বরই চাষে ভাগ্য বদলের আশা লিটনের

, ফিচার

সুমন আলী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নওগাঁ | 2023-09-01 19:54:48

নওগাঁয় বরই চাষে লিটন হোসেনের অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। তিনি নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের মকমলপুর গ্রামের কৃষক লিটন হোসেন। উন্নত জাতের কাশ্মীরি ও বলসুন্দরী বরই চাষ করে ভাগ্য বদলের আশা করছেন তিনি। রোগবালাই ও খরচ কম হওযায় আগামীতে আরও বেশি বরই চাষ করবেন বলেও জানান তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি গাছের উচ্চতা পাঁচ ফুট। ডালে ডালে ধরে আছে বরই। ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছ। পরিপক্ব বরইগুলো দেখতে লাল আপেলের মতো। স্বাদে মিষ্টি। কাশ্মীরি আপেল কুল হিসেবে পরিচিত। কাশ্মীরি ও বলসুন্দরী বরই দেখতে অনেকটা ছোট সাইজের আপেলের মতো। আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল রং। অধিক পুষ্টিগুণ ও সুস্বাদু। তার এই বাগান দেখে এখন অনেকেই আগ্রহী উঠছেন বরই চাষে।


এ বিষয়ে কথা হয় কৃষক লিটন হোসেনের সাথে। তিনি জানান, তার নিজের তেমন কোন জমি না থাকায় অন্যার ২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে চুয়াডাঙ্গা থেকে ৩০০ কাশ্মীরি ও বল সুন্দরীর ১২৫পিচ চারা এনে জমিতে রোপণ করেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ সঠিক পরিচর্যায় মাত্র ১১মাসের মাথায় তার সবকটি গাছেই বরই ধরছে। প্রতিটি গাছ থেকে ৪০-৫০কেজি বরই ধরে আছে।

তিনি আরও বলেন, পোকা ও পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষায় বাগানের চারপাশে মশারি জালের বেড়া দেয়া হয়েছে। এই পর্যন্ত তার বরই বাগানে খরচ হয়েছে ৭০-৮০হাজার টাকার মত। বাজারে বরইয়ের দাম ভালো পেলে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩লক্ষ টাকা লাভ হবে। এতে যদি আমি একটু সাবলম্বী হয়ে উঠতে পারি।

লিটন বলেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে বরই চাষে খরচ ও রোগবালাই কম। তাই আগামী বছর আরও বেশি পরিমান জমিতে বরই চাষের পরিকল্পনা করছেন তিনি ।

স্থানীয় কেশবপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ আমরা মূলত সবজি হিসেবে সিম, বেগুন, লাউ, আলুর আবাদ করে থাকি। তবে কখনো বানিজ্যিকভাবে কাশ্মীরি ও বলসুন্দরী বরই এর আবাদ করা হয়নি। কৃষক লিটন দুই বিঘা জমিতে বরই এর বাগান করেছেন। এক বছরের মধ্যেই গাছগুলোতে বরই ধরেছে এবং বিক্রি করার উপযোগী হয়েছে। বাগান ঘুরে দেখলাম। আমিও আগামী বছরে এই জাতের বরই এর চাষ করব।

বাগান দেখতে আসা মারমা মল্লিকপুর গ্রামের বেলাল হোসেন জানান, লিটন ভাই নাকি ২ বিঘা জমিতে কাশ্মীরি ও বলসুন্দরী বরই চাষ করেছেন। এবং এক বছরের মাথায় অনেক বর ধরছে। তাই দেখতে আসছি। এসে এই বাগান দেখে সত্যিই আমাকে খুব ভালো লেগেছে। যে এত কম সময়ে এত সুন্দরভাবে বরই ধরে আছে। এবং সব খরচ বাদ দিয়ে তার নাকি অনেক টাকা লাভ হবে। তাই কৃষি বিভাগ থেকে আমাকে সহযোগীতা করলে আমিও এই বরইয়ের বাগান কররো।


নওগাঁ সদর উপজেলার উপ-সহাকারি কৃষি অফিসার রতন আলী বলেন, নাতিশীতোষ্ণ ও উষ্ণমন্ডলীয় জলবায়ু বরই চাষের জন্য উপযোগী। ফলন ভালো, দেখতে সুন্দর এবং খেতেও সুস্বাদু এ বরইগুলো। ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষকরা এখন নতুন নতুন ফসল ও ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। নওগাঁর এ অঞ্চলে এই জাতগুলোর বরই চাষ ব্যাপকভাবে নেই বললেই চলে। কাশ্মীরি ও বলসুন্দরী বরই চাষে ফলন বেশি ও দাম ভালো হওয়ায় কৃষকদের এই জাতের বরই চাষে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। লিটন হোসেন দুই বিঘা জমিতে কাশ্মীরি ও বলসুন্দরী বরই চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত তেমন কোন রোগ বালাই নেই বললেই চলে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বরই চাষে খরচ কম ও লাভ বেশি। লিটনকে আমরা কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহায়তা দিয়েছি। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩লাখ টাকার মত লাভ করতে পারবেন বলে আশা করছি। আগামী বছর বরই চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন এই কৃষি অফিসার।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এবার জেলায় বরইয়ের আবাদ হয়েছে ৩৪৩ হেক্টর জমিতে। এই মৌসুমে বরই এর সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫৭০ মেট্রিক টন। আর পার হেক্টর জমিতে ৭৫০ টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬০ হেক্টর, রানীনগরে ৩ হেক্টর, আত্রাইয়ে ৬ হেক্টর, বদলগাছীতে ১০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ২০ হেক্টর, পত্নীতলায় ২০ হেক্টর, ধামইরহাটে ২০ হেক্টর, মান্দায় ১২ হেক্টর, পোরশায় ১০২ হেক্টর, সাপাহারে ২০ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ৭০ হেক্টর জমিতে বরইয়ের আবাদ করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর