ট্রুডোকে মেলানিয়ার চুমু : বিশ্বজুড়ে আলোড়ন শরীরী ভাষার বিশ্লেষণ

, ফিচার

ফিচার ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-30 08:53:21

ফ্রান্সের বিয়ারিটজে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলন জি-সেভেন। তবে, সম্মেলনের বিষয়বস্তু বা বিশ্বনেতাদের সিদ্ধান্তের চেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফাস্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের ‘চুমু-কাহিনী! ছবিতে দেখা গেছে, স্বামীর হাত ধরা অবস্থায় মার্কিন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে চুমু খাচ্ছেন। ওই সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প চোখ নিচু করে রেখেছেন। চেহারাও বেশ বিমর্ষ। এই বিষয়টিই আলোড়ন তুলেছে বিশ্বজুড়ে, ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, মেলানিয়া-ট্রুডোর চুমুর ছবিটি ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। টুইটারে এটি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনাও। ছবিটি নিয়ে একেকজন নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, ছবিতে ট্রলও করা হচ্ছে ট্রাম্পের বিমর্ষ চেহারা নিয়ে।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মোহনীয় ভঙ্গিতে ট্রুডোকে চুমু খাচ্ছেন বা খেতে যাচ্ছেন মেলানিয়া। ওই মুহূর্তে মার্কিন ফার্স্টলেডির ভঙ্গিতে অনেকেই ট্রুডোর প্রতি তার মুগ্ধতা খুঁজে পেয়েছেন।

এ নিয়ে এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, জাস্টিন ট্রুডোকে দেখে মনে হচ্ছে জি-৭ সম্মেলনে কেবল মেলানিয়াকে খুঁজে পেয়েছেন। এর সঙ্গে তিনি ‘হ্যাসট্যাগ মেলানিয়ালাভসট্রুডো’ যোগ করে দিয়েছেন।

আরেকজন লিখেছেন, ‘মেলানিয়া যখন স্বামীকে পিছনে রেখে ট্রুডোকে চুমু খাচ্ছেন, তখন সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে।’

লোনি লাভ নামের এক কমেডিয়ান লিখেছেন, ‘সব ধরনের ঝুঁকি নিতে এক পায়ে খাঁড়া মেলানিয়া।’

আরেকজন লিখেছেন, ‘মেলানিয়াকে দোষ দেওয়া যায় না! ট্রুডোর আবেদনই এমন।’

ডিয়ান ওবায়দাল্লাহ নামে আরেকজনের আইডি থেকে লেখা হয়েছে, ছবি দেখে মনে হচ্ছে মেলানিয়াও কানাডায় পালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বিমানের কথা ভাবছেন।

অন্য এক টুইটার ব্যবহারকারী লিখেছেন, ট্রুডোর ব্যক্তিত্বই এমন; পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির হাত ধরেও তাকে চুমু খেতে মন চায়!

বিশ্বনেতা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের একসাথে পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছিল ফটোগ্রাফারদের ক্যামেরাগুলো। সামিটের ইতি টানতে আয়োজিত এই ‘ফ্যামিলি ফটো’ সেশনে ট্রুডোর প্রতি মার্কিন ফার্স্ট লেডির এই ‘হৃদ্যতাপূর্ণ উষ্ণতা’ যেন অত্যন্ত বিশেষ একটি মুহূর্ত। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এমন কূটনৈতিক আয়োজনে এ ধরনের ছবি যে একটা ফ্রেমবন্দি হবে, তা কেউ ধারণাও করেননি। দুজনের উষ্ণতাপূর্ণ চাহনি আর আচরণ যেন আরো অনেক কিছুই প্রকাশ করে।

মেলানিয়া আর ট্রুডোর এই ভঙ্গিমা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে তাদের শরীরী ভাষা। যেমনটা তাদের আচরণের ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করেছেন বিখ্যাত শরীরী ভাষা বিশেষজ্ঞ প্যাটি উড। আসুন দেখা যাক কী ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি—

মার্কিন শারীরী ভাষা বিশেষজ্ঞ প্যাটি উড


হাত ধরে থাকা: ট্রুডো আর মেলানিয়ার মুখের দিকেই বেশিরভাগ মানুষ তাকিয়ে থাকলেও নিচে কিন্তু মেলানিয়া ঠিকই ধরে রেখেছেন স্বামীর হাত। এটা দুজনের মধ্যকার আবেগপূর্ণ ভালোবাসা প্রকাশ করে। স্ত্রীর হাতের কয়েকটি আঙ্গুল ট্রাম্প এমনভাবে ধরে রয়েছেন যেন তিনি স্ত্রীর আঙুলগুলোকে ওপরের দিকে টানছেন। ট্রাম্প তার বুড়ো আঙুল দিয়ে ধরেছেন মেলানিয়ার হাত। কিন্তু মেলানিয়ার বুড়ো আঙুল ট্রাম্পের হাত জড়িয়ে নেই। কাজেই এখানে দুজন হাত ধরে আছেন দেখা গেলেও আসলে কিভাবে ধরে আছেন তা বুঝতে হবে। আর এ ধরার প্রক্রিয়াটি সময়ের সাথে বদলেছে। আরো দেখতে হবে, অন্যান্য জুটিদের হাত ধরা আর তাদেরটা ধরার মধ্যে পার্থক্যটা কী।

ট্রাম্পের সঙ্গে মেলানিয়ার অবস্থান: জুটি হিসেবে তাদের অবস্থানটাও বিবেচ্য। ট্রাম্পের সাথে মেলানিয়ার শারীরিক সংস্পর্শ নেই। যদিও দুজনের হাত স্পর্শ করে রয়েছে। দুজনের পুরো হাতের অবস্থান দেখে বোঝা যায়, ট্রাম্পের হাত মূলত মেলানিয়ার হাতের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে।

ট্রুডো এবং মেলানিয়ার অবস্থান: ট্রুডো ও মেলানিয়ার দূরত্ব ৮ ইঞ্চির মতো হবে। কাজেই তারা খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছেন। এই দূরত্বের মধ্যে অন্তরঙ্গতা তৈরি হতে পারে। ১২ থেকে ১৪ ইঞ্চি দূরত্ব থাকলেই সৃষ্টি হতে পারে অন্তরঙ্গতা। মেলানিয়া ট্রুডোকে চুমো না খেয়ে সরে যেতে চাইছেন না। সাধারণত এ ধরনের অভ্যর্থনামূলক আচরণের ক্ষেত্রে নারীদের নিম্নাংশ এবং বুক কিছুটা দূরে থাকে। এই ভঙ্গিকে বলা হয় ‘সোশাল আর্ক’। এ জাতীয় সামাজিক অভ্যর্থনার সময় মূলত দেহের যৌন স্পর্শকাতর অংশগুলোকে দূরে রাখতে হয়।

মেলানিয়ার মোহনীয় দৃষ্টি: মেলানিয়া কিভাবে ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে আছেন, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইউরোপিয়ান নারী-পুরুষরা পারস্পরিক অভিবাদন জানাতে পরস্পরকে চুমু খেতে পারে। এ সময় সাধারণত মেয়েদের দু চোখ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ছবিতে মেলানিয়ার চোখ বন্ধ নেই। এমনকি ট্রুডোর চোখের পাতার অবস্থান দেখেও বোঝা যায় তাদের চোখ বন্ধ নেই। তবে, দৃষ্টির ভঙ্গিটা কিন্তু বেশ মোহনীয় মেলানিয়ার। আসলে মেলানিয়া সুখানুভূতি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। তিনি ট্রুডোকে চুমু খেতে আন্তরিকভাবে ইচ্ছুক। কাজটি করতে মেলানিয়ার মুখ প্রস্তুত, তার গলা উঁচু হয়ে উঠেছে। তার ঠোঁট চুম্বনের জন্যে প্রস্তুত। আর চাহনি তো কথাই নেই। দুজনের এই ছবি কোনো রোমান্টিক উপন্যাসের প্রচ্ছদ হতে পারে।

ট্রাম্পের অভিব্যক্তি: ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে, মেলানিয়া ট্রুডোকে একটা আবেদনময়ী চুমু দিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু স্বামীর হাত ধরে থেকেই তিনি কাজটি করতে চলেছেন। কিন্তু তার এমন আচরণ স্বাভাবিকভাবেই ট্রাম্পকে প্রভাবিত করেছে। রীতিমতো জনতার মঞ্চে মেলানিয়া ঠিক এ কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। তাই, এটা বুঝে ক্ষোভের সাথেই নিচে তাকিয়ে ট্রাম্প।
ট্রাম্পের চিবুক খেয়াল করুন। তার ঠোঁটের দিকে তাকান। চোখ দুটো বন্ধ, ভ্রুজোড়া দেখলে বোঝা যায় তার মধ্যে টেনশন কাজ করছে। তার চোখে এবং মুখে কিছু তীর্যক ভাঁজ পড়েছে যা আসলে ক্ষোভের প্রকাশ করে।

তবে উডের এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত নন আরেক শরীরী ভাষা বিশারদ জুডি জেমস। তার মতে, দাম্পত্য জীবনে যথেষ্ট সুখী ট্রাম্প আর মেলানিয়া। ওই ছবিতে ভিন্ন কোনো বার্তা পাওয়ার সুযোগ নেই।
জুডি জেমসের মতে, ক্যামেরার যে ‘অ্যাংগেল’ থেকে ছবিটি তোলা হয়েছে, সেটাই আসলে হইচই ফেলেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর