রক্তিম চোখের শিকারী পাখি ‘কালো ডানার চিল’

, ফিচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-08-31 23:58:15

চিল পাখিদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো ছোঁ মেরে শিকার ধরা। তার শিকার বুঝে উঠার আগেই চিল তাকে অতি দ্রুততায় পরাস্ত করে পুরোটাই গ্রাস করে ফেলে। এ যেনো শোষক আর শোষিতের খন্ড খন্ড কাহিনী।

দিগন্তের মাঝে হঠাৎ ছোঁ মেরে শিকার ধরার এখন দৃশ্য দারুণ মুগ্ধতার জন্ম দেয়। উড়ন্ত শিকারি-পাখিরা এই অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়েই নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে - জন্ম-জন্মান্তর ধরে।

নিরিহ প্রাণীটি বুঝে উঠার আগেই সে পুরোপুরি জব্দ হয়ে যায় শিকারীর তীক্ষ্ম নকের বন্ধনে। জীববৈচিত্র্য আর প্রকৃতিরাজ্যে এ শিকার কৌশল শত শতাব্দীর দুর্বলের প্রতি সবলের নিপুন অনুশীলন।

‘কালো ডানার চিল’ এক প্রকারের দারুণ শিকারী পাখি। এর ইংরেজি নাম Black-winged Kite এবং বৈজ্ঞানিক নাম Elanus caeruleus। এ পাখিটিকে ধলা চিল, ধান চিল, সাদা চিল, কাপাসি চিল, কাটুয়া চিল প্রভৃতি নামে উল্লেখ করা হয়।

barta24
বাঁশের খুটির উপর বসার আগমুহুর্ত। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, এসিপিট্রিডে পরিবারভূক্ত চিল প্রজাতির মাঝারি আকারের শিকারী পাখি। উন্মুক্ত তৃণভূমিতেই এদের অবস্থানজনিত কারণে এরা সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ইউরেশীয় এবং আফ্রিকান প্রজাতির সংমিশ্রণে কখনো কখনো অস্ট্রেলিয়ার কালো কাঁধওয়ালা চিল এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সাদা লেজওয়ালা চিলের ন্যায় বৃহৎ প্রজাতির চিলের সঙ্করায়ণ ঘটেছে।

তিনি আরো বলেন, ব্ল্যাক-উইন্ড কাইটদের আঙ্গুল খুব শক্তিশালী এবং এগুলো সাদা পালকে ঢাকা থাকে। গাছ, খুঁটি, বা বৈদ্যুতিক তারে বসে কিংবা বাতাসে উড়ে উড়ে এরা আহার খোজে এবং আঙ্গুলের শক্তিশালী লম্বা নক দিয়ে শিকার ধরে খায়। ব্ল্যাক-উইন্ড কাইট আবাদি জমি দিয়ে বিচ্ছিন্ন তৃণভূমি কিংবা ছড়িয়ে থাকা গাছ, নিচুভুমি, শুকনো ক্ষুদ্র ঝোপ অ মরুভূমির ক্ষুদ্র ঝোপে বিচরণ করে। এরা আমাদের দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি।

এদের আকার-আকৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এদের দৈর্ঘ্য ৩৫ সেমি এবং ওজন ১৬৪ গ্রাম। আকারে এরা কাকের ছোট। দেহ ধুসর। গলা, বুক ও পেট সাদাটে। কাঁধে রয়েছে বড় পট্টি। সুচালো ডানা এবং চঞ্চু কালো। এদের চোখ রক্তলাল। অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাখির পিঠ কিছু বাদামি-ধুসর এবং ডানায় রয়েছে অস্পষ্ট কালো পট্টি।

পাখিটির খাবার এবং প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে ইনাম আল হক বলেন, ঝিঁঝিঁ পোকা, পঙ্গপাল, ঘাস ফড়িং ও অন্য পোকা, টিকটিকি, ধান ক্ষেতের ইঁদুর, মুষিক, ব্যাঙ, সাপ, পাখির ছানা ও অসুস্থ পাখি রয়েছে এদের খাদ্য-তালিকায়। আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গাতেই এদের মাঝে মাঝে দেখা যায়। অফ্রিকা, আরবের দক্ষিণাঞ্চল, ভারত, চীন, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

ব্ল্যাক-উইন্ড কাইটদের সারাবছরই প্রজননকাল। ছোট গাছের পাতা, মূল ও ঘাস বিছিয়ে এবড়থেবড় মাচার বাসায় এরা ডিম পাড়ে। ৩টি থেকে ৬টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। পুরুষের তুলনায় স্ত্রী পাখিটি অত্যন্ত যত্নসহকারে বাসা তৈরি চেষ্টা চালায়। ফ্যাকাসে সাদা রঙের ডিমে ঘন লালচে রঙের ছিটে থাকে। ছেলেপাখি একা ছানার যত্ন নেয় বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর