‘ঘণ্টাওয়ালা’ রবিউলের রুটি-রুজির গল্প

বিবিধ, ফিচার

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-30 06:43:58

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার আতা-নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা রবিউল মিয়া। জীবিকা নির্বাহে যৌবনের শুরু থেকেই রিকশা চালানো শুরু করেন। বয়স এখন ৬৫ বছর পেরিয়েছে। শরীরে আর সায় দেয় না। তাই গত ৪ থেকে ৫ বছর আগে থেকে বেছে নিয়েছেন ভিন্ন এক পেশা। হাটে হাটে ঘুরে বিক্রি করেন গবাদি পশুর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির সামগ্রী। যাকে গরুর ‘গহনা’ বলে থাকেন রবিউল মিয়া।

রোববার (১১ আগস্ট) রাজশাহীর সিটি হাটের প্রবেশ পথে রাস্তার ধারে চট বিছিয়ে সরঞ্জামের পসরা সাজিয়ে হাঁকডাক ছাড়তে দেখা যায় তাকে। কোরবানির শেষ হাটের দিন হওয়ায় সিটিহাটে যেমন জমে উঠেছে গরু-মহিষ বেচাকেনা, তেমনি গবাদি পশুর সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির সরঞ্জাম বিক্রিরও হিড়িক পড়েছে রবিউলের দোকানে।

দোকানে মালামাল বলতে গরু-মহিষের গলায় ঝোলানোর ছোট-বড় ঘণ্টা, ঘুগরি, পায়ে পরানো লোহার গোলাকার বালা, শামুকের খোলা, রঙিন দড়ি প্রভৃতি। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০ টাকা পর্যন্ত সরঞ্জাম বিক্রি করছেন রবিউল মিয়া। ভালো দাম পেলে অনেক বিক্রেতা খুশি হয়ে বকশিশ হিসেবে ২০ থেকে ৫০টাকা বেশিও দিচ্ছেন হাটে সবার পরিচিত মুখ ‘ঘণ্টাওয়ালা’ রবিউল মিয়াকে।

রবিউল জানালেন- শুধু রাজশাহী সিটিহাট নয়, জেলার অন্যান্য হাটেও হাটবার করে বসেন তিনি। কোরবানির ঈদের আগে সিটিহাটে বেশি বেচাকেনা হয় বলে গত এক সপ্তাহ আর অন্য কোনো হাটে যাননি। দিনে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার সরঞ্জাম বিক্রি করেন তিনি। যাতে ভালো লাভও থাকে। জীবিকার তাগিদে এই ব্যবসা শুরু করলেও এখন কাজের প্রতি তীব্র ভালোবাসা জন্মেছে বলে জানান রবিউল।

‘ঘণ্টাওয়ালা’ মামা রবিউল মিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আগে রিকশা চালাতাম। সংসারে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে ছিল। রিকশা চালিয়ে যা আয় হতো, তা দিয়ে তাদের সবাইকে মানুষ করেছি। ৫ ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। পরের ঘরে চলে গেছে মেয়েরা। ছেলে তিনটা বিয়ে করে পৃথক সংসার করছেন। ছোট ছেলে থাকে শ্বশুর বাড়িতে। মেজোটা রাজশাহী শহরে বিভিন্ন কাজ করে খাই। শহরে ভাড়া বাড়িতে থাকে। বড়টা বাড়িতে থাকে। তার সংসারেও দুই ছেলে-মেয়ে। খুব কষ্টে চলে। তাদের সংসারে বউকে নিয়ে তো আর আমি বোঝা হয়ে থাকতে পারি না। রিকশাও চালাতে পারি না এখন। তাই এই ব্যবসা ধরেছি। ভালোই চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শহর থেকে সপ্তাহে একদিন মালামাল কিনি। ওই মালামাল নিয়ে বিভিন্ন হাটে হাটবার করে বসি। তবে কোরবানির ঈদের আগের সপ্তাহখানেক শুধু সিটিহাটে বসছি। এখানে বেচাবিক্রি বেশি হয়। গরুর ‘গহনা’ বেচে বকশিশও পাই বেশি।’

তবে এর চেয়ে বেশি কথা বলার ফুসরত নেই রবিউল মিয়ার। নাতি-নাতনিদের ঈদের কাপড় আর নতুন টাকা হাতে তুলে দিতে শেষ হাটে কমপক্ষে ৫০০০ টাকা বিক্রি করতে চান তিনি। তাই ফের হাঁক ছেড়ে ফেরেন- ‘এই গরুর গহনা লিয়ে লেন মামা…। ঘণ্টা লেন ৫০ট্যাকা, ঘুগরি ৪০ট্যাকা, বালা ২৫ট্যাকা..!

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর