দিল্লিতে খুব সাধারণ জায়গাতেও অত্যন্ত সুস্বাদু কাবাব মেলে!

, ফিচার

সম্প্রীতি চক্রবর্তী | 2023-08-30 22:20:35

'ইতিহাসের ছাত্রী আর দিল্লি যাওনি?'

এমন কথা অনেকবার শুনতে হয়েছে। স্কুলে থাকাকালীন যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আর কিছু না ইতিহাস নিয়েই পড়বো, দিল্লি ভ্রমণের ইচ্ছা তখন থেকেই প্রবল। গ্রাজুয়েশন, মাস্টারস পেরিয়ে অবশেষে পিএইচডি গবেষণায় রত হয়ে সুযোগ পাওয়া গেলো। কয়েকটি পর্বে ভারতের 'গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল' (দিল্লি -আগ্রা-জয়পুর)-এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত, এক ইতিহাসপ্রেমীর কলমে। তবে ঐতিহাসিক তথ্যের থেকেও এটি ট্র্যাভেলগ হিসেবে গণ্য করা ভালো। ভ্রমণের পথে ব্যক্তিগত অনুভূতি, মতামত ও অভিজ্ঞতা উদ্ভাসিত হয়েছে।

আসলে, মানুষ যত বয়সে বাড়ে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষাও বৃদ্ধি পায়। যাদবপুরে যখন ভর্তি হলাম তখন হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো অবস্থা, তারপর আসতে আসতে দিল্লি নামের একটা শহর, যা শুধু ভারতের রাজধানী নামেই পরিচিত ছিল, বুঝলাম সেটা 'অ্যাকাডেমিক ক্যাপিটাল'ও বটে। অর্থাৎ ভারতের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা ওখানে পড়তে যায়। মানে আমি যাকে চাঁদ ভাবি, তার উপরেও গ্রহ নক্ষত্র জ্বলজ্বল করছে, আমিই জানতাম না। তখন থেকেই দিল্লি যাওয়ার খুব শখ। পূরণ হল এই বুড়ো বয়সে এসে।

গত সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখ অবশেষে রাজধানী দিল্লি  গিয়ে পৌছলাম। পৌঁছে যেটা সবার আগে অনুভব করতে হলো, সেটা 'তিরিক্ষি মেজাজ'। আমার না, বাতাসের। হুল ফোটাচ্ছে রীতিমতো, যেন তপ্ত বালির ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছি। চারিদিকে বড় বড় গাছ, ভীষণ রোদে সেগুলোকে আর যাই হোক, শ্যামলা বলা চলেনা। এয়ারপোর্টে নেমে আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে গন্তব্যে, আর জানলা দিয়ে আমি বুঝতে চেষ্টা করছি হাজার বছরের পুরোনো শহরটাকে।

বন্ধুর বাড়িতে উঠবো। স্নান সেরে গরম লুচি আর চানা মিললো। দিল্লি হলেও তার বাড়িতে বাঙালি রান্নাই হয়। খেয়ে একটু ঘুম দিয়ে বিকেলে উঠলাম। আজ আর দেখার কিছু নেই। কারণ যত স্মৃতিস্তম্ভ, মিনার সবই বিকেল হলেই বন্ধ।

অগত্যা দিল্লির খাবার চেখে দেখার সিদ্ধান্তে এলাম। ওটা তো আর সূর্যাস্তের সাথে বন্ধ হয়না। একটা ছিমছাম দোকান পাওয়া গেলো। বিকেল হলেও গরম অনুভুত হচ্ছে এবং এসি থাকা সত্ত্বেও তারা পাখা চালিয়েছে। দিল্লির লোকেদের এই এক ব্যাপার বেশ ভালো লাগলো। গরমটা ওদের এতোই গা সওয়া যে, এসি থাকলেও চালায় না। চাদি-ফাটা রোদেও ছাতার হদিস মেলেনা। লজ্জায় আমিও তাই ছাতা খুলিনি। বিশাল রাস্তায় আমি একাই ছাতা নিয়ে হাটছি, বিশ্রী ব্যাপার।

দোকানে ঢুকে চিকেন আফগানি অর্ডার করলাম। কি যে অপূর্ব অভিজ্ঞতা বলার নয়। এক ধরনের মালাই দিয়েছে কাবাবের ওপর, কাঠ কয়লায় পুড়িয়ে সেঁকা। চারকোলের গন্ধ আর তার সাথে মালাই, সবুজ চাটনি, পেঁয়াজ।

আমি কলকাতার খুব নামী রেস্তোরাঁতেও এমন কাবাব খাই নি। দিল্লিতে মনে হয় খুব সাধারণ জায়গাতেও অত্যন্ত সুস্বাদু কাবাব পাওয়া যায়। এরপর বন্ধুর পরামর্শে  দিল্লির চম্পা গলি নামের একটি জায়গায় গেলাম। কলকাতার হিন্দুস্থান পার্ক-এর মতো। মিলেনিয়ালদের ক্যাফের ঠেক। কোনোটাতে বই দিয়ে সাজানো আবার কোনোটা বোহেমিয়ান স্টাইল।

রাত হয়ে আসছে।  পরের দিন তাড়াতাড়ি বেরিয়ে অনেক কিছু দেখে ফেলতে হবে। তার আগে একটু বিশ্রাম দরকার। দুপুরে অল্প ঘুম হলেও সারা রাত জেগে প্লেনে এসেছি। সেই ঘাটতি মিটিয়ে শীঘ্রই  নতুন দিনের যাত্রা শুরু করতে হবে।

সম্প্রীতি চক্রবর্তী, পিএইচডি গবেষক (ইতিহাস), যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর