'এভারেস্ট বরং রাজনীতির বাইরেই থাকুক'

, ফিচার

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 01:29:57

শীর্ষ শৃঙ্গ পাওয়া গেলেই হবে না, শৃঙ্গের নাম তাহলে কি হবে, সেটাও ঠিক করতে হয়। ব্রিটিশ কোম্পানির জরিপ বিভাগকে নেপাল, তিব্বত, কেউই নিজেদের মাটিতে ঢুকতে দেয়নি। ফলে স্থানীয় নাম জানার উপায় তাদের ছিল না। তাই ওয়া-র পরামর্শ, শিখরের নাম হোক তার প্রাক্তন ‘বস’ এভারেস্টের নামে। রাধানাথকে বঞ্চিত করার গল্প নেই, উল্টে ওয়া তারবার্তায় হাউস অফ কমনস-এ রিপোর্ট দেন, ‘বাবু রাধানাথ শিকদারের গাণিতিক জ্ঞান অনেককে ছাপিয়ে যায়।’ 

লন্ডনে বসে অবসরপ্রাপ্ত এভারেস্ট অবশ্য মজা করে বলেছিলেন, ‘আমার নামে শিখর? কিন্তু নেটিভরা তো ‘ইভরেস্ট’ পদবিটা ঠিকঠাক বলতে পারে না।’

তবে সমালোচকরা পিছু ছাড়েনি। তাদের বক্তব্য হলো, এভারেস্ট নামটি ঔপনিবেশিক। স্বশাসিত তিব্বত অঞ্চলে শিখরটি তারও আগে থেকে ‘চোমোলাংমা’ নামে পরিচিত। নেপালে একে ‘সাগরমাথা’ বলা হয়। এসব স্থানীয় নাম ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নও মাঝে মাঝে উত্থাপিত হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওয়াহারলাল নেহেরুর সঙ্গে তেনজিং

তবে ‘চোমোলাংমা’ নামটিই অধিক পরিচিত। কারণ, নেপালের খুম্বু গ্লেসিয়ার ‘সাউথ কল’ দিয়েই বেশি লোক এভারেস্টে ওঠে। উল্টো দিকে, তিব্বতি ঝঞ্ঝাট এড়াতে ‘নর্থ কল’-এর রাস্তা মাঝে মাঝেই বন্ধ রাখে চীন। অথচ, প্রথম অভিযান ছিল ওই রাস্তাতেই। তেনজিং ‘সাউথ কল’ দিয়ে অভিযানে গিয়ে সফল হয়েছিলেন। তার আগের চেষ্টাগুলো ছিল চীনের দিক থেকে, যেগুলো ব্যর্থ হয়েছিল।

তবে ‘নর্থ কল’ থেকে ‘সাউথ কল’ দিয়ে অভিযান শুরুরও একটি ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। পঞ্চাশের দশকে তিব্বত সমস্যার সময় চীন উত্তর দিকের রাস্তা বন্ধ করে দেয়, তখনই দক্ষিণের নেপাল দিয়ে অভিযান শুরু হয়। মজার ব্যাপার হলো, রাজনৈতিক কারণেই এভারেস্ট জয়ের জন্য অধিক উপযোগী দক্ষিণের রাস্তা খুলে গিয়েছিল।

আরেকটি প্রশ্নও প্রায়ই শোনা যায়। কে আগে পা রাখল শীর্ষে? তেনজিং না হিলারি? পাহাড়ে-চড়া লোকদের কাছে অবশ্য প্রশ্নবটি অবান্তর। দু’জনে কোমড়ে দড়ি বেঁধে উঠছেন, যে লোকটি দড়িতে আগে, সেই প্রথম পা রাখবে। কিন্তু মানুষের প্রশ্নের স্রোত সামাল দিতে শেষ অবধি তেনজিং-হিলারির এই মর্মে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন, ‘দু’জনে প্রায় একসঙ্গে উঠেছি।’

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওয়াহারলাল নেহেরুর সঙ্গে তেনজিং

এতো রাজনীতি ও প্রশ্নের পরেও একবার সেই রাজনীতি থেকে মুক্তি পেয়েছিল মাউন্ট এভারেস্ট। ঘটনাটি হলো, শৃঙ্গজয়ের পর কাঠমাণ্ডু থেকে কলকাতা হয়ে রাজধানী দিল্লি পৌঁছেছিলেন অভিযাত্রীরা। সরকারি অভ্যর্থনার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু তার অফিসে তেনজিংকে ডেকে বললেন, ‘ব্রিটেন পুরো দলটাকে সংবর্ধনা দেবে। দার্জিলিং ফেরার দরকার নেই, আপনি ওদের সঙ্গেই ফ্লাইট ধরুন।’

তেনজিংয়ের পাসপোর্ট নেই, সরকারি নির্দেশে কয়েক ঘণ্টায় বন্দোবস্ত হয়ে গেল। কিন্তু লন্ডনে যাওয়ার পোশাক? তেনজিংকে নিজের বাড়ি নিয়ে গেলেন নেহরু। কাবার্ড খুলে বের করে দিলেন তার নিজের জামা-প্যান্ট, কোট। বললেন, ‘আপনার, আমার একই সাইজ, এগুলো হয়ে যাবে।’ লন্ডনের বৃষ্টি আটকাতে তেনজিংকে রেনকোট দিতেও ভুললেন না নেহরু।

 বিজয় পতাকা হাতে এভারেস্টের শৃঙ্গে তেনজিং


আত্মজীবনীতে তেনজিং জানিয়েছেন, সেদিন একটিই জিনিস তাকে দেননি নেহরু। কাবার্ডে-থাকা মহাত্মা গান্ধীর টুপিটি। সেটি তেনজিংকে দেখিয়ে নেহরু বলেছিলেন, ‘এটা দেব না। এভারেস্ট বরং রাজনীতির বাইরেই থাকুক।’

আরও পড়ুন: 

স্বপ্ন থেকে সাফল্যে

একজন অসামান্য পর্বতারোহী তেনজিং

 বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ

 ইভেন-বরিলিয়ান আউট, হিলারি-তেনজিং ইন

 ১৬ বার ব্যর্থ হয়েছিলেন তেনজিং!

এভারেস্ট বিজয়ে বাঙালি

এ সম্পর্কিত আরও খবর