সৈকতের পরিযায়ী মেটেমাথা-টিটি

, ফিচার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট | 2023-09-01 19:27:38

শীত প্রায় এসেই গেছে। প্রকৃতিতে এখন কুয়াশার চাদর। মৃদু শীতের এমন মিষ্টি আমেজ নিয়ে এসেছে হেমন্ত ঋতু। ঋতুচক্রে প্রথমই শীতের বার্তা নিয়ে আসে এই হেমন্ত। প্রকৃতি যেন আরো অপরূপ হয়ে উঠে। বিশেষত সকালে ঘাসে ঘাসে কিংবা গাছের পাতায় পাতায় কুয়াশার আবরণ।

এমন দারুণ সময়েই পরিযায়ী পাখিদের ডানামেলার কথা। এ সময় তারা এক স্থান থেকে অন্যস্থানে, এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে কিছু দিনের অতিথি হয়ে যায়। এমন শীতের পরিবেশের মাঝে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাভূমিতে আসতে শুরু করেছে নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখিরা। তার মাঝে জলাভূমি সংলগ্ন সৈকত পাখি ‘মেটেমাথা-টিটি’ অন্যতম।

বাইক্কাবিলের জলাশয় আর ডাঙায় ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায় তাদের। জলজ উদ্ভিদের কচি পাতা, জলচর পোকা ধরে ধরে খেতে পটু চঞ্চল স্বভাবের এই পরিযায়ী। মানুষের উপস্থিতি বা বিপদসংকেত পেলেই উড়ে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ছুঁয়ে যায়। এই ‘মেটেমাথা-টিটি’কে ‘ধূসর টিটি’ হিসেবেও ডাকা হয়। জলাভূমি সংলগ্ন হালকা কাঁদায় নেমে, আনন্দের খাবারের সন্ধানে এদিক-ওদিক হাঁটা তাদের চারিচিক বৈশিষ্ট্য।

প্রখ্যাত পাখি গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, এ পাখিটির ইংরেজি নাম Grey-headed Lapwing এবং বৈজ্ঞানিক নাম Vanellus cinereus। আমরা বাংলায় এর নাম দিয়েছি মেটেমাথা টিটি। এরা মাঝারি আকারের সৈকত পাখি। এরা দলবেঁধে চলে এবং শোরগোল করে। এক কথায় বলতে গেলে, এরা হলুদ পায়ের বাদামি জলচর পাখি।

জলাভূমির আসেপাশে মেটেমাথা-টিটিদের পাওয়া যায়/ ছবি: সুলতান আহমেদ


 

পাখিটির শারীরিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন, একেকটি পাখি আকারে ৩৭ সেন্টিমিটার এবং ২৮৪ গ্রাম হয়ে থাকে। এর পা লম্বা এবং হলুদ রঙের। মাথা ধূসর। গলা এবং পিঠ বাদামি। চোখ লাল রঙের। এদের ঠোঁট ছোট। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের দিক বাদামি। দেহের নিচের দিকের কিছু অংশ সাদা। মাথা, ঘাড়, গলা ও বুকের উপরের অংশ ধূসর। ছেলে এবং মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন।

এদের স্বভাব এবং খাদ্য তালিকা সম্পর্কে এই পাখি-গবেষক বলেন, মেটেমাথা টিটি পতিত জমি, ধানখেত, স্যাঁতসেঁতে চারণভূমি ও শস্যক্ষেতে ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করে বেড়ায়। সচরাচর ৫টি থেকে ৫০টি পাখির ঝাঁকে থাকে। তৃণভূমি, শস্যক্ষেত ও বাদায় হেঁটে ঠোকর দিয়ে এরা খাবার সংগ্রহ করে। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে পোকা, কেঁচো ও শামুক-জাতীয় প্রাণী।

এই পাখিটিকে শীতকালে আমাদের দেশের জলাভূমিতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ এশিয়ায় এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে বলে জানান ইনাম আল হক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর