ঘাসবনের উপর নির্ভরশীল হলদেচোখ-ছাতারে

, ফিচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-09-01 03:53:30

জলাভূমির পাশেই প্রকৃতিগতভাবে জন্মায় নানান ঝোপঝাড়। কোনোটা ঘন। কোনোটা হালকা, মৃদু। এমন জঙ্গলময় পরিবেশেই বাস করে কিছু বিশেষ প্রজাতির পাখি। যারা এই ঝোপঝাড়কে আশ্রয় করেই তাদের জীবনপ্রক্রিয়া নির্বাহ করে থাকে। ব্যাপারটা এমন যে, এই ঝোপঝাই তাদের একমাত্র পরম আশ্রয়স্থল। 

ঝোপঝাড়ময় নলখাগড়ার বিস্তীর্ণ নির্জন প্রান্তর। মানুষের কোনো প্রকার সাড়াশব্দ নেই। মাঝে মাঝে দুই-একটি পাখির শিস দূর থেকে ভেসে আসে। উড়ে আসে তৃণভূমির পাখিরা। এরা তৃণভূমির উপর আপন ঘুরে বেড়ানো পাখি।

এ পাখিগুলো ছোট ঘাস জাতীয় তৃণভূমির কীটপতঙ্গ ঠোঁটে গুজে রসনার ভোজ সারে। বাংলায় এই সুন্দর পাখিটির নাম ‘হলদেচোখ-ছাতারে’ এবং ইংরেজি নাম Yellow-eyed Babbler। চোখের চারপাশে বৃত্তাকারে কমলা-হলদে রঙের চমৎকার সৌন্দর্য রয়েছে।

পাখি পর্যবেক্ষক ও গবেষক নাজিম উদ্দিন প্রিন্স বলেন, ‘ইয়েলো-আইড বেবলার’ পাখিটি আমাদের দেশেরই পাখি। তবে এরা বিরল আবাসিক পাখি। সবসময় তাদের দেখা পাওয়া যায় না। এরা মূলত ঘাসবনের বিরল পাখি। আমাদের দেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের কিছু এলাকা এবং উত্তরাঞ্চল অর্থাৎ পঞ্চগড়, তেতুলিয়া, ঠাকুরগাঁওয়ে এই পাখিটির বিস্তৃতি রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, যে পাখিগুলো সম্পর্কে কম আমরা জানি তাদেরকে ইংরেজিতে আমরা বলি ‘লিটল নোওন পিসেস’। এই লিটল নোওন পিসেস পাখিগুলো সম্পর্কে কোনো তথ্য অর্থাৎ এর কি পরিমাণে আছে, আগে থেকে তাদের সংখ্যা বেড়েছে, নাকি কমেছে প্রভৃতি তথ্যগুলো নির্ভুলভাবে পাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ এর উপর তো আমাদের কোনো স্টাডি (গবেষণা) হয়নি।

বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, ‘মাত্র ১৮ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮ দশমিক ৩ গ্রাম ওজনের এই পাখিগুলো মূলত ঘাসবনের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল পাখি। ঘাসবন ছাড়া এরা কিন্তু গাছের ডালে থাকে না। খাবার সংগ্রহে বড় ঘাস বা নলখাগড়ার ঝোপে ঘুরে বেড়ায়। আমাদের দেশে বড় প্রজাতির ঘাস যেটুকু আছে তাও মানুষ কেটে-কুটে নিয়ে যায়। ফলে এই ঘাসগুলো বিলুপ্ত হবার পাশাপাশি এই পাখিগুলোর জীবন এখন অনেকটাই ঝুকিপূর্ণ।’

পরিবেশ বিপর্যয় এবং আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে আমাদের দেশের প্রায় সব পাখিই মারাত্মক হুমকির সম্মুখিন বলে জানান বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের পাখি পর্যবেক্ষক নাজিম উদ্দিন প্রিন্স।

এ সম্পর্কিত আরও খবর