জলাভূমির শীত পরিযায়ী কুড়াঈগল

, ফিচার

বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-30 12:54:18

দুপুর রোদের উজ্জ্বলতা তখন বাইক্কা বিলে। জলজ উদ্ভিদের গাঁ ঘেঁসে ধীরে ছুটে চলেছে আমাদের নৌকো। এমন মুহূর্তে হঠাৎ একটি ঈগলের দেখা পেয়ে যাই। বিরাট আকারের পাখি! উঁচু জলাভূমির একটি অংশে মাথা তুলে গম্ভীরভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

সজাগ দৃষ্টি দিয়ে সে আমাদের নৌকো লক্ষ্য করছিল। আমরা আমরা তার সীমারেখার মধ্যে চলে আসতেই হঠাৎ উড়ে যাবার প্রস্তুতি নিল সে। বিশাল ডানায় শব্দ তুলে বড় আকারের এই শিকারি পাখিটি নিজেকে দ্রুতই সরিয়ে নিল নিরাপদ দূরত্বে।

এ পাখিটির নাম পালাসি কুড়াঈগল। ইংরেজি নাম Pallas’s Fish Eagle এবং বৈজ্ঞানিক নাম Haliaeetus leucoryphus.

পাখি গবেষক ও আলোকচিত্রী সায়েম ইউ চৌধুরী বলেন, ‘পালাসি কুরাঈগল আমাদের দেশে ‘মহাবিপন্ন’ এবং বিশ্বে ‘সংকটাপন্ন’ প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। এই পাখিটিকে এখন শুধুমাত্র সিলেটের বিভিন্ন হাওর-জলাশয় এবং সুন্দরবনের মিঠাপানি এলাকা ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না। এরা শীত মৌসুমে আমাদের দেশে আসে, বাচ্চা উৎপাদন করে আবার বর্ষা মৌসুমে উত্তরমেরুর দিকে চলে যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন, সাইবেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।’

তিনি আরোও বলেন, এরা হিজল-করচ গাছে বাসা করে থাকে। এই সমস্ত গাছ কম থাকার কারণে এদের প্রজননও অনেক কমে গেছে। এছাড়াও ওদের আবাসস্থল ধ্বংস হবার কারণে ওদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আগে আমাদের দেশের সর্বত্রই এদের দেখা যেত। তবে বর্তমানে এরা শুধুমাত্র বিল ও মুক্ত জলাভূমিতে বিচরণ করে। কারণ ওখানেই ওদের খাবার রয়েছে। বাইক্কা বিল এবং টাঙ্গুয়ার হাওরে বসবাস ও ছানা উৎপাদনের জন্য তাদের উপযোগী করে টাওয়ারও নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। তবে এগুলো এখন পর্যন্ত তারা ব্যবহার করেনি। এদের বেঁচে থাকার জন্য প্রাকৃতিক নির্জন জলাভূমির প্রয়োজন। আমরা যেভাবে প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংস করে ফেলছি তাতে করেই তাদের খাদ্যসংকট চরমভাবে দেখা দিয়েছে।’

উড়ে যাচ্ছে পালাসি কুড়াঈগল। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

সায়েম ইউ চৌধুরী জানান, ‘এই পাখির দৈর্ঘ্য ৮০ সেমি। ছেলেপাখিটি মেয়ে পাখির থেকে আকারে কিছুটা বড়। চোখ হলুদ এবং ঠোঁট কালচে। পিঠের দিক কালচে বাদামি এবং দেহের নিচের অংশ লালচে-বাদামি। মাথা, ঘাড় ও কাঁধ-ঢাকনি ফিকে সোনালি-পীতাভ। ডানার নিচের দিক কালো এবং কালো লেজে ফিতার মতো অর্ধচন্দ্রাকার সাদা অংশে সজ্জিত।

এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে প্রধানত মাছ, জলচর পাখি, সাপ, ব্যাঙ, কচ্ছপ প্রভৃতি। অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি এদের প্রজনন মৌসুম। জলাশয়ের ধারের উঁচু গাছে ডালপাতা ও ঘাস দিয়ে বাসা করে। মেয়েপাখি ২টি থেকে ৪টি ডিম পাড়ে। এরা উন্মুক্ত বিল, হাওর, নদীর পাড় এমন জলাভূমিতে বিচরণ করে। সাধারণত জোড়ায় থাকে বলে জানান এ পাখি গবেষক।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর