বিশ্বে সংক্রমণ বৃদ্ধি, দেশে ‘রসাতলে’ স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব!

, ফিচার

কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 17:25:23

বাড়ছে করোনার বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ। কঠোর বিধি দেওয়া হয়েছে নানা দেশে। লকডাউনের চিন্তা করছে বহুদেশ। আর পক্ষান্তরে এমন ঘোরতর সঙ্কটের পদধ্বনির প্রাক্কালে বাংলাদেশে যেন দিনে দিনে রসাতলে যাচ্ছে স্বাস্থবিধি, সামাজিক দূরত্ব! মাস্ক গাল বেয়ে হাতে নেমে যেন বিদায় নিচ্ছে। সারা বিশ্বে করোনার নতুন ধরণ ধেয়ে আসছে আর বাংলাদেশে যেন বিদায় নিচ্ছে সতর্কতা, মাস্ক, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব। এ যেন এক উল্টা যাত্রা!

প্রসঙ্গত, চলমান করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। একইসঙ্গে আগের দিনের তুলনায় ব্যাপকভাবে বেড়েছে নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭ হাজারের বেশি মানুষ। একই সময়ে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭ লাখ ৪১ হাজার।

অথচ ঘোরতর করোনাকালে বাংলাভাষী মানুষকে রসাতল বা রসাতলে যাওয়া শব্দটির অর্থ নতুন করে অবহিত করার দরকার পড়ছে। যদিও সবাই শব্দটি আকছার শুনেন বা বলেন। কিছু হলেই বলতে থাকেন, সব রসাতলে গেলো। কিংবা বলেন, উমুকের মেয়ে, তমুকের ছেলে রসাতলে গেলো। এতো কিছু দেখলেও বৈশ্বিক মহামারি, বিশেষত ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্ত পরিস্থিতিতে স্বাস্থবিধি ও সামাজিক দূরত্ব যে রসাতলে চলে যাচ্ছে, সেটা কারো চোখে পড়ে না!

রসাতল মানে অধঃপাতে যাওয়া। অবনতির বা চরম অবগতির দিকে গেলেই সাধারণত এ ধরণের কথা বলা হয়ে থাকে। রসাতলে যাওয়া বলতে অর্থগত দিক থেকে রসের তলে পরে গেলো বা পানির তলে পরে গেলো। ডুবে গেলো। এই জাতীয় মারাত্মক কিছু। যা করোনাকালে সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি পালনের ক্ষেত্রে প্রায়- সর্বত্র দৃশ্যমান।

ঘরে, বাইরে, অফিসে, বাজারে, আচার-অনুষ্ঠানে, যানবাহনে, পাবলিক প্লেসে স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব কেউ মানছেন বলে দেখা যায় না। মাস্কের ব্যবহারই যেন উঠে গেছে। কারো কারো থুতনিতে নাম মাত্র ঝুলছে মাস্ক। ভিড়, ঠেলাঠেলি, গা মাখামাখিও চলছে সমান তালে।

যদিও পৃথিবীময় চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। বিশেষত করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট ওমিক্রনের আগ্রাসী দাপটে তটস্থ সারা বিশ্ব। অথচ এসব বিষয়ে কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই বাংলাদেশে! উল্লেখ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যদিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় এরপরই রয়েছে রাশিয়া, জার্মানি, পোল্যান্ড, ইউক্রেন ও ফ্রান্স। এতে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৭ কোটি ৬৫ লাখের ঘর। অন্যদিকে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৩ লাখ ৮৪ হাজার।

বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭ হাজার ৮১ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে দুই হাজারের বেশি। এতে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৩ লাখ ৮৪ হাজার ৫৮৭ জনে।

একই সময়ের মধ্যে ভাইরাসটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৪১ হাজার ৪৯০ জন। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় নতুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার। এতে মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ কোটি ৬৫ লাখ ৬২ হাজার ৪৭৭ জনে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই সময়ের মধ্যে দেশটিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮০ হাজার ৩৩৮ জন এবং মারা গেছেন ১ হাজার ৮১১ জন। করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫ কোটি ২২ লাখ ৫১ হাজার ২৭৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৮ লাখ ৩০ হাজার ৯৯০ জন মারা গেছেন।

অন্যদিকে দৈনিক প্রাণহানির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ২৭ জন এবং নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২৫ হাজার ৯০৭ জন। এছাড়া মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭১৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ২৪৯ জনের।

বিশ্বে করোনার নতুন বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশের মাস্ক ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি পালন, সামাজিক দূরত্ব মান্য করার জরুরি বিষয়গুলো বাস্তব ক্ষেত্রে আদৌ প্রতিপালিত হচ্ছে খুবই কম। একদিকে বিশ্বে যদিও বাড়ছে সংক্রমণ, তথাপি দেশে যেন রসাতলে যাচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব!

এ সম্পর্কিত আরও খবর