খালিদের অকালপ্রয়াণে শিল্পীদের যত্নবান হওয়ার পরামর্শ ফাহমিদার

সুরতাল, বিনোদন

মাসিদ রণ, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2024-03-19 19:08:40

একাধিক কালজয়ী গানের গায়ক খালিদের অকাল প্রয়াণ অনেকেই মানতে পারছেন না। সংগীতাঙ্গনে সাদি মহম্মদের স্বেচ্ছামৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই খালিদের চলে যাওয়ায় শিল্পীরা নতুন করে ভাবছেন জীবনকে নিয়ে।

জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী আজ তার সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্যাটাসে তেমনি এক পরামর্শ দিলেন শিল্পীসমাজকে।

ফাহমিদা লিখেছেন, ‘খালিদের অকালে যাওয়া খুব কঠিন করে দিলো আমাদের সবাইকে। মানে আমাদের শিল্পীদেরকে। জীবনের প্রতি উদাসীনতা কেউ রাখবেন না, ছোট-বড় সব শিল্পীকে বলছি। নিজেকে ভালোবাসুন। আমাদেরকে আমাদেরই দেখতে হবে। অবমূল্যায়ণ কথাটা ভুলে যাও। মূল্যায়ন আর হবে না। নিজেকে সে বিষয়ে প্রস্তুত করে ফেলো।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘সত্যি বলতে কি, গান এখন হয় না! তাই জীবন নিয়ে অন্য কিছু ভাবুন। যেটুকু কাজ হয়েছে তা নিয়ে যথেস্ট মনে করে অন্যকিছু ভাবুন। হতাশাগ্রস্ত হবেন না। গানের জন্য ভালোবাসা, ভাবনা, সুর, কথার গভীরতা লাগে। যা এখন কর্পোরেট কালচার! সেখানে গান হয় না, হয় মার্কেটিং! সেটাকে গান বলা যায় না! তাই সোনালী রূপালী দিনের গান নিয়ে শ্রোতাও বেঁচে থাকবে আমাদের মতোই। বর্তমানে তাম্র সময়ের গান! অস্থিরতায় আর যাই হোক গান হবে না!’

সহপাঠীদের সঙ্গে ফাহমিদা নবী ও খালিদ যথাক্রমে (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে ৩য় এবং ২য় সারিতে প্রথম)

সাদি মহম্মদ আর খালিদের পর পর চলে যাওয়ায় ফাহমিদা বুঝতে পেরেছেন, ‘শ্রোতা যে আসনে কাওকে বসায়, তার জন্য বহুদিন কাজ করতে হবে না। একটা ভালো গানই হয়তো যথেষ্ট মনে রাখার জন্য, ভালোবাসার জন্য। হৃদয়ে আসন তৈরী করবার জন্য। আমাদের প্রত্যেক শিল্পীকে ভালো থাকতে হবে। তার নিজের জন্য, সমাজের জন্য, পরিবারের জন্য। আমাকে আমারই দেখতে হবে। অভিমান-অভিযোগ কোন কাজে আসে না। মনে রাখতে হবে, আমাদের কষ্ট আছে কিন্তু পাশাপাশি অনুসরনীয় হয়ে বাচঁতে হবে। কঠিন কাজ তবু তা করতে হবে। আমাদেরকে দেখে অনেক কিছু শেখে অনেকেই। তাই সাহসী এবং সুস্থ হয়ে চলতে হবে যতদিন আয়ু। শিল্পী তার গানে বেঁচে থাকে শ্রোতার হৃদয়ে।’

খালিদের মৃত্যুতে একটু বেশিই শোকাহত ফাহমিদা। কারন খালিদ শুধু তার সহকর্মীই ছিলেন না। তার সহপাঠীও বটে। সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ফাহমিদা লিখেছেন, ‘খালিদ গান গাইতো সরলভাবে। জীবনের সরলতার আদলে। প্রানবন্ত থাকত, চাইত হাসতে। একদম স্পষ্ট করে বলতে পারি, জনপ্রিয় হবার জন্য কোনদিনও প্রকৃত শিল্পীরা গান গায় না। খালিদও তাই ছিল, ওর শুধু ভালো গানের কথা ও সুরের প্রতি প্রেম ছিল। যে কারণে তরুনরা, সরলতার প্রতিমা গানের মতো গানে ডুবে যায় বারবার।’

অকালপ্রায়াত শিল্পী খালিদ ও তার স্ত্রী-পুত্র

ফাহমিদা আরও লেখেন, ‘‘আমার আর খালেদের বেশ কয়েকটা ডুয়েট গান হয়েছে। ‘নিছক স্বপ্ন’ অ্যালবামে তানভীর তারেকের কথা ও সুরে। প্রিন্স মাহমুদের কথা সুরে ‘ঘুমাও’ গানটা তো অনেকের প্রিয় একটি গান। খালিদ বলতো, নুমা তুমি কিন্তু বেশী ভালো গেয়েছো গানটা! এখনো মনে পড়ে সে কথা। আমরা একসাথে দর্শন বিভাগে পড়াশোনা করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই সূত্রে খালিদ সহশিল্পী এবং বন্ধু। আমি ওর মধ্যে কোন অহংকার দেখিনি কোনদিনই। এই তো সেদিনই কথা হলো আরো ডুয়েট গান করতে চায়। বললাম করবো। আমেরিকায় ওর ছেলের গান শুনেছি বলে খুশী হলো। দেখা হবে সে কথাও হলো। খালিদের বউ শামিমা আর একমাত্র সন্তানের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। বন্ধু খালিদ ভালো থেকো ওপারে। আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে সময় মতো। তোমার আত্মার শান্তি কামনা করছি। আল্লাহ তোমাকে জান্নাত দান করুন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর