একজন অসামান্য পর্বতারোহী তেনজিং

, ফিচার

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 06:06:43

দিনটি শুধু তেনজিং-এর কাছে নয়, সারা বিশ্বের জন্যই স্মরণীয়। এদিন বেলা সাড়ে এগারোটায় শীর্ষভূমিতে পা রাখেন এডমন্ড হিলারি। ঠিক তার পেছনেই তেনজিং নোরগে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টে এই প্রথম মানুষের পদচিহ্ন। দুই অভিযাত্রী তখন নিছক ব্যক্তি নন, সমগ্র মানব সমাজের প্রতিনিধি।

হিমালয়ের দুর্গম ও অধরা এভারেস্ট শৃঙ্গ বিজয়ের ঘটনা সারা বিশ্বে তীব্র আলোড়ন জাগিয়েছিল। কিছুদিন আগেও সে সময় পৃথিবীর প্রায়-অর্ধেক অংশের শাসক ছিল ব্রিটিশরা। ব্রিটেন ছাড়াও সাবেক উপনিবেশগুলোকেও আনন্দের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন ব্রিটিশরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রক্ত, মৃত্যু ও ক্ষতের প্রলঙ্করী ঘটনার পরপরই এভারেস্ট বিজয় ছিল মানব সভ্যতার এক গৌরবময় অর্জন।

শৃঙ্গজয়ের খবর আসার পর অভিযানের নেতা জন হান্ট আর হিলারিকে ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করে ব্রিটেন। তেনজিং পেলেন প্রয়াত রাজা ষষ্ঠ জর্জের নামাঙ্কিত মেডেল। এর বাইরে সংবর্ধনা ও অভিনন্দনের তো হিসাবই ছিল না।

এভারেস্ট অভিযানের পরে নেপালি বংশজাত তেনজিং বসবাস করতে থাকেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং-এ। তিনি আর ফিরে যাননি জন্মভূমিতে। ১৯১৪ সালে নামগ্যাল ওয়াংদি নামের নেপালে জন্ম নেওয়া লোকটিকে আর কেউ মনে রাখেনি। সবাই জেনেছে নতুন ও বিজয়ী এক মানুষকে, যার নাম তেনজিং।

পরিবার তেনজিংকে বানাতে চেয়েছিল ধর্মযাজক। বাড়ি পালিয়ে তিনি হলেন অভিযাত্রী। পর্বতারোহণের সর্বোচ্চ বিজয় অর্জন ছাড়াও তিনি নতুন অভিযাত্রীদের গাইড ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন পরবর্তী জীবনে। পর্বতারোহণ ইনস্টিটিউট তৈরি হলে তাতেও জড়িত থাকেন তিনি। মোট কথায়, হিমালয়ের পাদদেশে দার্জিলিং  শহরকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় এই এভারেস্ট বিজয়ীর জীবন ও কর্মকাণ্ড।

তেনজিং স্মৃতি স্মারক, দার্জিলিং/ছবি: সংগৃহীত

তার কাছে হিমালয় ছিল এক দুর্নিবার নেশার মতো, যে নেশার কাছ থেকে দূরে গিয়ে তিনি থাকতে পারেননি। আজীবন পর্বত বিষয়ক নেশায় বুঁদ হয়ে ছিলেন তেনজিং। একজন অসামান্য পর্বতারোহী হয়েই তিনি ইতিহাসে বেঁচে আছেন।

অনেকগুলো ছেলেমেয়ে ছিল তার। তাদেরকে আর হিমালয়কে নিয়েই তিনি ছিলেন চরম সুখী। এমনিতে তেনজিং ‘ছাং’ খেতে খুব ভালবাসতেন। স্কচ-হুইস্কি প্রায় ছুঁতেনই না। প্রথম জীবনে নস্যি নিতেন। সেটাও ছেড়ে দেন। খাবারের মধ্যে স্ত্রীর হাতে তৈরি পাহাড়ি অঞ্চলের প্রসিদ্ধ খাবার মোমো ছিল অসম্ভব প্রিয়।

এভারেস্ট বিজয় ছিল মানব সভ্যতার এক গৌরবময় অর্জন/ছবি: সংগৃহীত

অবাক ব্যাপার হলো, তুষারাবৃত-বরফময় হিমালয়ের এভারেস্ট জয়ীর শেষ বয়সে দার্জিলিংয়ের ঠাণ্ডা হাওয়া-বাতাস সহ্য হত না। অন্তত শীতের মাস ক’টা আরও নিচে নেমে উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ির মহানন্দা নদীর পাশে থাকতে পছন্দ করতেন তিনি।

বিষয়টি এতোই ভালো লেগেছিল যে, সেখানে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য একটি বাড়িও ঠিক করেছিলেন তিনি। কিন্তু সে বাড়িতে শেষ পর্যন্ত তার যাওয়া হয়ে ওঠেনি। পাহাড়ের বীর জাতক পাহাড়েরই এক অন্তিম শয্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯৮৬ সালের ৯ মে এই পার্বত্য বীর যখন মারা যান, তখন তার বয়স ছিল ৭১।

এ সম্পর্কিত আরও খবর