ঈর্ষণীয় বর্ষাগুলো বাংলাদেশের

, প্রবাসী

মিতু কর্মকার | 2023-08-31 16:47:01

এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে এসে টিভির চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে হঠাৎ একটা চ্যানেলে হিন্দি সিনেমা ‘গুজারিশ’ চলতে থাকায় থামলাম। সিনেমাটা আগেও দেখেছি কিন্তু আজকে একটা দৃশ্যে চোখ আটকে গেল। এই সিনেমায় নায়ক হৃত্বিক রোশন একজন প্যারালাইজড ম্যাজিশিয়ানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। দৃশ্যটা এমন—রাতে বৃষ্টি হচ্ছে ছাদ থেকে পানি টপ টপ করে প্যারালাইজড ম্যাজিশিয়ানের কপালে পড়ছে। কিন্তু সে কিছুই করতে পারছে না। সবাইকে চিৎকার করে শুধু ডাকছে কিন্তু বাড়িতে থাকা দুটি মানুষের কেউ-ই ঝড় বৃষ্টির শব্দের কারণে তার সেই চিৎকার শুনতে পাচ্ছে না। সারারাতভর বৃষ্টির জলের ফোঁটা তার কপালে পড়তেই থাকল। আমাদের সবার জীবনে কখনো কখনো বোধহয় এমন অনেক বৃষ্টি আসে যেখান থেকে আমরা আমাদের মাথাটা সরাতে পারি না। টিপ টিপ বৃষ্টির জল পড়তে থাকে আর আমাদের সহ্য করে যেতেই হয়। এত গেল জীবন বোধের বৃষ্টির ভাবনা। কিন্তু এখানে সত্যিকারের বৃষ্টিটা বড্ড ভাবায়। কে বলবে এখন বর্ষকাল! খাঁ খাঁ রোদে এখানে জীবন অতীষ্ট। গুজরাট মানে বরোদা-জীবনে আমি একটা ভোগান্তি কখনো ভুলব না, তা হলো গরম।

যেখানে বাংলাদেশে বৃষ্টির জলে রাস্তায় নৌকা চলার অবস্থা আর সেখানে আমি প্রচণ্ড গরমে মাঝরাতে উঠে বসে থাকে। আর মনে মনে কল্পনা করতে থাকি এই বুঝি ঝুম বৃষ্টি শুরু হবে আর শান্তিতে পাতলা একটা কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ব। কল্পনা করতে করতে কখন আবার দু-চোখ জুড়ে গরমের ক্লান্তিতে ঘুম চলে আসে সেটাও টের পাই না। এখানে বৃষ্টি একদমই হয় না, তেমনটা না। হয় পাঁচ দশ মিনিটের বৃষ্টি। সারাদিনে দু-তিনবারও হয়। কিন্তু তেমন বৃষ্টি দেখে মনে হয় এখানকার মানুষদের যদি আমি আমার গ্রামের মাঠঘাট উপচে পড়া ঝুম বৃষ্টি দেখাতে পারতাম! বা বৃষ্টিতে টিএসসি, দোয়েল চত্বরে নিয়ে যেতে পারতাম তাহলে বৃষ্টির আসল রূপ দেখাতে পারতাম। বৃষ্টির কত যে স্মৃতি মাথায় এসে ভিড় করে।

জানি দেশে বৃষ্টিতে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এমনকি তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি, কিন্তু আমার মতো মানুষের জন্য দেশ থেকে কয়েকশো মাইল দূরে বসে বৃষ্টি কতটা আকাঙ্ক্ষার বস্তু তা যেন বোঝানো সম্ভব না। জীবনে যা থাকে না সেটাই হয়তো মুখ্য হয়ে ওঠে, বোধহয় এটাই জীবন।

প্রিয়তমেষু বাংলাদেশ

গুজরাটের বৃষ্টিতে গাছপালা খুব সুন্দর হয়ে যায়। এখানকার গাছের পাতাগুলো শুধুমাত্র বর্ষার সময়ই আমার দেশের গাছের পাতার মতো চির সবুজ হয়ে ওঠে। চোখ জুড়িয়ে যায়। বছরের বাকিটা সময় খুব মলিন লাগে, যেমনটা আসলে শুষ্ক অঞ্চলের হয়েই থাকে। বরোদা খুব পরিছন্ন শহর। এখানে ধুলাতে গাছের পাতা ধুলাময় হয় না যেমনটা আমাদের হয়। কিন্তু এত কিছু পরও যেন এই পাতাগুলোতে আমার দেশের গন্ধ নেই। মন কেমন করে ওঠে ছোট সবুজ পাতার জন্য। বর্ষা শুরু হলে আমার বেলীফুল আর দোলনচাঁপার জন্য মন কেমন করে। এখানে বেলীফুল আছে কিন্তু বেলীফুলের মালা নেই। এখানে কেউ হাতে চুলে বেলীফুলের মালা পরে ঘুরে বেড়ায় না। যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের মানুষের বৃষ্টিমাখা পোস্টগুলো দেখি তখন আমার মনে হয় টাঙ্গাইলের তাঁতের একটা শাড়ি পরে চুলে ও হাত ভরে বেলীফুলের মালা জড়িয়ে টিএসসিতে চলে যাই। কিন্তু বাস্তবতা বলে অন্য কথা। সময় তার আপন গতিতে চলে। মনে মনে শুধু বলার থাকে ঈর্ষণীয় বর্ষাগুলো বাংলাদেশেই থাকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর