ট্রিপ টু শ্রীলঙ্কা-১: হেরিটেন্স কান্দালামা

, ফিচার

আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল | 2023-09-01 04:22:59

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে আমাদের ভ্রমণ স্থবির হয়ে যায়।শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারি করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৬৪ লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মকানুনের বেড়াজালে আটকে যায় আমাদের বিদেশ ভ্রমণ।সেই দুঃসহসময়ে খুশির বার্তা নিয়ে আসে ঢাকাস্থ শ্রীলঙ্কান হাইকমিশন।তারা বাংলাদেশ ট্রাভেলরাইটার্স এসোসিয়েশনের সদস্যদের শ্রীলঙ্কান পর্যটন মন্ত্রণালয়, শ্রীলঙ্কান ট্যুরিজম প্রমোশন ব্যুরো ও শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসের সহযোগিতায় দেশটি ভ্রমণের আয়োজন করে। বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করে এক ফ্যামট্রিপ।

শ্রীলংকান এয়ারলাইন্সের এয়ারপোর্ট ডেস্কে ফ্লাইট সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন লেখক। ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স এসোসিয়েশনের ছয় সদস্যের একটি দল চলতি ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আটদিনের জন্য শ্রীলঙ্কা সফরে যায়। তবে এবারের ভ্রমণ অন্যসব ভ্রমণের মতো ছিলনা। করোনার কারণে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নানা ধরনের নিয়মের বেড়াজালে পড়ে পিসি আর টেস্ট, হেলথ ডিক্লারেশন ফরম পূরণ, অনলাইনে ভিসা আবেদন ইত্যাদি বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়।

প্রকৃতিময় হেরিটেন্স কান্দালাম। ছবি: আজিম খান রনি

একটি দেশকে যে কত নামে ডাকা হতো, তা শ্রীলঙ্কার ইতিহাস ঘাঁটলেই বোঝা যায়।পৌরাণিক যুগে দেশটি শুধু লঙ্কা নামে পরিচিত ছিল। সংস্কৃত সাহিত্যে এর নাম দেখা যায় সিংহল দ্বীপ।গ্রিক ও রোমান পণিডতেরা একে ডাকতেন তাপ্রবানি বলে, আর আরব ব্যবসায়ীরা নাম দিয়েছিলেন সেরেন দিপ।ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে পর্তুগিজরা যখন শ্রীলঙ্কায় এলেন, তখন তারা এর নাম রাখলেন শেইলাও।এই পর্তুগিজ শব্দটি ইংরেজদের কাছে গিয়ে সিলোন হয়ে যায়।

 

হেরিটেন্স কান্দালামার ভেতরে ন্যাচারালরক। ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

‘শ্রী’ আর ‘লঙ্কা’ দুটোই সংস্কৃত শব্দ। ‘শ্রী’মানে সুন্দর বা দৃষ্টিনন্দন।আর লঙ্কা মানে দ্বীপ। সুতরাং, শ্রীলঙ্কা মানে সুন্দর দ্বীপ। রামায়ণ ও মহাভারতে লংকাদ্বীপের কথা বহুবার বলা হয়েছে।

হেরিটেন্স কান্দালামা

শ্রীলঙ্কার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা বলে শেষ করা যাবে না।এই দ্বীপের বাতাস সুবাসে ভরা।অ্যাশলি গিবসন নামের এক পর্যটক শ্রীলঙ্কা সম্পর্কে একটি বই লিখেছেন।বইটির নাম ‘আইল অব সুইটসেভার্স, অর্থাৎ সুবাসের দ্বীপ।কলম্বো এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি মাইক্রোবাসে করে আমরা যখন হেরিটেন্স কান্দালামায় পৌঁছুলাম, তখন দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এর আসল সৌন্দর্য।পৃথিবীর অন্যতম হেরিটেজ সাইট হিসেবে এর বিরাট খ্যাতি, যা দেখতে আসেন দেশ-বিদেশের শৌখিন ধনী পর্যটক থেকে স্থপতিরা। বাংলাদেশের বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার ‘রাবণের দেশে আমি এবং আমরা’ এবং স্থপতি ও লেখক শাকুর মজিদ ‘সিংহল সমুদ্র থেকে’বইতে হেরিটেন্স কান্দালামা নিয়ে লিখেছেন।

হেরিটেন্স কান্দালামার প্রাকৃতিক সুইমিংপুলের পাশে লেখক। ছবি: জাকারিয়া মন্ডল

হেরিটেন্স কান্দালামা একটি পরিবেশ বান্ধব ফাইভ স্টার রিসোর্ট।এর স্থপতি বিশ্ববিখ্যাত জেফরি বাওয়া।তিনি নতুন ধরনের স্থাপত্য রীতির সূচনা করেন।শ্রীলঙ্কার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পরিবেশকে সমন্বিত করে তিনি এতে ভিন্নধর্মী এক স্থাপত্য ধারা প্রকাশ করেন।শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘দেশ মান্য’পদকে ভূষিত এই জেফরি বাওয়া।

হেরিটেন্স কান্দালামার লনে ট্রাভেলরাইটার্স এসোসিয়েশন টিম। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

ডান পাশে খাড়া পাহাড়, বাম পাশে লেক। পাহাড় ওলেকের মাঝখানে রিসোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। এর সর্বমোট কামরা ১৫২টি।

হ্রদের পাড়ে হেরিটেন্স কান্দালামা। ছবি: আজিম খান রনি

রিসোর্টের পাশের বন-জঙ্গল নানা রকম ফুল-ফলের গাছে ভরপুর। বোনাস হিসেবে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বানর আর পাখিরকলরব।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ট্রাভেলরাইটার্স এসোসিয়েশন

এ সম্পর্কিত আরও খবর