লাউয়াছড়ায় মথুরা ময়ূরের নজরকাড়া বিচরণ

বিবিধ, ফিচার

তোফায়েল পাপ্পু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মৌলভীবাজার | 2023-09-01 04:15:11

লাউয়াছড়ায় ৪৬০ প্রজাতির জীববৈচিত্র্যের মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণি, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং ১৭ প্রজাতির পোকামাকড় রয়েছে। সুন্দর এই প্রাণিদের অন্যতম বিরণ প্রজাতির কালা মথুরা বা কালো ময়ূর। নজরকাড়া বিচরণে এই বাহারী ময়ূর মুগ্ধ করে সবাইকে।

কালা মথুরাকে সাধারণত মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ সিলেট এবং চট্টগ্রামে চির সবুজ বন-জঙ্গলে দেখা যায়। এরা বনের পাশে, জঙ্গলসংলগ্ন স্থান ও বাশেঁর ঝোপে ছোট ছোট দলে বা জোড়া জোড়ায় বিচরণ করে। কালা মথুরা দেখতে অতি সুন্দর। এই পাখি সহজের নজর কাড়ে। কালচে নীল রংঙের ভূচর পাখিগুলোর দৈর্ঘ্য কম বেশি ৬২ সেন্টিমিটার, ডানা ২২ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৩.৫ সেন্টিমিটার, পা ৭.৫ সেন্টিমিটার, লেজ ২৩ সেন্টিমিটার ও ওজন ১.৩ কেজি।

পুরুষ পাখির পিঠ উজ্জ্বল নীল রঙের। পাখার পালক খাড়া থাকে। কোমর ও পেছনের পালকের প্রান্ত সাদা। স্ত্রী পাখির মাথার চূড়া ও লেজের পালক হালকা বাদামি রংঙের। পুরুষ এবং স্ত্রী উভয় পাখির চোখ পিঙ্গল থেকে কমলা-বাদামি। চোখের পাশের পালকহীন চামড়া টকটকে লাল। পা এবং পায়ের পাতা বাদামি রংঙের।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু মুসা শামসুল মুহিত বলেন, কালা মথুরা খাদ্য হিসেবে বাশঁ বীজ, ডুমুর, পিঁপড়া, উইপোকা, ছোট সাপ, টিকটিকি ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে। সাধারণত মাটি থেকে কুড়িয়ে খাবার খায় তারা। মার্চ থেকে অক্টোবরের ভেতরে এরা প্রজননের কাজ সম্পন্ন করে থাকে বলেও জানান তিনি।

এক সময় মৌলভীবাজার রেঞ্জের প্রায় ২,৭৪০ হেক্টর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের। বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র রক্ষার জন্যে এই বনের প্রায় ১,২৫০ হেক্টর এলাকাকে ‘১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ, সংশোধন) আইন’ অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা দেওয়া হয়।

বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় জীববৈচিত্রময় বন গবেষণা কেন্দ্রসহ এই উদ্যানে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণির বিচরণ। তবে এক সময় কয়েক হাজার বৈচিত্র্যময় প্রাণিতে ভরপুর ছিল দেশের অন্যতম রেইন ফরেস্ট লাউয়াছড়ায়। যা এখন অতীত। দিন দিন প্রাণিজগতের অধিকাংশ সদস্য বিরল বা বিপন্ন প্রজাতিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। ক্রমেই মানুষের দখলে চলে যাচ্ছে বন্যপ্রাণির নিরাপদ আবাসস্থল। বন্যপ্রাণিদের বাসস্থান দখল করে মানুষ গড়ছে ঘর-বাড়ি ও কল-কারখানা। বন ও ঝোপঝাড় উজাড় হয়ে যাওয়ায় দ্রুতই হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণি সম্পদ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর