মিউনিখ ট্র্যাজেডির ৪৭ বছর

, ফিচার

শেহজাদ আমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-31 12:08:20

‘খেলাধুলার সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই’—এমনটাই মনে করে থাকেন সাধারণ মানুষেরা। খেলাধুলার ব্যাপারটা রাজনৈতিক ও ভূখণ্ডের সীমারেখার বাইরের এক জিনিস। তাই তো দেখা যায় রাজনৈতিকভাবে বিরোধীভাবাপন্ন দেশের গুণী অ্যাথলেটদেরও ভক্ত বনে যান কোনো কোনো দেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিক। কিন্তু কিছু হীন চরিত্রের, স্বার্থবাদী মানুষের কাছে খেলাধুলাও হয়তো হয়ে ওঠে রাজনৈতিক উপকরণ। খেলোয়াড়রাও তখন হয়ে ওঠে দাবার গুটি বা স্রেফ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উপকরণ মাত্র। এরকম চিন্তাধারারই চরমপন্থার শিকার ১৯৭২-এর মিউনিখ অলিম্পিক গেমস। প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতাকামী এবং বিপথে যাওয়া কিছু লোকের কারণে গেমস চলাকালীনই ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর প্রাণ হারায় ইসরায়েলের ১১ জন অ্যাথলেট।

কী ঘটেছিল সেদিন

৩৬ বছরের বিরতি দিয়ে সেবার জার্মানিতে ফিরেছিল অলিম্পিক গেমস। এর আগে ১৯৩৬-এ জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হওয়া সবশেষ অলিম্পিক গেমসে অনেকটাই কালিমা লেপে দিয়েছিল সেসময়ে দেশটিতে ক্ষমতাসীন হিটলারের নাৎসি বাহিনীর আদব-কেতা ও কিছু কাজকর্ম। তাই স্বাভাবিকভাবে মিউনিখ অলিম্পিকে আয়োজকদের মধ্যে সেই কালো দাগ দূর করে সম্ভাব্য সকল উপায়ে সেরা এক অলিম্পিক আয়োজনের চেষ্টা ছিল। কিন্তু, মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। এবারের অলিম্পিকে পড়ল আরো বেশি কালো দাগ।

মিউনিখের অধ্যায়টা শুধু অলিম্পিক নয়, বরং পুরো মানবজাতির জন্যেই কালো ইতিহাস। প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী সংগঠন ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর’-এর উগ্রবাদীরা গেমস ভিলেজে এসে এগারজন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে ফেলে। জার্মানির অভ্যন্তর থেকে তাদের সহায়তা দেয় নব্য নাৎসি দল ‘ফ্যাকশন রেড আর্মি’। ইসরায়েলিদের ছেড়ে দিতে শর্ত ছিল ইসরায়েলের কারাগারে আটক থাকা ২৩৪ ফিলিস্তিনি এবং জার্মান কারাগারে আটক থাকা দুই নব্য নাৎসি নেতার মুক্তি। জার্মান মধ্যস্থতাকারীরা অনেকটা রাজি হয়ে গিয়েছিল ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে। কিন্তু, ইসরায়েলি সরকার আপোষ করতে চায়নি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য ছিল, সন্ত্রাসীদের দাবির কাছে হার মেনে নিলে দুনিয়ার কোথাও ইসরায়েলি নাগরিকেরা নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারবে না। তাই শেষমেশ দাবি মেনে নিতে রাজি হয়নি দুই দেশের সরকারই। বদলে শুরু করে অন্য পরিকল্পনা।

গেমস ভিলেজের ছাদে চক্কররত জার্মান পুলিশের সদস্যরা


এই ভয়াবহ ঘটনার শুরু হয়েছিল ৫ সেপ্টেম্বর। ৫ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে চারটায় শুরু হওয়া এই নাটকের পদে পদে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। হাই কমান্ড থেকে নির্দেশ পেয়ে জার্মান পুলিশ পরিকল্পনা করে অ্যামবুশের। জিম্মিকারীদের চাহিদা মতো হেলিকপ্টার জোগান দেওয়া হয়। এবং করা হয় হেলিকপ্টারে ওঠার সময় স্নাইপার দিয়ে আক্রমণের পরিকল্পনা।

গেমস ভিলেজের ছাদে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের এক সদস্য


কিন্তু নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয় জার্মান পরিকল্পনা। হেলিকপ্টারে ওঠার পথে আক্রমণের শিকার হয়ে জিম্মিকারীরা ওখানেই চারজনকে মেরে ফেলে। পালানো অসম্ভব, বুঝতে পারে জিম্মিকারীরা। গ্রেনেড বিস্ফোরণে পুরো হেলিকপ্টারই উড়িয়ে দেয়। ইসরায়েলি কাউকেই তাই জীবিত উদ্ধার করা যায় না।

মিউনিখ পুলিশের তৎকালীন প্রধান ম্যানফ্রেড শাইবা জানিয়েছিলেন, এই ব্যাপারটা মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি ছিল যথেষ্ট কম। কিন্তু তার দাবি সত্য নয় বলে অনেকের দাবি। কেননা, পুলিশ চাইলেই এই হামলা আগে থেকেই যথাযথভাবে মোকাবেলা করতে পারত। বার্লিনের ইতিহাসবেত্তা ম্যাথিয়াস ডালকে জানান, এধরনের হামলা তখন ছিল বেশ নিয়মিত ঘটনা। আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও মধ্যপ্রাচ্যে বিচ্ছিন্নতাকামীদের উৎপাত ছিল ভালোরকম। নিয়মিত বিমান হাইজ্যাকের ঘটনা তো ছিলই। হামলা সম্পর্কে আগাম আশঙ্কাও করেছিল স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। পুলিশের মনস্তত্ত্ববিদ জর্জ সিবার সম্ভাব্য ২৬টি হামলার কথা উল্লেখ করেছিলেন, যার মধ্যে ১১ নম্বরটির সাথে মিল ছিল এই হামলার। কিন্তু, পুলিশ প্রধান শাইবারকে হামলার ব্যাপারে সতর্ক করা হলে তার অভিমত ছিল, এরকম হামলার হুমকি তো আমরা ভুরিভুরি পাই। সেগুলোকে আমলে নিলে তো অলিম্পিক বন্ধ রাখতে হবে ২০ বছরের জন্য।

সেই মুহূর্তে অলিম্পিকজ্বরে আক্রান্ত মিউনিখ সামাল দিতে পারছিল না আকস্মিক এই হামলার ব্যাপারটিকে। বিভ্রান্তিকর তথ্য ও সঠিক নির্দেশনার অভাবের কারণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছিল না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কতজন ‘সন্ত্রাসী’ আছে, কতটুকু সক্ষমতা তাদের, এসব না জানার কারণে সক্রিয় হতে পারছিল না স্নাইপাররাও।

সেসময় জার্মানির অঙ্গরাজ্যগুলো নিজেরাই ছিল নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্বে। রাজ্য ও ফেডারেল সরকারের মধ্যে কারা অপারেশন চালাবে, সে নিয়েও ছিল বিভ্রান্তি। এর ওপর সন্ত্রাসীদের দখলকৃত বিল্ডিংয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করায় বাইরের দুনিয়ার সব খবরাখবরও পেয়ে যাচ্ছিল তারা। প্রথম অবস্থায় ওই এলাকার আশপাশ থেকে সাংবাদিকদেরও সরাতে ব্যর্থ হয় প্রশাসন। ফলে, স্নাইপারদের অবস্থান টের পেয়ে সতর্ক অবস্থায় থাকতে পেরেছিল ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের সদস্যরা। এজন্য বাতিল করতে হয় জার্মান পুলিশের বেশ কয়েকটি অভিযান।

একটা সময় মনে হচ্ছিল, জার্মান প্রশাসন জিম্মিদেরসহ সন্ত্রাসীদের কায়রো পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাবে রাজি। জিম্মিকারী ও জিম্মিদের বহনকারী হেলিকপ্টার দুটো আক্রমণস্থল থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ফুস্টেনফ্রেডবুক বিমানঘাঁটিতে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে আগে থেকেই ঘাপটি মেরে ছিল পুলিশ। জার্মান সেনাবাহিনীর অনেক আধুনিক সরঞ্জাম ও শক্তি থাকলেও দেশটির সংবিধান অনুযায়ী বেসামরিক বাহিনীকে সাহায্য করতে পারত না তারা। সেখানে থাকা স্নাইপারদের হাতিয়ার ও দক্ষতায়ও ছিল বেশ ঘাটতি।

বিমান ঘাঁটিতে যে বিমানটি জিম্মি ও জিম্মিকারীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল, সেখানে বিমানের ক্রুদের ছদ্মবেশে আগে থেকে মওজুদ করে রাখা হয়েছিল ১৭ জন দক্ষ পুলিশ অপারেশন কর্মকর্তাকে। বলা হয়েছিল, জিম্মিকারীরা বিমানে ওঠামাত্রই হামলা করতে। কিন্তু সর্বসম্মতিক্রমে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায় পুলিশরা।

এদিকে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুজন ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর সদস্য হেলিকপ্টার থেকে নেমে বিমান দুটো পরীক্ষা করে দেখতে যায়। সেখানে সবকিছু ফাঁকা দেখে সঙ্গীদের ব্যাপারটা জানায় তারা। ওই মুহূর্তেই অবশ্য পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালানো শুরু করে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে এই গুলি-পাল্টা গুলির বৃষ্টি। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় বেশিরভাগ ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর সদস্য, একজন পুলিশ ও কিছু অ্যাথলেট।

ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর সদস্যদের ছোঁড়া গ্রেনেডে বিধ্বস্ত হেলিকপ্টার


ইসরায়েলি অ্যাথলেটদের উদ্ধার করার জন্য যে গাড়িগুলোর সেখানে চলে আসার কথা ছিল, সেগুলো সেখানে আসতে পারেনি সময়মতো। আটকে গিয়েছিল যানজটে। যতক্ষণে ওই গাড়িগুলো এসে পৌঁছায়, ততক্ষণে সন্ত্রাসীরা জিম্মিদের রাখা হেলিকপ্টারটি লক্ষ্য করে ছুড়ে মারে গ্রেনেড। এতে গুঁড়িয়ে যায় হেলিকপ্টার এবং মারা যায় সব অ্যাথলেট।

এই অপারেশনে বেঁচে যায় তিনজন ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর সদস্য। পরে জার্মান বিমান লুফথানসা হাইজ্যাক করার ঘটনায় পণ হিসেবে তাদেরকে মুক্ত করে নেয় তাদেরই উগ্রবাদী সহযোগীরা।

কারা এই ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর?

প্যালেস্টাইন বা ফিলিস্তিনভিত্তিক এক আধা-সামরিক সংগঠন এই ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর। ১৯৭০-এ উৎপত্তি হওয়া এই সংগঠনটি আরবিতে পরিচিত ‘মুয়াজ্জামাত আইয়ুল আল-আসওয়াদ’ নামে। তারা এখন নিষ্ক্রিয়। তবে, বিশ্বজুড়ে খ্যাতি বা কুখ্যাতি পেয়েছিল জর্ডানের প্রধানমন্ত্রী ওয়াসফি তালকে হত্যা এবং ১৯৭২-এর মিউনিখ অলিম্পিকের এই হত্যাকাণ্ডের কারণে। তাদের এই ভয়ানক হামলার পরই নড়েচড়ে বসে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ; গঠন করতে থাকে বিশেষ ও স্থায়ী কাউন্টার-টেরোরিজম বাহিনী।

এই সংগঠনের নামটি নেওয়া হয়েছে ১৯৭০-এর সেপ্টেম্বরের সংঘর্ষ থেকে। তখন ফেদায়েনদের হাত থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য দেশে সামরিক আইন জারি করেন জর্ডানের রাজা হোসেন। এই কারণে জর্ডান থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে বহিষ্কার করা হয়। মৃত্যু হয় তাদের অনেকের। প্যালেস্টাইনি ফাতাহ আন্দোলনের ছোট একটি সেল হিসেবে যাত্রা শুরু করে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর, যারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল বাদশাহ হোসেন ও জর্ডানের সামরিক বাহিনীর ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে।

ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের বেশিরভাগ সদস্য ছিল ফাতাহ আন্দোলনের কর্মী


প্রাথমিকভাবে এর বেশিরভাগ সদস্যই ছিল ফাতাহ আন্দোলনের কর্মী। মিউনিখ হামলার আগে ১৯৭২ সালের ৮ মে তারা হাইজ্যাক করেছিল একটি বেলজিয়ান বিমান। পরে, ১৯৭৩ সালে সুদানের খার্তুমে সৌদি দূতাবাসেও হামলা চালায় তারা। একই বছর নিউ ইয়র্কে বোমা হামলার পরিকল্পনাও করেছিল।

ইসরায়েলের পাল্টা আঘাত

এগারজন অ্যাথলেটের মৃত্যু ও তিনজন ‘সন্ত্রাসী’র মুফতে মুক্তি ক্ষুব্ধ করে তোলে ইসরায়েলের জনগণ ও সরকারকে। মিউনিখ হামলার দুদিন পরেই প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-এর দশটি ঘাঁটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় ইসরাইল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, মিউনিখ ম্যাসাকারে জড়িতদের যারা সাহায্য করেছে বা তাদের সাথে সংযুক্ত আছে, তাদের সবাইকে এমন শিক্ষা দেওয়া, যাতে করে কেউই ইসরায়েলিদের হত্যা করার সাহস না পায় ভবিষ্যতে। এই উদ্দেশ্যে গঠন করা হয় একটি কমিটি। সেই কমিটির কাজ ছিল গুপ্তহত্যার জন্য বেছে বেছে শিকারদের তালিকা তৈরি করা। ২০-২৫ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তালিকা তৈরির পর মোসাদ বাহিনীকে গুপ্তহত্যার মিশন শুরু করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। জন্ম নেয় ‘অপারেশন র‌্যাথ অব গড’ বা ‘অপারেশন ঈশ্বরের ক্রোধ’-এর।

এই অপারেশনের প্রথম গণহত্যাটি সংঘটিত হয় ১৯৭২ সালের ১৬ অক্টোবর। শিকার ফিলিস্তিনি ওয়ারিল রোমে। রাতের খাবার খেয়ে ফেরার পথে তাকে হত্যা করে চলে যায় আততায়ীরা। ওয়ারিল ছিল সেই সময়ে পিএলও’র একজন সক্রিয় কর্মী।

দ্বিতীয় শিকার ছিল মাহমুদ হামশারি নামে এক পিএলও কর্মী। হোটেল রুমে পেতে রাখা বিস্ফোরণে মারা যায় সে, যার পেছনে ছিল মোসাদের লোকেরাই।

এরপর এই ধারা চলতেই থাকে। ফিলিস্তিনি অনেক নেতা, পিএলও কর্মী ও ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর নেতাদের হত্যা করা হয় সত্তর ও আশির দশকজুড়ে।

বিশ্বনেতাদের ক্ষমতার লোভ আর কপটতার ফাঁদে পড়ে নিরীহ অ্যাথলেটদের খেলতে এসে জীবন দিয়ে দেওয়ার কাহিনী নিতান্তই মর্মান্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। মিউনিখ অলিম্পিকে হয়তো ঘটেছিল অনেক অবিস্মরণীয় ক্রীড়ানৈপূণ্য। মার্ক স্পিটজের রেকর্ড (২০০৮ অলিম্পিক পর্যন্ত) ৭টি সোনা জেতার মতো ঘটনাও রয়েছে। তবুও মিউনিখ অলিম্পিক মনে থাকবে ওই এগারজনের জন্যেই। গুগল সার্চে মিউনিখ লেখার সাথে সাথে আসা ‘ম্যাসাকার’ শব্দটি অলিম্পিকের ‘ভ্রাতৃত্ববোধ’ স্লোগানের ওপর আবহমান কাল ধরেই তাই চপেটাঘাত করতেই থাকবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর