জানকিছড়ার উঁচু ডালে ‘জার্ডনের বাজ’

, ফিচার

বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-31 06:14:23

জানকিছড়া বিটের উঁচু গাছের উপর এক অচেনা পাখি। এই বিট শ্রীমঙ্গল উপজেলার সংরক্ষিত একটি বন। পাখিটি ডালের উপর বসেই রইল। খুব ভালোভাবে না দেখতে পারলেও মাথার উপরের ঝুঁটিকে দেখে বুঝতে অসুবিধে হলো না যে এটি ‘জর্ডানের বাজ’। সে অবসর সময় পার করছে গাছের ডালে! অথবা শিকারী চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে চারদিক।

প্রথম ডর্জানের বাজ দেখার এ অনুভূতি সব রৌদ্রক্লান্ত ব্যথা ভুলিয়ে দিল। বিশেষ করে তার ঝুঁটিসৌন্দর্য মরে রাখার মতো। যা তাকে রাজার মর্যাদায় অভিসিক্ত করে রেখেছে। স্মৃতিতে নতুন পাখি দেখার সেই উজ্জ্বল সঞ্চয় নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত পাখি গবেষক, লেখক এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, ‌‌‌‘জর্ডানের বাজের ইংরেজি নাম Jerdon’s Baza এবং বৈজ্ঞানিক নাম Aviceda jerdoni। এরা মিশ্র চিরহরিৎ সবুজ বনের পাখি। শুধুমাত্র সিলেট আর চট্টগ্রামের বন ছাড়া দেশের কোথাও এদের খুঁজে পাওয়া যায় না। আমাদের প্রাকৃতিক বনগুলোর বিরামহীন ধ্বংসের মাঝে যে কয়টা জর্ডানের বাজ এখানো টিকে আসে এগুলো আমাদের জন্য অমূল্য ধন। আমি নিজেও একটা জর্ডানের বাজ থেকে সীমাহীন উচ্ছ্বাসিত হয়ে পড়ি।’

প্রাপ্তি স্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমাকালেঙ্গা বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, দুধ পুকুরিয়া ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য এসব ছোট ছোট বনেই ওরা এখনও একটা-দুটো কোনোক্রমে টিকে আছে। এর বেশি নেই কিন্তু। এগুলো সবই ছোট-ছোট বন, খন্ড বন; ধ্বংস হয়ে একেবারে কোনো রকম দাঁড়িয়ে রয়েছে। এখানেই এই পাখিটির বসবাস। জর্ডানের বাজ আমাদের দেশেরই পাখি। সারা বছর আমাদের দেশেই ওরা থাকে। বাসা তৈরি করে ছানা ফোটায়।’

পাতার আড়ালে পাখিটাকে ভালো করে দেখা যাচ্ছে না। ছবি: সাঈদ জামাল

পাখিটির খাবার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওরা কীট-পতঙ্গ এবং পোকা ধরে ধরে খায়। এই সব বনগুলোর প্রকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার ফলে এবং ব্যাপকহারে পর্যটক পরিভ্রমণের ফলে ওর খাবারও অনেক কমে গেছে। আমাদের দেশে বাজ প্রজাতির মধ্যেই এই জর্ডানের বাজটিই আমরা এখনো পাহাড়ি বনে দেখতে পারি। যদিও তার সংখ্যা অত্যন্ত কম। তবে অন্যান্য বাজগুলোকে তো দেখতেই পাই না। সে হিসেবে বলা যেতে পারে জর্ডানের বাজটাই তুলনামূলকভাবে ভালো আছে।’

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব সূত্রে জানা যায়, জার্ডনের বাজ আমাদের দেশের বিরল আবাসিক পাখি। এদের দৈর্ঘ্য ৪৮ সেমি এবং ডানার দৈর্ঘ্য ৩০.৫ সেমি। দেহ বাদামি। মাথার পেছনে খাড়া ঝুঁটির আগা সাদাটে। এরা উচু স্বরে বিড়ালের মতো : ‘পি-আউ’ কিংবা ‘কিকিয়্যা...কিকিয়্যা’ এভাবে ডাকে।

এরা চিল, শকুনের মতো মানুষের বর্জ্য খেলে বাঁচে না। শুধুমাত্র বনের পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ, ছোট ছোট সরীসৃপ খায়। এরা পুরোপুরিভাবে বনের খাদ্যের উপর নির্ভরশীল। ফলে বন যেহেতু প্রায় শেষ করে দিয়েছি আমরা তাই ধীরে ধীরে বনের উপর নির্ভরশীল পাখিগুলোও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে জানান এই পাখি বিজ্ঞানী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর