূলক কার্যকলাপের অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছিল। মোট ১০ জনই বিভিন্ন সময়ে প্যারোলের নিয়মভঙ্গ করেছেন বলেও অভিযোগ ওঠে।

২০০২ সালে গোধরাকাণ্ডের পর গুজরাটে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলাকালীন ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তার তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারেন হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে।

তার পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই অপরাধকে বিরল থেকে বিরলতম আখ্যা দিয়ে মুম্বাইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।

২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি ১১ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাবাসের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। মামলা চলাকালীন এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছিল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর