বিদায় ফুটবল বিশ্বায়নের দূত

, ফিচার

মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 03:35:50

বিশ্বায়নের নামও কেউ তখন জানতো। স্নায়ুযুদ্ধে আকীর্ণ বিশ্ব ছিল বিভাজিত ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত। তখন লাতিন আমেরিকার এক 'কালো মানিক' ফুটবল পায়ে তাবৎ দুনিয়া একাকার করেছিলেন। বিদায় ফুটবল বিশ্বায়নের দূত এদসোঁ আরাঁচ দু নাসিমেঁতু পেলে (১৯৪০ - ২০২২) ।

সাফল্যের মূল মন্ত্র সম্পর্কে তিনি বলতেন, 'কাজের প্রতি ভালোবাসা'। ফিফা’ ম্যাগাজিনের পাঠক এবং জুরি বোর্ডের বিচারে তিনিই বিংশ শতাব্দীর ‘শ্রেষ্ঠ’ ফুটবলার। তবে ইন্টারনেটে সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের ভোট গিয়েছিল দিয়েগো মারাদোনার পক্ষে। ফিফা শেষ পর্যন্ত যুগ্ম ভাবে শতাব্দীসেরা ঘোষণা করে দু’জনকেই। মারাদোনা ২০২০ সালে ৬০ বছর বয়সে প্রয়াত হন আচমকাই। এ বার ২০২২ সালের অন্তিমকালে পেলেকেও হারাল বিশ্ব।

পেলের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর। বাবার দেওয়া নাম এডসন আরান্তেস দি নাসিমেন্তো। সে নামে অবশ্য বিশ্ব তাঁকে চেনেনি। ১৯৫৮ সালে ব্রাজিলের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ। পর পর চারটি বিশ্বকাপে খেলেছেন। তার মধ্যে তিন বার চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। বিশ্বের আর কোনও ফুটবলারের তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের নজির নেই।

বিশ্ব ফুটবলের প্রথম মহাতারকা পেলের জীবনাবসান হয়েছে ৮২ বছর বয়সে। তিন বারের বিশ্বকাপ জয়ী বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার প্রয়াত হলেন ২০২২ সালের বিশ্বকাপের পরেই। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন।

কারিগরি দক্ষতা, টিম স্পিরিট, টোটাল ফুটবল বা পাওয়ার ফুটবলের উত্থানের আগে খেলাটি ছিল ব্যক্তিগত নৈপুণ্য নির্ভর। মাঠে বাইশ জন খেলতেও তারকার দীপ্তিতে দর্শকদের টেনে নিতো এক বা দুইজন খেলোয়াড়। পেলের অসামান্য দক্ষতা শুধু মাঠ নয়, পুরো বিশ্বের নজর কেড়েছিল।

তখন যেমন ছিল না বিশ্বায়ন, তেমনি ছিল না লাইভ সম্প্রচার। তথাপি স্টিল ক্যামেরার স্থির চিত্রে অক্ষয় হয়ে আছে পেলের ছন্দময় খেলা। কবিতার কিংবা শিল্পকর্মের মতো ঝলঝল করছে তার প্রতিটি গোল।

মাঝমাঠ থেকে একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ধূমকেতু হয়ে পেলে প্রতিপক্ষে জালে গোল করেছেন। দুর্দান্ত ফ্রি-কিকে সরাসরি বল পাঠিয়ে দিয়েছেন গোলে। ড্রিবলিং, ট্যাকলিং, পাস, ভলি, ব্যাক-ভলি দিয়ে বল নিয়ে দেখিয়েছেন জাদুকরী খেলা। আস্ত কয়েকটি দশক পেলে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন বিশ্বফুটবলের লক্ষ-কোটি দর্শককে।

পেলের কারণে আটলান্টিক পেরিয়ে বিশ্বকাপ পৌছে গিয়েছে ইউরোপ থেকে লাতিন আমেরিকার ব্রাজিলে। তার আগে কেউ এক মহাদেশে আসর থেকে অন্য মহাদেশে কাপ নিতে পারে নি। বিশ্বকাপের আদি রূপ 'জুলে রিমে কাপ' পেলের অজেয় দাপটের কারণে চিরদিনের জন্য ব্রাজিলের হয়ে আছে।

বিশ্বফুটবলের অনেক তারকা ছিল, আছে, থাকবে। কিন্তু সর্বকালে সেরা হয়েছেন মাত্র কয়েকজন। যাদের মধ্যে নাম করা হয় আর্জেন্টাইন মেসি এবং দিয়াগো ম্যারাডোনার। তালিকায় নাম রয়েছে ব্রাজিলের রোনালদো, ফ্যান্সের কিংবদন্তী জিনেদিন জিদান, হলান্ডের ইয়োহান ক্রুইফ, রাশিয়ার লেভ ইয়াসিন, ইংল্যান্ডের লিনেকার এবং জর্জ হার্স্ট, ইতালির পাওলো রসি এবং সাম্প্রতিক আর্লিং হালান্ড, কিলিয়ান এমবাপ্পে, ক্রিস্টিয়ানো রোনারদো। এসব নানা কিসিমের তালিকার শীর্ষে পেলে থাকেন অবধারিত ভাবে।

ফুটবল যতদিন থাকবে, পেলে থাকবেন ততদিন। ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকার সৌভাগ্য সকলের হয় না, পেলের হয়েছে। বিশিষ্টতায় তিনি থাকবেন বিশ্বফুটবলের অবিচ্ছেদ অংশ হয়ে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর