ভেবেছিলাম পহেলা বৈশাখের র‌্যালি, পরে বুঝেছি নির্বাচনী প্রচারণা: ফেরদৌস

সিনেমা, বিনোদন

বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-29 05:16:55

চিত্রনায়ক ফেরদৌস কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তার পরিবারও পাড়ি দিচ্ছে দুঃসময়। একটি ভুলে দুই বাংলার জনপ্রিয় এই তারকার নাম ঢুকে গেছে ভারতের কালো তালিকায়। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে তৃণমূল কংগ্রেসের একজন প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন তিনি। এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় বিজেপি। কিন্তু কী ঘটেছিলো সেদিন? সেদিনের ঘটনা ও পরের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের সংবাদ সংস্থা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ফেরদৌস। বার্তা২৪.কম-এর পাঠকদের জন্য ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটির বাংলা সংস্করণ রইলো এখানে।

রায়গঞ্জে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচারণায় কিভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন?
ফেরদৌস: আমি কখনও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচারণার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। আমার চেনা একজন প্রযোজক রায়গঞ্জে থাকেন। তিনি যখনই ঢাকায় আসেন, আমরা সবসময় দেখা-সাক্ষাৎ করি। আমিও পশ্চিমবঙ্গে গেলে তার সঙ্গে দেখা করি। আমাদের সম্পর্ক বন্ধুর মতো। বছর তিনেক আগে তার প্রযোজিত ‘ছেড়ে যাস নে’ ছবিতে অভিনয় করেছিলাম। ছবিটির ডিজিটাল স্বত্ব নিয়ে আলোচনা করতেই এবার গিয়েছিলাম। আমরা একটি নতুন ছবির পরিকল্পনাও করেছি। সেদিন ছিলো ১৪ এপ্রিল। আমার কয়েকজন সহকর্মী এসে বললেন, পহেলা বৈশাখের একটি র‌্যালি হবে যাবে নাকি। অঙ্কুশ আর পায়েল সরকারও থাকবে। আমি বললাম- চলো যাই, মজা হবে। বাংলাদেশে বৈশাখ অনেক বড় পরিসরে উদযাপন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে দিনটিতে কেমন আমেজ থাকে তা জানার আগ্রহ থেকে সেখানে গিয়েছিলাম। এটি পূর্বনির্ধারিত কিংবা কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্যের প্রদর্শনী ছিল না। আমি সব রাজনৈতিক দল, নেতা ও ভারতের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

বিষয়টি সম্পর্কে আপনি কখন জানতে পারলেন?
ফেরদৌস: সমাবেশ করে আমার প্রযোজক বন্ধুর বাড়িতে নৈশভোজ করেছি। এরপরই একের পর এক বার্তা পেতে শুরু করি আমি। এরপর বুঝতে পারি কী ঘটেছে।

আপনি কি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী কানহাইয়ালাল আগারওয়ালকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন?
ফেরদৌস: না, আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। এখনকার মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব সক্রিয়, তাই র‌্যালিতে আমার ছবিগুলো মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনার পরদিন কলকাতায় যাই ও সেখান থেকে ঢাকায় ফিরে আসি। কারণ কলকাতায় পৌঁছানোর পরই বুঝতে পারি বিষয়টি খুব জটিল আকার ধারণ করেছে।

একজন শিল্পী হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত হওয়া ও বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশনা কতোটা কঠিন ছিল?
ফেরদৌস: ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওপার বাংলায় কাজ করে যাচ্ছি। ১৯৯৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবিতে অভিনয়ের পর দুই বাংলায় নিয়মিত কাজ করে আসছি। ওপার বাংলায় আমার অনেক ভালো বন্ধু আছে। বেশকিছু উৎসবেও অংশ নিয়েছি। কিন্তু কখনও নিজেকে বিদেশি হিসেবে বিবেচনা করিনি। ভারত আমার সেকেন্ড হোম। বলার অপেক্ষা রাখে না, যে ভিসায় ভারতে আসি তার কয়েকটি শর্ত আমাকে পালন করতে হবে। আমার বোকামির কারণে এই বিতর্কের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। একজন বাংলাদেশি হিসেবে সব ভিসার শর্ত আমার জানা থাকতে হবে।

বাড়ি ফেরার পরের অনুভূতি কী?
ফেরদৌস: আগেই উল্লেখ করেছি, দর্শক ও ভক্তদের প্রতি আমার ভালোবাসা অবিরাম। তাদের জন্য এই আবেগ ধরে রাখতে চাই। বুঝতে পেরেছি, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচারণায় অংশ নেওয়া আমার অনেক বড় একটি ভুল ছিলো। বাংলাদেশি হয়ে আরেক জাতির নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের মনে আঘাত লেগেছে। এটি আমার ভুল ছিলো। আমি এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আমার কারণে দুই দেশের সম্পর্কে কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা চাই না। ‘কালো তালিকাভুক্ত’ হয়েছি, এটি আমার কাজের শাস্তি হিসেবে দেখছি। আমি মনে করি, সময়ের সঙ্গে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

কলকাতায় আপনার অসমাপ্ত কাজগুলোর কী হবে?
ফেরদৌস: সন্তানদের সময় দিতে কয়েক বছর ধরে ওপার বাংলার চলচ্চিত্রে কাজ কম করছি। ‘সাধের জোনাকি’ ও ‘তুই যদি আমার হতিস’ মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এছাড়া ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের বিপরীতে ‘দত্ত’র শুটিং করছি। আমার কারণে একজন প্রযোজক কোনও পরিস্থিতিতে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তা নিশ্চয়ই আমি চাই না। এরই মধ্যে ক্ষমা চেয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছি গণমাধ্যমে। চলচ্চিত্রে এতোটা বছর নিজেকে নিবেদিত রেখেছি, আশা করছি সবাই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন।

টলিউড থেকে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
ফেরদৌস: গত কয়েকদিন ধরে খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কারও সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। আমার বন্ধু ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ও রচনা ব্যানার্জি এই ঘটনায় হতাশ হয়েছে জানি। র‌্যালির একদিন আগেও ঋতুর সঙ্গে ‘দত্ত’র শুটিং করেছি। এমনকি র‌্যালিতে আমার সঙ্গে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন তারাও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তবে তারা সবসময় আমার সঙ্গে ছিলেন।

বাংলাদেশ থেকে তো অনেক ফোন কল পেয়েছেন?
ফেরদৌস: হ্যাঁ। আমার পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা অনেকেই আমাকে ফোন করেছেন। এতোটা সময় ধরে কাজ করছি, কখনও কোনো বিতর্কে জড়াইনি। ওপার বাংলায় গিয়ে শুটিং করেছি, ছবি দেখেছি, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে আবারও ফিরে এসেছি। আমার যারা চেনেন তারা জানেন, কখনও কাউকে কষ্ট দিয়ে কিছু করিনি। আমার মা, ভাই-বোন, স্ত্রী ও সন্তানেরা এখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি, সময়ের সঙ্গে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমার এমন কর্মের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আশা করছি, সবাই আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর