দিল্লিস্থ পর্তুগাল দূতাবাসে বাংলাদেশিদের ভোগান্তি

, প্রবাসী

নাঈম হাসান, পর্তুগাল থেকে | 2023-09-01 23:29:30

ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পর্তুগিজ দূতাবাসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা। দূতাবাসে কর্মরত স্থানীয় ভারতীয় কনস্যুলারদের বাংলাদেশি সেবাগ্রাহীদের প্রতি বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগসহ নানা ধরনের হয়রানির কথাও জানা গেছে।

দূতাবাসের সেবাগ্রহীতাদের মতে, দিল্লির পর্তুগালের দূতাবাসে হয়রানির অভিযোগ পুরনো। পর্তুগালের বিভিন্ন ভিসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রাদি সত্যায়িত করা ও ভিসা সংক্রান্ত বিষয়গুলোতেও সেখানে তীব্র হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

এদিকে, পর্তুগালের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ড. জোসে লুইস কারনেইরো জানিয়েছেন খুব শিগগির সমস্যা সমাধানে দ্রুত বাংলাদেশে পর্তুগালের কনস্যুলার সার্ভিস চালু হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে পর্তুগালের স্থায়ী দূতাবাস না থাকার কারণে কনস্যুলারের বিভিন্ন সেবা পেতে ও ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশিদের দিল্লি যাতায়াত করতে হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হোন পর্তুগালে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। পরিবারের সদস্যদের পারিবারিক ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রের সত্যায়ন করতে গেলে তারা বেশ হয়রানির শিকার হচ্ছেন সেখানে।

এদিকে, দীর্ঘ সময়েও কার্যকর সমাধানের উদ্যোগ দৃশ্যমান না হওয়ায় পর্তুগালের অভিবাসন হাইকমিশনের নিবন্ধিত সংগঠন বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তো'র পক্ষ থেকে পর্তুগিজ সরকারের উচ্চপদস্থ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করা হয়েছে।

পোর্তো শহরের বিখ্যাত একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত ওই বৈঠকে দেশটির পরিবেশ মন্ত্রী জোয়াও পেদ্রো মাতোস ফার্নান্দেজ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ড. জোসে লুইস কারনেইরো, সদ্য বিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পর্তুগিজ সংসদের সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা থিয়াগো বারবোজা রিবেইরোসহ পর্তুগালের ক্ষমতাসীন দল স্যোশালিস্ট পার্টির বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তোর সভাপতি শাহ আলম কাজল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম, প্রধান উপদেষ্টা মোশাররফ হোসেনসহ আরও অনেকে।  

আলোচনায় বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে ভোগান্তির শিকার বিভিন্ন ব্যক্তির অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কারনেইরো দিল্লির পর্তুগিজ দূতাবাসে নিযুক্ত পর্তুগালের রাষ্ট্রদূতকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। প্রতিমন্ত্রী রাষ্ট্রদূতকে ঢাকায় কনস্যুলার সেবা প্রদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। মাসে একবার করে হলেও যেন ঢাকা কনস্যুলার সেবা প্রদানের ব্যবস্থাগ্রহণের কথা বলেন। পর্তুগিজ কনস্যুলেট ঢাকা খুব শিগগিরি কনস্যুলার সেবা চালু হবে বলে প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশি নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্থ করেছেন।

ড. জোসে লুইস কারনেইরো বলেন, ‘চলতি বছর পর্তুগিজ সরকারের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলো। পর্তুগাল ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন, কনস্যুলার অফিস চালুসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।’

সূত্রে জানা গেছে , বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ভিসা জমা নেওয়া ও পারিবারিক বিভিন্ন ভিসার ইন্টারভিউ ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আয়োজনের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছে। ফলে আবেদনকারীদের আর দিল্লী যেতে হবে না। সেবাটি চালু হলে গুরুত্বপূর্ণ কাগজ পত্রাদি সত্যায়ন করা ও জমা দেয়া যাবে ঢাকার পর্তুগিজ কনস্যুলেটে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই ঢাকায় কনস্যুলার সার্ভিস দেয়ার ব্যাপারে কাজ শুরু করেছি, একই সঙ্গে বিশেষ আধুনিক প্রযুক্তি স্কাইপের কিংবা অন্য কোন প্রযুক্তি মাধ্যমের ভিসা প্রদানের সাক্ষাৎকারের পরীক্ষামূলক কাজও চলমান। তবে না বললেই নয় ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেকেই নকল সনদ ও সার্টিফিকেট জমা করে থাকে যা আমাদের তদন্তেও বের হয়ে এসেছে-এটা খুবই দুঃখজনক।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানে পর্তুগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগুস্তো সান্তোস সিলভার সাথেও বৈঠক করেছিলেন বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোর্তো’র নেতৃবৃন্দ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর