আরিফিন শুভ, ঋতুপর্ণার ছবি ‘আহা রে’-তে জমল না রান্না

সিনেমা, বিনোদন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 20:34:30

ছেলেটি শেফ। ঢাকা থেকে কলকাতায় চলে আসে ব্যক্তিগত কারণে। মেয়েটি সারাদিন রান্না করে। মেয়েটিরও প্রায় একই হাল। অপূর্ণ স্বপ্নকে বাস্তব করতে সে লড়ে যাচ্ছে। ছেলেটি পাঁচতারা হোটেলে কাজ করে। মেয়েটির ব্যবসা ক্যাটারিং-এর। তবে দুজনেরই হাতিয়ার এক, রান্না! হাতিয়ার এক হলেও সামাজিক অবস্থানে তারা দুই মেরুর বাসিন্দা। ছেলেটি ফারহাজ চৌধুরী, বাংলাদেশের বিত্তবান মুসলিম পরিবারের সন্তান। স্ত্রী শাহিদা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে প্যারিসে। কোনো যোগাযোগ নেই ফারহাজের সাথে। মেয়েটি বসুন্ধরা, কলকাতার মধ্যবিত্ত হিন্দু। বসুন্ধরা, ফারহাজের চেয়ে বয়সে বড় এবং জামাইহীনা। তবু নিয়তি তাদের কাছাকাছি নিয়ে এল। এক্ষেত্রে নিয়তি আসলে রান্না অর্থাৎ মালাইকারি, শুক্তো, তেহরি, মোরগ পোলাও। গল্প এ পর্যন্তই থাক। এবার আসা যাক ছবির অন্য প্রসঙ্গে।

বসুন্ধরার চরিত্রে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর তুলনা নেই। প্রায় মেকআপবিহীন ঋতুপর্ণা প্রমাণ করে দিলেন, এই মুহূর্তে টলিউডে তাঁর উচ্চতায় কম অভিনেত্রীই আছে। ছবিতে তাঁর সংলাপ কম। প্রায় নীরব উপস্থিতিতেই তিনি বসুন্ধরাকে তুলে ধরেছেন। আরিফিন শুভ, খুবই স্বচ্ছন্দ্য ফারহাজের ভূমিকায়। ঋতুপর্ণার মত বড় অভিনেত্রীর বিপরীতে নিজের যোগ্যতাকে যথেষ্ট তুলে ধরে কাজ করেছেন। অপরদিকে ‘আহা রে’ ছবির মস্ত পিলার পরান বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থাৎ বসুন্ধরার শ্বশুর। এই অস্থির পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও তিনি নির্দ্বিধায় বলতে পারেন, ধর্ম সৃষ্টিকর্তার বানানো নয়, ধর্ম মানুষের তৈরি। বয়স, পুত্রশোক, আর্থিক অভাব কিছুই তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারে না। তাই তিনি এই বয়সে ম্যাজিকও শেখেন। আপাত কঠোর, স্নেহশীল বৃদ্ধের চরিত্রে পরান ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনাও করা যায় না। এছাড়া কয়েকটি ছোট চরিত্রে দীপঙ্কর দে, শকুন্তলা বড়ুয়া, অমৃতা চট্টোপাধ্যায় মানান সই অভিনয় করেছেন।

অভিনেতারা যতই রান্নার চেষ্টা করুক, ‘আহা রে’ কিন্তু স্বাদ মেটাতে পারল না দর্শকদের। প্রথমত, চিত্রনাট্য বড্ড ধীরগতির এবং মাঝে মাঝেই কন্টিনিউটি হারিয়েছে। যেমন, শাহিদা প্যারিস চলে যাওয়ার পর কোনো যোগাযোগ না রেখেই জেনে গেল ফারহাজের কলকাতার ঠিকানা। আবার ফারহাজের মতো তরুণ প্রজন্ম মায়ের দ্বিতীয় স্বামীকে কেবল মায়ের ‘দ্বিতীয় স্বামী’ বলেই তীব্র ঘৃণা করার বিষয়টিও হাস্যকর। সেই সঙ্গে অন্তত বার পাঁচেক কলকাতার কয়েকটি আকাশচুম্বী বিল্ডিংকে দেখানোর মানে কি বোঝা গেল না। আর শেফ বলেই ফারহাজকে প্রায় প্রতিটি দৃশ্যেই কিছু না খেতে দেখানোর কি খুব দরকার ছিল? ছবির শেষে হঠাৎ করে আজগুবি ম্যাজিকের কেরামতি আমদানি করে ছবিটিকে হাস্যকর এবং অযথা দীর্ঘ করে তোলা হোলো। ‘আহা রে’-র স্বাদ বিস্বাদ হয়ে গেল কেবল মাত্র পরিচালকের মরিচ-লবন দেওয়ার পারদর্শিতার অভাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর