মর্যাদাকর ডব্লিউজিইএস নোভা অ্যাওয়ার্ড ২০২২ পেলেন আজিজ আহমদ

, প্রবাসী

নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 02:18:55

ওয়ার্ল্ড গ্রিন এনার্জি সিম্পোজিয়াম-ডব্লিউজিইএস কাউন্সিলের নোভা অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হলেন বাংলাদেশি আমেরিকান আইটি থিংকট্যাংক ও উদ্যোক্তা আজিজ আহমদ।

বুধবার (১৩ এপ্রিল) এই অ্যাওয়ার্ড তুলে দেওয়া হয়। ডব্লিউজিইএস'র সাইটেশনে বলা হলা হয় অনুকরণীয় নেতৃত্ব, উদ্ভাবনী দক্ষতা ও সামাজিক অসমতা নিরসনে টেকসই ও শিক্ষণীয় সমাধান দিতে অসাধারণ সক্ষমতা দেখানোয় ২০২২ সালে আজিজ আহমদকে দেওয়া হচ্ছে সম্মানজনক এই আন্তর্জাতিক পুরষ্কার।

আজিজ আহমদ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইউটিসি অ্যাসোসিয়েটস, কোডার্সট্রাস্ট ও প্রবিটি কেয়ার-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একাধারে একজন তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভাবক, গবেষক, শিক্ষক ও উদ্যোক্তা। একজন জনহিতৈষী, সমাজসেবক হিসেবেও যুক্তরাষ্ট্রে সুবিদিত এই বাংলাদেশি-আমেরিকান।

মর্যাদাকর এই আন্তর্জাতিক নোভা অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের পর প্রতিক্রিয়ায় আজিজ আহমদ বলেন, এই অ্যাওয়ার্ড পেয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি। আর বার বার মনে পড়ছে সেইসব মুখগুলো যারা আমাদের এগিয়ে দেওয়া সুবিধা নিয়ে এখন আইটি জগতে তাদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। গ্লোবাল মার্কেট থেকে আয় করছে। তাদের একেকটি হাসিমুখ আমাকে অনুপ্রাণিত করে। 

কিছু বিবেচক ও প্রত্যয়ী মানুষ বিশ্বটাকে বদলে দিতে পারেন, এমনটাই বলেছিলেন মার্গারেট মিড। এবারের নোভা পুরষ্কার হস্তান্তরের সময় এই উক্তিটিই স্মরণ করে ডব্লিউজিইএস।

আর প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সিইও ডেইজি গ্যালাগার বলেন, আমাদের এবারের সিম্পোজিয়াম ও পুরস্কার মূল প্রতিপাদ্যে রয়েছে মানুষ। যারা এবার অ্যাওয়ার্ড ভূষিত হলেন তারা তাদের কাজ দিয়ে মানুষের কাছে যেতে পেরেছেন।

আজিজ আহমদ ছাড়া নোভা অ্যাওয়ার্ড ২০২২ এ ভূষিত হয়েছে অপর দুই আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। তাদের একজন ফাদার এলবার্স জর্জ। এলডার জর্জ নামে যিনি সমধিক পরিচিত। গ্রিসের এই ক্যারিসম্যাটিক ধর্মযাজক মানবতা ও প্রকৃতির সেবায় নিয়োজিত একজন অন্যতম রোলমডেল। অপরজন হচ্ছেন কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি-সিএসআর এর পরিচালক মাইকেল জোন্স বে। টেকসই কর্পোরেট ব্যবস্থার চ্যাম্পিয়ন বলা হয় তাকে।

ডেইজি গ্যালাগার আরও বলেন, ভীষণ ভিন্নরকম এই তিনটি মানুষকে পুরষ্কৃত করতে পেরে আমরা নিজেরা গর্বিত বোধ করছি।

বাংলাদেশি আমেরিকান আজিজ আহমদ তাদেরই একজন। যিনি ১৯৮০'র দশকের শেষভাগে উচ্চশিক্ষা লাভে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে সেখানে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিজ কৃতিত্বে তিনি অর্জন করেছেন মূলধারার একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার গৌরব।

এর আগে পুরষ্কার ঘোষণার পর ডব্লিউজিইএস এর নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক জর্জ রবার্টস বলেন, আজিজ আহমদের মতো ব্যক্তিত্বকে নোভা অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করতে পেরে ডব্লিউইজিএস গর্ববোধ করছে। আজিজ আহমদ একজন প্রভাবক ও গেম চেঞ্জার, বলেন রবার্ট গ্যালাগার। 

আজিজ আহমদ তার পরিচালিত প্রতিষ্ঠান কোডার্সট্রাস্টের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া, অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে প্রযুক্তিনির্ভর কাজের সুবিধা পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এশিয়া ইউরোপ, আমেরিকার পাশাপাশি বাংলাদেশেও রয়েছে তার কার্যক্রমের বড় বিস্তৃতি। এই মানুষগুলোর জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কোডার্সট্রাস্টের মাধ্যমে তাদের দেওয়া হচ্ছে বিশ্বমানের আইটি দক্ষতা। আর তার মাধ্যমেই তারা অর্জন করতে পারছেন বিশ্ববাজার থেকে আইটি খাতে কাজের সুযোগ। 

তরুণ সমাজ, বিশেষ করে নারীরা যারা একটু সাচ্ছন্দের জীবনের সন্ধানে সংগ্রাম করে যাচ্ছে তারাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য, বলেন আজিজ আহমদ। শিক্ষার্থী-প্রশিক্ষণার্থীদের তথ্য-প্রযুক্তির কিছু সফট-স্কিল দিতে পারলেই তারা বিশ্ববাজার থেকে কাজ খুঁজে নিয়ে ঘরে বসেই আয় করতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা। আমরা তাদের কাছে প্রশিক্ষণের উপযোগী টুলসগুলো সহজলভ্য করে দিতে পারছি, দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিতে পারছি, যা হয়তো তাদের নাগালের মধ্যে ছিলো না। কিন্তু সামান্য সুযোগই তাদের করে তুলতে পারে বিশ্বমানের দক্ষ কর্মী, যার প্রমাণ আমরা আমাদের উদ্যোগসমূহের মধ্য দিয়ে পেয়েছি, বলেন এই ফিলানথ্রপিস্ট আইটি উদ্যোক্তা। কেবল বাংলাদেশেই এরই মধ্যে ৬০ হাজার প্রশিক্ষণার্থীকে আইটি দক্ষতা দিয়েছে কোডার্স ট্রাস্ট, জানান তিনি।

কেবল উদ্যোক্তাই নন, আইটি খাতে বিশ্ববরেণ্য একজন থিংকট্যাঙ্ক ও সুবক্তা হিসেবেও রয়েছে আজিজ আহমদের সুনাম। ভ্যাটিক্যান সিটিতে পোপ ফ্রান্সিসের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি সেখানে আলোচনা করেছেন ডিজিটাল যুগে সাধারণের জন্য ভালো কি হতে পারে তা নিয়ে। বেলজিয়ামে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে তিনি কথা বলেছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অর্থবহ ব্যবহার ও নীতি কর্মকাঠামো নিয়ে। গুয়াতেমালায় সেন্ট্রাল আফ্রিকান কনফারেন্সে প্রযুক্তির অগ্রসরতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলেছেন। ডেভোসে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামেও তিনি প্যানেলিস্ট হিসেবে আইটি খাতে তার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন বিশ্বের অন্যান্য থিংকট্যাংকের সঙ্গে।

পুরষ্কার নেওয়ার পাশাপাশি এই গুরুত্বপূর্ণ সিম্পোজিয়ামে মাস্টারক্লাস কিনোট স্পিকার হিসেবে আজিজ আহমদ কথা বলেন, টেকসই তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সর্বোচ্চ সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কৌশল নিয়ে।

উপস্থাপনায় তিনি জোর দেন আজিজ আহমদ বলেন, প্রযুক্তি যতটা এগিয়ে যাচ্ছে তার সাথে সাথে মানুষের এগিয়ে যাওয়াটাও সমানভাবে জরুরি। সাইবার নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, অগ্রসরতার পাশাপাশি আমরা কিছু অপরাধপ্রবণতাও দেখতে পাচ্ছি এই জগতে। সাইবার অপরাধের একটি তালিকা উপস্থাপন করে তিনি বলেন, এই অপচেষ্টাগুলো থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে।

অতীতে যে সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই ডব্লিউইজিএস নোভা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে টেকসই কর্মসূচি গ্রিনওয়ার্কসের জন্য সিটি অব ফিলাডেলফিয়া। যার পুরস্কার গ্রহণ করেন সিটি মেয়র মাইকেল নাটার। রিও ডি জেনেরিওতে টেকসই কর্মসূচির জন্য দেশ হিসেবে এই পুরষ্কার পায় ব্রাজিল, কর্পোরেট লিডারশিপের জন্য পুরস্কার পেয়েছে তিশমান, ডিওডব্লিউ, জনসন কন্ট্রোলস, উদ্ভাবনী পণ্য ও প্রযুক্তির জন্য পেয়েছে ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিন ও শিক্ষার্থীরা তাদের তৈরি স্মার্ট হাউজের জন্য এই পুরস্কার পান। সাসটেইনেবল ডিসি প্ল্যান তৈরির জন্য ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া এই পুরস্কারে ভূষিত হয়, যা গ্রহণ করেন এর মেয়র ভিনসেন্ট গ্রে। ইউনিভার্সিটি অব ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া ককাস এই পুরস্কার পায় তাদের আরবান ফুড হাবের জন্য। যা গ্রহণ করেন এর ডিন সাবিন ও'হারা। শহুরে কৃষির একটি মডেল তৈরি করেছিলো এই বিশ্ববিদ্যালয়।   

সিম্পোজিয়ামে ডব্লিউজিইএস সেইসব মানুষের সমাগম ঘটায় যারা বৈশ্বিক ও স্থানীয় পর্যায়ে শীর্ষস্থানীয় দক্ষ, নীতিনির্ধারক, ক্রেতা, উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক ও চিন্তক।

বিভিন্ন মাস্টার লেকচার, কেসস্টাডি ও ইন্টারঅ্যাকশনের মধ্য দিয়ে সবুজ জ্বালানি ও টেকসই প্রচেষ্টাসমূহের বাস্তবায়নে প্রযোজনীয় শিক্ষা ও তথ্য বিনিময় করা হয় এই সিম্পোজিয়ামে।

অন্যান্য বছরের মতো এবছরও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উচ্চমাপের বহুমূখি প্রতিভার অধিকারী বক্তাদের আমন্ত্রণ জানায় ডব্লিউজিইএস। বক্তারা তাদের উপস্থাপনায় বাস্তবভিক্তিক কেসস্টাডি, টেকসই অর্থনৈতিক সুযোগ ও সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরেন। কোভিড-১৯ অতিমারি পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা কথা বলেন নিরাপদ ভবন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ, জলবায়ূ, ক্লিন এনার্জি ও টেকসই অর্থায়ন, গ্রিড বিদ্যুতায়ন, সাইবার সিকিউরিটির সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা, পরিষ্কার পানির সুষ্ঠু সমাধান, সঠিক বিনিয়োগ, পরিবহণ ও ক্লিন এনার্জি কর্মসূচির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থাসমূহের পূর্বাভাস নিয়ে।

কর্মসূচির মূল নেতৃত্বে ছিলেন ডব্লিউইজিএস এর নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক জর্জ রবার্টস। গুরুত্বপূর্ণ উপস্থাপনার মাধ্যমে দিনভর আলোচনাকে যারা সম্মৃদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে ছিলেন, ইউএস জেনারেল সার্ভিসেস এডমিন্সট্রেশনের প্রধান সাসটেইন্যাবিলিটি অফিসার, ফেডারেল হাই পারফরম্যান্স গ্রিন বিল্ডিংস কার্যালয়ের পরিচালক কেভিন ক্যাম্পস্রোয়ার,  প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী প্রধান সাসটেইন্যাবিলিটি অফিসার এন্ড্রু নক্স,  ওয়াশিংটন এক্সিকিউটিভ ক্লাইমেট চেঞ্জ কাউন্সিলেন চেয়ারম্যান ও ক্লাইমেট উপদেষ্টা স্টেফেন অ্যাম্ব্রোস,  ইউএস এয়ারফোর্সের পরিবেশ বিষয়ক সাবেক সহকারী সেক্রেটারি ও জ্যেষ্ঠ জ্বালানি নির্বাহী, জেনারেশনস অ্যাডভাইজরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উইলিয়াম এন্ডারসন,  ইউনিভার্সিটি অব ডিস্ট্রিক্ট কলাম্বিয়ার আরবান সাসটেইন্যাবিলিটি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অনুষদের কলেজ অব এনভায়রনমেন্টর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ও প্রতিষ্ঠাতা ডিন ড. স্যাবিন ও'হারা,  ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্স এমবিডিএ'র ব্যবসা উন্নয়ন কার্যালয়ের ব্যবসা উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও ভারপ্রাপ্ত সুপারভাইজর রন উবা,  ক্যাপিটাল অ্যাকসেস অ্যান্ড গ্লোবাল মার্কেট এর সিনিয়র অ্যাডভাইজর ব্লক চেইন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিশেষজ্ঞ জন রবার্ট বাগুইডি, রুবিক্স লাইফ সায়েন্সেস এর প্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞানী ড. রেগিনাল্ড সুইফট, সাসটেইনেবল অ্যান্ড রেজিলিয়েন্ট স্ট্রাটেজিস ডব্লিউ জিআই ইনকর্পোরেটেড এর পরিচালক গ্যারি লরেন্স, ইউটিসি অ্যাসোসিয়েটস ও কোডার্সট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা আজিজ আহমদ, জিজিডব্লিউ ইনক. এর প্রতিষ্ঠাতা সিইও ডেইজি গ্যালাগার, কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট রিকভারি, কন এডিসনের পরিচালক মাইকেল জোনস-বে, ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জি ব্রুকহেভেন ন্যাশনাল ল্যাবস-এর মেরি রজার্স, সাসট্যাপ এলএলসি'র কো-ফাউন্ডার ভার্জিনিয়া গিবসন, আইএমএমআই'র প্রেসিডেন্ট সেলেস্টে উয়ান্ডার, ডিসি আরচেঞ্জেলস ইনভেস্টর গ্রুপ'র প্রেসিডেন্ট ড্যান লোয়াগ প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর