গানের মায়াবী পাখি

সিনেমা, বিনোদন

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 12:39:50

তখন এতো যন্ত্র, কম্পিউটার ইফেক্ট ছিল না। শিল্পীকে কণ্ঠের মাধুর্য দিয়ে স্বকীয়তা প্রমাণ করতে হতো। ষাট, সত্তর, আশির দশকের সেই সময়ে মাহমুদুন্নবী, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, খুরশিদ আলম, আর্জুমান্দ আরা বেগম, ফেরদৌসি বেগম ছিলেন রেডিও, টিভিতে একচেটিয়া। এই ঘরানার ব্যতিক্রমী ও তরুণ প্রতিনিধি রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন শাহনাজ রহমতউল্লাহ।

শিল্পীদের মধ্যে নজরুল, রবীন্দ্র, আধুনিক বলে একটা বিভাজন ছিল। যারা রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল ইসলামের গান করতেন, তারা সাধারণত আধুনিক গান গাইতেন না। আধুনিক গানের শিল্পীরা রেডিও, টিভি, চলচ্চিত্রে রকমারি গানে ব্যস্ত থাকতেন। শাহনাজ ছিলেন নানা মেজাজের আধুনিক ও জনপ্রিয় গানের শিল্পী।

সিডি, ডিভিডি, ইউটিউবের যুগ আসার আগে স্বাধীনতা পূর্ব ও পরবর্তী কালের বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গন শ্রুতিমধুর হয়েছে এইসব শিল্পীদের কণ্ঠলালিত্যে। এই শিল্পীদের টিকে থাকতে হয়েছে নিজস্ব শক্তি ও স্বকীয়তায়। তাদেরকে একই সঙ্গে লড়তে হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানি শিল্পী এবং ভারতীয় শিল্পীদের সঙ্গে। বাংলাদেশের গানের শ্রোতাদের ধরে রাখার ক্ষেত্রে আধুনিক গানের এইসব অগ্রণী শিল্পীদের অবদান অনস্বীকার্য।

শাহনাজ রহমতউল্লাহ এই ঘরানার অন্যতম শিল্পী। মায়াবী ও সুরেলা কণ্ঠে তিনি গান গেয়েছেন নিজস্ব ঢঙে। দিনে দিনে নির্মাণ করেছেন আলাদা স্টাইল, যা অন্য কারো মতো ছিল না, সম্পূর্ণভাবে ছিল শাহনাজিয়।

কয়েকটি গান শাহনাজের কণ্ঠে ঐতিহাসিক মর্যাদা ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কোনও গান রাজনৈতিক কারণে বিতর্কিত হয়েছে। কিন্তু তথাপি বাংলাদেশের দেশাত্মবোধক গানের জগতে তিনি অগ্রণী হয়ে থাকবেন।

'এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে, এবার বল’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ সহ বহু জনপ্রিয় দেশের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। শাহনাজ রহমতউল্লাহর মতো এতো দরদ দিয়ে গানগুলো অন্য কারো পক্ষে গাওয়া হয়তো সম্ভব হতো না।

১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণকারী শিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহ পরলোকগমন করেছেন ৬৭ বছর বয়সে। জীবনব্যাপী তিনি নিরত ছিলেন সঙ্গীতের সাধনায়। মৃত্যুর পরেও তার সঙ্গীত বাংলাদেশের শ্রোতাদের আকুল করবে আরও বহু বহু বছর। তার প্রতি শ্রদ্ধা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর