জলাভূমিতে যুদ্ধ করে টিকে আছে মেটেমাথা-কুরাঈগল

, ফিচার

বিভোর বিশ্বাস, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম সিলেট | 2023-08-30 02:46:44

জলাভূমির বিপন্ন শিকারী মেটেমাথা-কুরাঈগল। এমন নয় যে, আমাদের পরিচিত দোয়েল, শালিক, বুলবুলির মতো এরা খুব ভালোভাবেই বেঁচে আছে। প্রাকৃতিক জলাভূমি ধ্বংস, সেখানে কৃত্রিম মাছের খামার, প্রাকৃতিক বড় আকৃতির গাছ কর্তন, প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছের সংকট এ সমস্ত কিছুই ‘মহাহুমকি’ এর বার্তা দিচ্ছে এইসব শিকারীপাখিদের জন্য।

প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংসের কারণে তাদের অবস্থা আজ অনেকটাই বিপন্ন। নিভে আসছে বিকেলের আলো। জলাভূমিতে পরিপূর্ণ এই এলাকাগুলোতে তখন মায়াবী স্নিগ্ধতা। জলাভূমিতে পৌঁছ মাত্রই - যে পাখিটি স্বাভাবিকভাবে সবাইকে স্বাগত জানাতো তার নাম ‘মেটেমাথা-কুরাঈগল’।

এক সময় বাইক্কা বিলে পা রেখে দেখা যেতো- পৃথিবীর অন্যান্য শীতপ্রধান দেশ থেকে শীতের পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলি। কিচিরমিটির শব্দ আর জলকেলিতে গভীর সৌন্দর্য মেলে ধারা দৃশ্য। কিন্তু এখন বাইক্কা বিলের অন্যদৃশ্য! হতাশার দৃশ্য। পরিযায়ী পাখিরা সেইরকমভাবে ঘটা করে আসে না। এর একটাই কারণ, বাইক্কা বিলের আশপাশ ধ্বংস। প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলোকে এক শ্রেণির সংঘবদ্ধচক্র গ্রাস করে এখানকার জীববৈচিত্র্যকে চরম হুমকির মাঝে ফেলে দিয়েছে।


সাদা আর কালোর রঙে একটি বড় আকারের পাখি বাইক্কা বিলের পাখি পর্যবেক্ষণ টাওরের উপর দিয়ে ক্রমগত উড়ছে আর উড়ছে। বিরতিহীন উড়াউড়ি জানান দিচ্ছে ক্ষুধার্ত অবস্থার কথা। মাছের সন্ধানে দিব্বি পাড় করছে সময়। গতিপ্রকৃতি আর শারীরিক স্থুলতা দেখে চিনতে অসুবিধে হয় না এই বড় আকারের শিকারি পাখিটির নাম ‘মেটেমাথা-কুরাঈগল’।

এ পাখিটির ইংরেজি নাম Grey-headed Fish Eagle এবং বৈজ্ঞানিক নাম Haliaeetus ichthyaetus। এরা অনেক জোরে জোরে তীক্ষ্মস্বরে ডাকে। ছো মেরে শিকার ধরে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্য বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মনিরুল এইচ খান জানান, ‘এই পাখিটি সারাদেশেই আছে। তবে পর্যাপ্ত বা ব্যাপক সংখ্যায় নেই। এদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে এখন।’

এর আকৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঈগলেরা চিলের চেয়ে বড়। এই ঈগলটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ থেকে ৭৪ সেন্টিমিটার। এদের মাথা, গলা ও ঘাড় ধুসর রঙের। ডানা বাদামি তবে বুক ও পেট লালচে বাদামি। সাদা লেজের শেষপ্রান্তে রয়েছে কালো রঙের অর্ধবৃত্তাকার ছাপ।’

উপকার প্রসঙ্গে এ গবেষক বলেন, ‘কুরাঈগলেরা মূলত মাছশিকারী পাখি। তাই আমাদের দেশের জলাভূমি আশপাশে এদের বেশি দেখা যায়। অসুস্থ মাছ খেয়ে পরিবেশের উপকার করে ঈগলেরা। পানির উপর প্রথম ভেসে উঠা অসুস্থ মাছকে ছো মেরে ধরে গাছের ডালে নিয়ে খেয়ে ফেলে।’

সারা দেশে প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো কৃত্রিম জলাভূমিতে পরিবর্তিত হয়ে মাছের ঘের বা ফিসারি হয়ে যাওয়ায় মাছের উপর নির্ভরকরে থাকা পাখিগুলোর অস্তিত্ব অনেকটাই আজ হুমকির সম্মুখিন বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক এই গবেষক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর