অনেকক্ষণ ডুবে থাকতে পারে ছোট ডুবুরি

, ফিচার

বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-30 16:18:06

নির্জন জলাভূমি আজ খুঁজে পাওয়া কঠিন। প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো নানাভাবে মানুষের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ায় আজ গভীর সংকটে জলজ প্রাণীরা। তাদের জীবন আজ টিকে থাকার সংগ্রামমুখর। বাংলাদেশের অন্যতম জলচর পাখি ‘ছোট-ডুবুরি’। এর ইংরেজি নাম Little Grebe।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, এ পাখিটা সবার চোখের সামনে আছে অথচ চোখে ধরা পড়ে না- সেটা হলো আমাদের ‘ছোট ডুবুরি’। পৃথিবীতে ‘ডুবুরি’ পাখি আছে মাত্র ২০ প্রজাতির। আর আমাদের দেশে ১টি মাত্র প্রজাতি আর সে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট-ডুবুরি। সে সারাবছর আমাদের দেশে থাকে। অন্যডুবুরিরা শীতে আসে এখানে। ২৫ থেকে ২৯ সেন্টিমিটারের পাখি সে।

তিনি আরো বলেন, ‘এই জলজপাখিটা অতি সুন্দর একটা পাখি। হঠাৎ ডুবে যায়; অনেকক্ষণ পর অনেক দূরে গিয়ে ভেসে ওঠে। পানির নিচে থাকার তার কোনো ইচ্ছে নেই; একমাত্র ভয় পেলেই কেবল সে এটা করে। বাচ্চা হলে বাচ্চাদের সঙ্গ নিয়ে পানিতে ভেসে বেড়ায়; এতো সুন্দর লাগে দেখতে তখন! বর্ষাকালে প্রজনন মৌসুমে ওর গলাটা খয়েরি রং ধারণ করে। এমনিতে সে হালকা মেটে রং। জলজউদ্ভিদের সাথে সহজে মিশে যায়; দেখা যায় না।’

একাকী ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট-ডুবুরি। ছবি: ইনাম আল হক

ভেসে থাকা সম্পর্কে তিনি বলেন, ডুব দিয়ে সে বহুক্ষণ পানির নিচে থাকতে পারে এরকম পাখি খুব কম আছে। যেমন- পানকৌড়ি। কারণ ওর ডানার পালকগুলো পানিতে ভিজে যায়। ভিজলে পানির নিচে থাকা যায়। যে পালক পানিতে ভিজে না; সেগুলো পানির নিচে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না; কিন্তু ডুবুরি আবার ভিন্ন। ডুবুরি পালক কিন্তু পানিতে ভিজে না। ওর পালকটা তুলার পিন্ডর মতো; সহজে ভেতরে পানি ঢুকে না।

‘সে পায়ের জোরে পানির একেবারে নিচে যেতে পারে। ওর পা আবার ভিন্ন। সাধারণত পাখির পা যেমন থাকে তেমন নয়। ওর প্রতিটি আংগুল অনেকখানি চওড়া চওড়া; একেবারে গাছের পাতা বা বৈঠার মতো। ফলে ছোটডুবুরি সহজে পানিতে ঢাক্কা দিয়ে নিচে চলে যেতে পারে।’

ভিন্ন নাম প্রসঙ্গে ইনাম বলেন, এরা বাইক্কাবিলসহ চা বাগানের বিভিন্ন নির্জন জলাশয়গুলোতে আছে। সে পানির যে কোনো জায়গা টিকে থাকতে পারে। সে জলে বিচরণ করা পোকামাকড়, লতাপাতা, ক্ষুদে মাছের পোনা এগুলো খেয়ে দিব্বি দিন কেটে যায়। বাংলাদেশের প্রতিটি ডুবায় এরা এক সময় ছিল। আমি প্রায় ৩০ বছর আগেও তাকে সব জায়গায় দেখেছি। তখন মানুষ চিনতো। এখন তো মানুষ চিনে না। যদি আপনি বলেন- ‘ডুবুরি’ বলে কোনো পাখি আছে? চিনবে না। বাংলাদেশের বেশিভাগ গ্রামের লোকেরা এই পাখিটাকে বলে ‘ছ্যারছ্যারি’। ও ভয় পেলে পানির উপর দিয়ে অনেক দূরে উড়ে যায় বলে এই নাম।

ছোট-ডুবুরির দল। ছবি: ইনাম আল হক

তিনি আরো বলেন, শীতের দিনে পানি কমে গেলে ওরা একত্রিত হয়ে দল বেঁধে থাকে। কোনো কোনো দলে ১০০/২০০ পাখিও আমি খুঁজে পেয়েছি। এখনো কোনো কোনো বিলে আমি দেখতে পাই তাদের। লোকে নৌকা নিয়ে গেলে ওরা পানির উপর দিয়ে ভয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যেতো। এমন একটা ভাব তার যে- না উড়ছে, না ডুবছে। সে পানির উপর দিয়ে দৌঁড়াচ্ছে।

পাখিটি ছোট থাকায় সুবিধে হলো- খাবার কম লাগে। অল্প জায়গায় থাকাসহ সহজে লুকতে পারে। আর অসুবিধা হলো- এর ডিমটা খুবই ছোট। ফলে টিকটিকি, গিরগিটি, অঞ্জন প্রভৃতি সরীসৃপরা এর ডিম খেয়ে ফেলতে পারে। এছাড়াও চিল, গুইসাপ প্রভৃতি ওর শত্রু রয়েছে। ও তো পানির উপরের পাতার মধ্যেই ডিম পাড়ে; ডিমে তা দেয়া, ছানাদের বড় করা এ বড়ই কঠিন কাজ। ও আগে যেসব প্রাকৃতিক বিল-হাওরগুলোতে ছিল, এখন তো এসব প্রাকৃতিক বিলে মানুষের আনাগোনা। নিড়িবিলি থাকতে দিচ্ছে না। প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো কোনো না কোনোভাবে ব্যবহার করে ফেলা হচ্ছে বলে জানান প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর