শরতে ফুটেছে আষাঢ়ের কদম!

, ফিচার

সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী | 2023-08-31 21:46:02

কদম ফুল সবার কাছেই একটি পরিচিত নাম। বর্ষার নান্দনিক সৌন্দর্য এই কদম ফুল। কদম ফুলের পাপড়িগুলো দেখলেই মনে হয় যেন সৃষ্টিকর্তা তাঁর নিপুণ কারুকার্যে সৃষ্টি করেছেন এটি। দেখলেই মন জুড়ে যায়। কদম ফুল ছাড়া বর্ষাকাল যেন অসমাপ্ত। মানুষ যেমন নিয়ম হারিয়ে ফেলেছে, প্রকৃতিও তেমনি তার নিজের নিয়ম থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।বর্ষার হলেও এবার শরতেদেখা মিলছে অজস্র কদম ফুলের। রাজবাড়ী সদরসহ বালিয়াকান্দির বিভিন্ন জায়গায় এখন শোভা পাচ্ছে শরতের কদম। সবুজ পাতার ফাঁকে শোভা পাচ্ছে অসময়ে ফোটা এই কদম ফুল। সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে প্রকৃতিতে।

বর্ষার আগমনকে স্বাগত জানানো এই কদম ফুল চলতি বছরে তেমন একটা চোখে না পড়লেও শরতে সৌরভ বিলিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমিক মানুষের হৃদয়ে। সবুজ পাতার ফাঁকে সাদা-হলুদের রঙে মিশে আছে একাকার। কদম ফুলকে ঘিরে বাংলা সাহিত্যে রয়েছে অসংখ্য সৃষ্টিশীল রচনা। কবিতা আর গানে বর্ষাকে বর্ণনা করতে গিয়ে কবি সাহিত্যিকরা বারবার টেনে এনেছেন কদম ফুলকে। ‘বাদল দিনের কদম ফুল অথবা এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে’- এমন অসংখ্য গান রয়েছে রুপসী তরুর এই কদম ফুলকে নিয়ে।    


তবে প্রকৃতির বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে কদম ফুলের ওপর। বর্ষায় তেমন একটা না ফুটলেও এবারের শরতে বালিয়াকান্দির বিভিন্ন জায়গায় থোকায় থোকায় ফুটে রয়েছে অসময়ের এই কদম ফুল। বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদ সংলগ্ন দীঘির পারে, সদর ইউনিয়নের কুন্ডুপাড়া, পাইককান্দিসহ অনেক জায়গায় এখন শোভা পাচ্ছে এই কদম ফুল। এছাড়াও রাজবাড়ী শহরের প্রধান সড়কের বেশ কয়েকটি গাছে দেখা মিলেছে কদম ফুলের। জেলার প্রধান সড়কের অঙ্কুর স্কুল এন্ড কলেজ গেটের সামনে ফুটে আছে কদম ফুল। আর একটু আগালেই বড় মসজিদের প্রবেশপথে ফুটে রয়েছে শরতের এই কদম ফুল।

বারুগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্য পরিষদের সভাপতি মুন্সী আমীর আলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, কদম নামটি এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। কদম ফুলের আদি নিবাস ভারতের উঞ্চ অঞ্চল, চীন ও মারয়ে। বাংলা সাহিত্যে কদম ফুলের প্রাধান্য বেশ চোখে পড়ার মতো।


রিশা শিল্পী গোষ্ঠীর পরিচালক গোলাম মোর্তবা রিজু বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রকৃতির হাজারো ফুলের মধ্যে কদম ফুলের সৌন্দর্য বেশ উপভোগ্য। কদম ফুল একটি দেখতে পেলেও  মূলত এটি একটি ফুল নয়। এটি অজ¯্র ফুলের সমারোহ। আষাঢে কদম ফুলের সমারোহ ঘটলেও এবার শরতের প্রকৃতিতে যে অসংখ্য কদম ফুল ফুটেছে তা চোখে পড়ার মতো।

বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, বর্তমান জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। যার কারণে প্রকৃতির উপর নেতিবাচক একটি প্রভাব পড়েছে। আর এ কারণেই বর্ষার কদম ফুল এখন শরতেও দেখা মিলছে। এটা কোন অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে আমাদের এখান থেকে একটি শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে আর সেটা হলো প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের যা করার প্রয়োজন সেটা করতে হবে। প্রকৃতিকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে। না হলে ভবিষতে আমাদের আরো অনেক কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

কদম সম্পর্কে জানা যায়, এটি একটি উদ্ভিদ প্রজাতি। এর বেশ কয়েকটি নামও রয়েছে। যেমন- বৃত্তপুষ্প, কর্ণপূরক, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভি, সিন্ধুপুষ্প, মেঘাগমপ্রিয়, মঞ্জুকেশিনী ইত্যাদি। রুপসী তরুর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কদম। কদমের কাণ্ড সরল, উন্নত, ধূসর থেকে প্রায় কালো এবং বহু ফাটলে রুক্ষ, কর্কশ। শাখা আজস্র এবং ভূমির সমান্তরালে প্রসারিত। পাতা হয় বড় বড়, ডিম্বাকৃতি, উজ্জ্বল-সবুজ, তেল চকচকে এবং বিন্যাসে বিপ্রতীপ। বোঁটা খুবই ছোট। নিবিড় পত্রবিন্যাসের জন্য কদম ছায়াঘন। শীতে কদমের পাতা ঝরে পড়ে আর বসন্তে কচি পাতা গজায়। কদমের একটি মঞ্জরিকে সাধারণত একটি ফুল বলেই মনে হয়। কদম গাছের বেশ ঔষধি গুণ রয়েছে। কদম গাছের ছাল জ্বরের ঔষধি হিসাবে বেশ উপকারি। কদম পাতার রস কৃমি দূর করে। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর