১৯৭১ সাল, কেমন কেটেছিল মার্চের প্রথম সপ্তাহ

, ফিচার

ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-03-07 16:11:03

সময়টা ১৯৭১। একটা গোটা দেশে উত্তপ্ত হয়ে আছে। আন্দোলন, মিটিং, মিছিল, ভাষণ লেগেই রয়েছে। দেশের নেতা, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র থেকে শুরু করে সারাদেশের সাধারণ জনগণ বুঝে গেছে তাদের লড়তে হবে। বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তান সরকার যে বৈষম্য করছে তার প্রতিবাদে সকলেও একত্রিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই।

ছাত্রদের আন্দোলন 

১৯৪৮ সালের দেশভাগ হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ঘটনা পর পর ঘটতে থাকে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের নির্বাচন, ৫৬ সালের সংবিধান, ৫৮ সালের সামরিক অভ্যুত্থান, ৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ৬৮ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯’এর গনঅভ্যুত্থান এবং ১১ দফা আন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন- প্রায় দু’দশক ধরে পর্যায়ক্রমে চলে আসা বিরোধিতা অন্তরের আগুনকে আরও দীপ্তিমান করতে শুরু করে।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর থেকেই দেশ উত্তপ্ত থাকে। কারণ, স্পষ্টত নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল সেসময়ের পূর্ব পাকিস্তানের দল আওয়ামী লীগ। তবে, পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে। তারা নানাভাবে ব্যাপারটি এড়িয়ে যেতে থাকে।

পাকিস্তানের পতাকায় আগুন দেয় বাঙালিরা

নানারকম রাজনৈতিক চড়াই-উতরাই’-এর মধ্যেই চলে আসে মার্চ মাস। এই মাস ছিল বাঙালির জন্মলগ্নের সূচনা। মার্চের ১ তারিখ দুপুরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান রেডিও-তে ঘোষণা দেন জাতীয় অধিবেশন স্থগিত করার। সাথে সাথেই পূর্ব বাংলায় মিছি শুরু হয়ে যায়। খণ্ড খণ্ড জন সমাবেশসহ মিটিং মিছিল চলতে থাকে অনবরত। ইয়াহিয়ার ছবি এবং পাকিস্তানের পতাকা পোড়ানো হয়।
হোটেল পূর্বাণীতে সেদিন সকাল থেকেই পার্লামেন্টারি বৈঠকে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ইয়াহিয়ার ঘোষণার পরপরই সেখানেই প্রেস কনফারেন্স ডাকেন তিনি। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সেখানে হাজার হাজার ঢাকাবাসী জড়ো হয়। কনফারেন্সে মুজিব ঘোষণা দেন, পরের ২ দিন হরতালের এবং পরবর্তী ৭ মার্চ রেসকোর্সে মিটিংয়ের।

লাটি ও রড হাতে সাধারণ বাঙালির আন্দোলন 

পরদিন ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে প্রথম উন্মোচিত হয়ে স্বাধীন বাংলার মানচিত্রখচিত লাল-সবুজ পতাকা। মুজিবের আদেশ মেনে দিনরাত হরতাল চলতে থাকে। প্রথমে শুধু ঢাকাতে এরপর দেশব্যাপী তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
হরতাল এবং মিছিলের কারণে কারফিউ দেয় পাকিস্তান সরকার। কারফিউ লঙ্ঘন করে জনগণ অনরবত আন্দোলন করতে থাকে। লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় জনগণ বিক্ষোভে নেমে পড়ে। কারফিউ অমান্য করে ব্যারিকেড বানায়। পুলিশ বাঁধা দিয়েও সেই বিক্ষোভ দমাতে পারেনি। গুলি চালানো হলে মানুষ আরও গর্জে ওঠে। স্লোগানে কেঁপে ওঠে বাংলার আকাশ। এভাবেই আন্দোলন চলতে থাকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ।

অবশেষে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সেই ভাষণ ছিল বাঙালির মুক্তির সোপান। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সমাবেত হয় এবং মুক্তির আবেগে মনস্থির করে। পরবর্তীতে এই প্রেরণা হৃদয়ে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল সাহসী বাঙালিরা।  

এ সম্পর্কিত আরও খবর