কমে যাচ্ছে জলাভূমির পাখি ‘গয়ার’

, ফিচার

বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-31 08:14:45

বিল-হাওর জলচর পাখিদের পরম নিবাস। অনাদিকাল হতে মমতা আর ভালাবাসার এ স্থানটির মাঝেই তারা জন্মমৃত্যু কাটিয়ে দেয়। কেননা, জলচরদের যে অন্যত্র যাবার সুযোগ নেই। এক জলাশয় হলে অন্যশয়েই শুধু শিকারপ্রার্থী হয়ে ক্ষণিকের বিচরণ।

কিন্তু প্রাকৃতিক এসব জলাশয়ে আজ তাদের জন্য হয়ে উঠেছে অনিরাপদ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। ক্রমশই প্রাকৃতিক জলাভূমি ধ্বংস করে তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম মাছের খামার বা ঘের। এর ফলে সংকুচিত হয়ে পড়ছে তাদের ট্যারিটরি বা নিজস্ব বিচরণ এলাকা।

বিল-হাওর সংলগ্ন পুরাতন বৃক্ষ, পার্শ্ববর্তী বাঁশঝাড় বা জলচর পাখিদের বসবাসের উপযুক্ত স্থানগুলো আজ ক্রমশই বিনষ্ট হয়ে গেছে। পাখি বিশেষজ্ঞর মতে, অন্যান্য জলাভূমির পাখিদের মতো আবাসস্থল আর প্রজনন সংকটের শিকার এই গয়ার পাখিটিও।

জলজ এই পাখিটির নাম ‘গয়ার’। ইংরেজিতে এর নাম Oriental Darter এবং বৈজ্ঞানিক নাম Anhinga melanogaster . তবে কেউ কেউ পাখিটিকে ‘সাপপাখি’ হিসেবে বলে থাকেন। 

বাংলাদেশের বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো ডারটার বিপন্ন পাখি। এর সংখ্যা কমে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশ থেকে এর সংখ্যা খুবই কমে গেছে। আমার পরিষ্কার মনে আছে, আমরা যখন ১৯৯৪ সালের হাওর-বিলগুলোতে পাখি গণনার জন্য যেতাম তখন একেকটা বিলেই ১০টা/১২টা করে ডারটার দেখতাম। এখন পুরো হাওরে হয়তো ১টা কি ২টা পাই। এতোই এরা কমে গেছে এবং অন্য জায়গায় তো দেখতেই পাই না।

তিনি আরো বলেন, আমি দশ বছর আগে চট্টগ্রামে একটা পুকুরে তাকে উড়ে এসে নামতে দেখেছিলাম। তারও দু-তিন বছর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিলে আমি হঠাৎ দেখি সে উড়ে এসে পানিতে নামলো। তখন সাথে সাথে ওর কয়েকটা ছবি তুলেছিলাম। এখন এসব জায়গায় বিশেষ করে পুকুর বা জাবি’র বিলে একেবারেই দেখা যায় না। প্রাকৃতিক জলাশয়ের পার্শ্ববর্তী বাঁশঝার বা অন্যত্র দু-একটা জায়গায় আমি পাখিটিকে বসে থাকতে দেখি। কারণ, সে রাত্রি কাটায় বাঁশঝাড়ে অন্যান্য বক-সারসদের মাঝে। সে বাসাও বাঁধে অন্য বকের সাথে।

খাদ্যের সন্ধানে উড়ে চলেছে গয়ার। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

পাখিটির শারীরিক আকৃতি সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, ডারটার পাখিটি হাঁসের চেয়ে বড়। প্রায় ৯৭ সেন্টিমিটার। সারাদেহ কালো। চঞ্চু (ঠোঁট) মাথা ও গলা বাদামি এবং গলায় লম্বা রুপালি দাগ। ওর গলাটা লম্বা ও চিকন। সে যখন শ্বাস নেওয়ার জন্য পানির নিচ থেকে মাথা বের করে রাখে বা এগিকে-ওদিক তাকায় তখন তাকে দেখতে সাপের মতো লাগে। আমি নিজেও এটা দেখেছি অনেকবার। এজন্যই হয়তো লোকে এই ডারটারকে ‘সাপপাখি’ও বলে থাকেন।

আমরা পাখি গণনায় আজকাল সারাদেশ মিলে ডারটার তেমনভাবে পাই না। আমাদের প্রাকৃতিক হাওর-বিলেই পাখিগণনায় এ পাখিটির প্রাপ্তি সংখ্যা ১০ এর উপর কিছুতে উঠে না। এই পাখিটি কেন কমে যাচ্ছে -এটা আমাদের আসলে জানা নেই। ও তো যে কোনো জায়গার বিল-জলাশয় থেকে মাছ ধরতেই পারে। কিন্তু কেন এভাবে কমে যাচ্ছে এটা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। ওর প্রজনেন জায়গাও আমরা এখন একেবারেই দেখি না। প্রজননসংকটও তাদের দ্রুত বিলুপ্তির পেছনে অন্যতম কারণ বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর