বাইক্কা বিলের পুরাতন বাসিন্দা 'এশিয়ান হার্ণবিল'

, ফিচার

বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-31 18:10:23

বিকেল গড়িয়ে সময় সন্ধ্যের কাছাকাছি। মৃদু শীত নামতে শুরু করেছে আগ্রহায়ণ ঘিরে। পাখিময় বাইক্কা বিলের পানিতে ক্রমেই পাখিদের শীত মৌসুমের মেলা বসতে শুরু করেছে। এ বিলের পুরানো বাসিন্দা এশীয় শামখোল। তবে সারা বছর দেখা পাওয়া যায় না। বছরের কয়েকটি মাস লাপাত্তা সে। এর ইংরেজি নাম Asian Openbill  এবং বৈজ্ঞানিক নাম Anastomus oscitans।

‘এশীয় শামখোল’ বড় আকারের জলচর পাখি। পৃথিবীতে ২ প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে এদের এক প্রজাতি পাওয়া যায়। একে ‘শামুকখোল’ নামেও বলা হয়ে থাকে। এরা বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। 

বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ বলেন, এই ছবিটি আমি শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল থেকে তুলেছি। শামুখখোল হাওর, বিল, মিঠাপানির জলাভূমি, ধানক্ষেত, উপকূলীয় প্যারাবন ও নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়ায়। সচরাচর ছোট ঝাঁকে থাকে। বড় কলোনিতে রাত্রিবাস ও প্রজনন করে। খাবারের অভাব না হয়ে এরা সাধারণত এক জায়গা থেকে নড়ে না। কমবয়েসী শামুকখোলেরা উড়তে শেখার পরে বিশাল অঞ্চলজুড়ে পরিভ্রমণ করে থাকে।

পাখির রিং এর তথ্য যোগ করে তিনি বলেন, ভারতের ভরতপুরে রিং পরানো একটি কমবয়েসী শামুকখোলকে প্রায় ৮০০ কিমি পূর্বে এবং থাইল্যান্ডের রিং পরানো আরো একটি পাখিকে ১৫০০ কিমি পশ্চিমে বাংলাদেশে পাওয়া গেছে। এর মানে হলো এরা বহুদূর পর্যন্ত বিচরণ করার ক্ষমতা রাখে।

খাদ্যাভাস সম্পর্কে আসিফ বলেন, ভোরে আবাস ছেড়ে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। ডানা ঝাপটিয়ে দল বেঁধে জলাভূমির দিকে উড়ে যায়। দিনের উষ্ণতম সময়ে ডানা না নাড়িয়ে বিশেষ কৌশলে ধীরে ধীরে চক্রাকারে আকাশের উড়তে উঠে যায় আর দল বেঁধে ঘুরতে থাকে। আবার জলাশয়ের একদিক থেকে আরেকদিকে ক্রমান্বয়ে উড়ে উড়ে খাদ্যের অনুসন্ধান চালায়।

সাদা-কালো ছবিতে যুগল শামুকখোয়ের প্রণয়। ছবি: আদনান আজাদ

‘পানির ধারে বা অগভীর পানিতে হেঁটে হেঁটে কাঁদায় ঠোঁট ঢুকিয়ে খাবার খুঁজে বেড়ায়। এদের খাদ্যতালিকায় বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে- শামুক আর ঝিনুক। এছাড়াও ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, ব্যাঙ ও কাকড়া প্রভৃতি খায়। সচরাচর পানির নিচে শামুকের খোলক ভেঙে এরা পানির উপর মাথা তুলে শামুকের মাংস গিয়ে খায়।’

খাবার কৌশল সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, শামুকখোলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৮ সেন্টিমিটার। ঠোঁটের বিশেষ গঠন এক ধরণের জাঁতিকলের মতো কাজ করে। প্রকৃতিপ্রদত্ত এ জাঁতিকলের মাধ্যমে শামুকখোল জলাভূমির শামুক ভেঙ্গে খায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শামুক ভাঙার জন্য নয়, বরং পিচ্ছিল শামুক ভালোভাবে ঠোঁটে আটকানোর জন্য তার ঠোঁটের গঠন এমন অদ্ভুত হয়।

শারীরিক গঠন এবং প্রজনন সম্পর্কে আদনান বলেন, শামুকখোলের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৮ সেন্টিমিটার। সাদাটে দেহ। শুধুমাত্র ডানা ও লেজের প্রান্ত কালো। বিশাল কালচে চঞ্চু (ঠোঁট)। চঞ্চুর দুই পাটির মাঝখানে অনেকটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। এপ্রিল-জুলাই এদের প্রজনন মৌসুম। তখন কালচে পা হালকা গোলাপি হয় এবং তারা গোঙানির মতো শব্দে ডাকে।

শামুকখোলের সবচেয়ে বড় কলোনি আমাদের বগুড়াতে রয়েছে। কয়েক হাজার পাখি প্রতি বছর শিবগঞ্জে প্রজনন করে থাকে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ

এ সম্পর্কিত আরও খবর