ইনানী সমুদ্র সৈকত আপনাকে টানবে বারবার!

, ফিচার

সুলতান মাহমুদ আরিফ | 2023-09-01 17:37:03

সেন্টমার্টিন থেকে রাতে এসে পৌঁছলাম কক্সবাজারের রামুতে অবস্থিত বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (বিওআরআই)। রাতেই শুনলাম সকালে যাওয়া হবে ইনানী সমুদ্র সৈকত। ইনানী নাকি এখান থেকে খুব কাছে। গুগলে সার্চ দিয়ে এর কয়েকটা দৃশ্য দেখার পর থেকে রাতটা কাটল যেমন-তেমন সকালেই দিলাম ছুট। বিওআরআই এর বাসে করে খুব সকালে ঠাণ্ডা আবহাওয়ার সাথে মিতালি গড়ে মনের সুখে যাত্রা দিলাম যেখানে প্রবাল পাথরের ছড়াছড়ি, সেই ইনানী সমুদ্র সৈকতে।

খুব ভোর হওয়াতে রাস্তায় মানুষের উপস্থিতিও ছিল খুব কম। সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ আর বাতাসের সাঁ সাঁ শব্দ তার আপন গতিতে এসে বাজনা যেন বাজিয়েই যাচ্ছে। ড্রাইভারের পাশে বসাতে বারবার জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আর কতটুক? ড্রাইভারের মুখেও আনন্দের হাসির রেখা, সেই রেখা ফুটিয়ে বলল এইতো সামনে। আমাদের যেন আগ্রহের আর শেষ হয় না। আমাদের টিম বাসে উঠেই গান শুরু করলেও কাছাকাছি আসার পর এখন আর বেসুরা গলায় সেই গানের আওয়াজ নেই! সবার চাহনী আর টান যেন ইনানীকে ঘিরে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বপ্নের প্রবাল পাথরের ছড়াছড়ি ইনানী বিচে পৌঁছলাম। এখানকার পরিবেশটা এমনিতেই কক্সবাজার থেকে একটু দূরে হওয়ায় তুলনামূলক নিরিবিলি। তার ওপর খুব সকালে যাওয়াতে আরও কম। এই যেন পুরো সমুদ্র সৈকত আমাদের দখলে। তবে ধীরে ধীরে সূর্যের লাল আভার উঁকি দেয়ার সাথে সাথে দেখা মিলছে মানুষ জনেরও।

এখানকার পরিবেশ আপনাকে বারবার টানবে।

এখানে দুই সময় মানুষ কম থাকে। ভোর বেলা আর বিকালের দিকে, তখন জোয়ার থাকে। উপরে নীল আকাশ আর মিষ্টি বাতাস এবং সমুদ্রে নিরিবিলি ঢেউ যেন প্রশান্ত করে দিচ্ছে মুহূর্তে পুরো মন আর দেহকে। আনন্দ করতে মন না চাইলেও এখানকার পরিবেশ যেন আপনাকে হাঁসাবেই, আনন্দ দিবেই। এই যেন অন্যরকম ভালো লাগা।

এখানকার পরিবেশ আপনাকে বারবার টানবে। এখানকার প্রবাল পাথর আপনাকে যেন বিদায় দিয়ে দিবে না, দিলেও আবার টানবে। এক একটা পাথরের রং একেক রকম, এই যেন পাল্লা দিয়ে সাজা আর প্রকৃতি তার মেকাপ। আপনার জন্যই যেন তাদের এত আয়োজন। ইনানী যেন তার নিজের ভাষায় জানান দেয় আপনার প্রতি ভালোবাসা আর মোহ।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ একশো বিশ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইনানী সৈকত। এখানে রয়েছে বিস্তীর্ণ প্রবাল পাথর। সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতের সাথে এর অনেকাংশেই মিল খুঁজে পাওয়া যায়।তবে চমৎকার নিরিবিলি এলাকা হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে এই বিচের।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত আর সেন্টমার্টিনের মত এখানে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে না সৈকতের বেলাভূমিতে। অনেকটাই শান্ত প্রকৃতির সৈকত এই ইনানী। জোয়ারের সময় এলে প্রবাল পাথরের দেখা পাওয়া যাবে না। ভাটার সময়েই কেবল মাত্র বিশাল এলাকা জুড়ে ভেসে উঠে এই পাথর। প্রবাল পাথরে লেগে থাকে ধারালো শামুক-ঝিনুক। তাই এখানে বেশী লাফালাফি করা বিপদজনক। ইনানী সৈকতের প্রধান আকর্ষণ প্রবাল পাথর।

প্রবালের উপর দাঁড়িয়ে সাগরের দৃশ্য দেখার মজাই আলাদা। সাগরের ঢেউগুলো প্রবালের গায়ে আঘাত লেগে পায়ের কাছে আছড়ে পরে। স্বচ্ছ জলের তলায় দেখা যায় বালুর স্তর। অনেকসময় হরেক রকম মাছের ছোটাছুটিও আপনি দেখবেন। বিস্তীর্ণ বালুকাবেলায় ছুটে বেড়ায় হাজার লাল কাঁকড়ার দল। যা আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে।

সাগর পাড়ে বালুর উপর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে শত শত বছরের পুরাতন পাথর। সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ে পাথরের উপর। সমুদ্রের ঢেউ যেন আপনার অজান্তেই দোলা দিয়ে যাবে আপনার অন্তরে।

ইনানী সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের একটি উপকূলভূমি। 

ইনানী সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের একটি উপকূলভূমি। এটি বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে। কক্সবাজার জেলার পর্যটন সেক্টরে উদীয়মান বাঘ হচ্ছে ইনানী। কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ইনানী সমুদ্র সৈকত। ইনানীর পশ্চিমে সমুদ্র আর পূর্বে পাহাড়ের এক অপূর্ব সংমিশ্রণে গঠিত জায়গাটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্ররূপে পরিগণিত হয়ে আসছে। মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে কক্সবাজার থেকে ইনানী যেতে হয়।

ইনানী সমুদ্র সৈকত যতটা সুন্দর আর হৃদয়কাড়া ঠিক ততটাই ভালো লাগা কাজ করবে আপনি যখন কক্সবাজার হতে এর যাত্রা করবেন। একদিকে মেরিন ড্রাইভিং আরেকদিকে সাগর আর পাহাড়, ঝর্ণার এক অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্য। এমন দৃশ্য আপনাকে মোটেও ঘুমাতে দেয়ার কথা না, একঘেঁয়েমি দূরে ঠেলে দেয়ার মত পরিবেশের ভিতরে দিয়েই আপনার গমন হবে। উঁচু সেতু পার হয়ে যখন হিমছড়ির পথ ধরবেন মনে হবে নতুন এক পৃথিবীতে যাচ্ছেন আপনি। যাতে আছে পাহাড়, সাগর আর পাখির হরেক রকম কিছিরমিছির ডাক। যা নিমিষেই আপনাকে দিবে প্রশান্তি।

বলা চলে স্রষ্টা যেন নিজ হাতেই ঢেলে সাজিয়েছেন ইনানীকে। এমন অসাধারণ দৃশ্য দেখার জন্য ছুটে যান, যাবেন, তবে দেখবেন আবার যাবেন, বারবার যাবেন। এই যেন অন্যরকম টান, প্রকৃতির টান, সমুদ্রের প্রতি ভালোবাসা আর পাহাড়, পাখি এবং প্রবালের সাথে প্রেম। সুতরাং জোয়ার-ভাটার হিসেব কষে, রসে ভরা ইনানী হোক আপনার সুখময় ভ্রমণ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর