এটি জ্বীনের তৈরি মসজিদ!

, ফিচার

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 14:42:14

নড়াইল: সদর উপজেলার গোয়ালবাথান গ্রামে প্রায় চারশ বছর আগে মোগল শাসনামলে ঐতিহ্যবাহী মুন্সিবাড়ি মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। এ মসজিদটি জ্বীনের মসজিদ বলে পরিচিত। এক রাতের মধ্যে জ্বীন এই মসজিদ নির্মাণ করেছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

জানা গেছে, সদর উপজেলার গোয়ালবাথান গ্রামে মোগল শাসনামলে নির্মিত মসজিদের ছাদের উপরে চার পাশে ছোট ছোট চারটি মিনার এবং মাঝখানে একটি বড় গম্বুজ রয়েছে। ছোট ছোট ইট আর চুন সুরকির গাঁথুনির মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে এ মসজিদটি।

এলাকায় জনশ্রুতি আছে, মোগল শাসনামলে প্রায় চারশ বছর আগে একদিন এ গ্রামে এসে হঠাৎ করে বসবাস শুরু করেন মুন্সী হবৎউল্লাহ নামের এক ব্যক্তি। এর কিছুদিন পরে এক রাতে ওই স্থানে এ মসজিদ এবং এর সংলগ্ন একটি পুকুর খনন করেন তিনি। সেই থেকে ওই গ্রামে আস্তে আস্তে জনবসতি শুরু হয় এবং ওই স্থানসহ আশপাশ এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা মসজিদটিতে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে থাকেন। নড়াইলে ওই সময় অন্য কোনো মসজিদ না থাকায় জেলার বিভিন্ন এলাকার মুসলিমরা এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসতেন।

মসজিদ প্রতিষ্ঠাতা মুন্সি হবৎউল্লাহের বংশধরেরা আজও গোয়ালবাথান গ্রামে বসবাস করেন। তারাও সঠিকভাবে বলতে পারেন না কত সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এ মসজিদটি। তবে মোগল শাসনামলে এবং কমপক্ষে চারশ বছর আগে এটি তাদের পূর্ব পুরুষ মুন্সী হবৎউল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্কার না করার কারণে এক সময় প্রায় ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। নড়াইল জেলার ইতিহাস ঐতিহ্যের বাহক গোয়ালবাথান মুন্সীবাড়ি মসজিদটি রক্ষা করতে নড়াইলের সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস জেলা পরিষদের অর্থায়নে ১১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ কাজ করেন। বর্তমানে এটি আবারও সাবেক আমলের ন্যায় রূপ পেয়েছে।

স্থানীয় মুন্সী ওহিদুজ্জামান কালু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছি একরাতে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। স্থানীয়দের ধারণা একমাত্র জ্বীন ছাড়া একরাতে মসজিদ-পুকুর খনন করা সম্ভব নয়। আমরা এলাকার মানুষ এখানে নিয়মিত নামাজ আদায় করে থাকি।’

রুহল মুন্সী বলেন,‘আমরা ছোটবেলায় শুনেছি এখানে এক সময় কোনো মানুষের বসবাস ছিল না। প্রথম যখন মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল তখন এখানে জ্বীনেরা নামাজ আদায় করত। ধীরে ধীরে এ অঞ্চলে মানুষের বসবাস শুরু হয়। তবে জ্বীনেরা এলাকার কোনো মানুষের ক্ষতি করতেন না বলে শুনেছি।’

নড়াইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও মসজিদ সংলগ্ন বাড়িতে জন্মগ্রহণকারী মীর্জা নজরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে জানান, কবে কতদিন আগে ওই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে তা কেউ বলতে পারে না। তবে কথিত আছে মুন্সী হবৎউল্লাহ নামের এক ব্যক্তি কয়েকশ বছর আগে গোলবাথানে এসে বসবাস শুরু করেন। সে সময় ওই এলাকায় কোনো মানুষের বসতি ছিল না। শুধু বাগানে ভরা ছিল এলাকাটি। মুন্সি হবৎউল্লাহই ওই গ্রামের প্রথম বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তার বসবাস শুরুর কোনো এক রাতে এই মসজিদ এবং তার পাশে একটি পুকুর খনন করা হয়। এছাড়া এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে ওই মসজিদটি জ্বীনদের দিয়ে নির্মাণ কাজ করা হয় এবং ওই সময় জ্বীনরাও নামাজ আদায় করতেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর