কেউ গ্রহণ করে, কেউ বর্জন করে বিখ্যাত!

বলিউড, বিনোদন

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 20:13:00

পার্থক্য শুধু বিশ্বাসের। একজন বিশ্বাস করেছিলেন তাকে খ্যাতি পাওয়ার জন্য নাম পরিবর্তন করতে হবে। এজন্য তিনি তার পারিবারিক নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম গ্রহণ করেন দিলীপ কুমার। এরপর তিনি দেখেছিলেন সাফল্যের মুখ। তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

অপরজন বিশ্বাস করে তার পারিবারিক দিলীপ কুমার নামটি পরিবর্তন করেন। এক সময় তিনি বিশ্ব বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক হয়ে উঠলেন। জয় করলেন অস্কারসহ নানা পুরস্কার। তিনি ভারতীয় ইতিহাসের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমান।

দিলীপ কুমার:

১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর পাকিস্তানের খাইবারের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন মুহম্মদ ইউসুফ খান। তার পিতা লালা গোলাম সারওয়ার ছিলেন একজন ফল ব্যবসায়ী।

১৯৩০ সালে মুম্বাই আসেন তাদের ১২ সদস্যের পরিবার। একটি ক্যান্টিনের মালিক ও ফল সরবরাহকারী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। তার স্বপ্ন ছিল সিনেমায় অভিনয় করার।

১৯৪৩ সালে ‘বম্বে টকিজ’ এর হয়ে কাজ শুরু করেন। সেখানে কিশোর কুমারের দাদা অশোক কুমারের সাথে পরিচয় হয়। আরও পরিচয় হয় সে সময়ের বিখ্যাত অভিনেত্রী দেবীকা রানীর সাথে।

তিনি বলেন, 'মুহম্মদ ইউসুফ খান হিরোর এমন নাম দর্শকদের অপছন্দ হতে পারে।' তিনি তাকে একটি আকর্ষণীয় নাম গ্রহণের পরামর্শ দেন। সামনেই ছিলেন অশোক কুমার। হিন্দি লেখক ভগবতি চরণ বর্মা কুমারের আগে দিলীপ যোগ করে মুহম্মদ ইউসুফ খানের পর্দার নামকরণ করেন দিলীপ কুমার।

অনেক কালজয়ী ছবির নায়ক ছিলেন দিলীপ কুমার। একজন ভারতীয় অভিনেতা হিসাবে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুরস্কার জেতার জন্য ‘গিনেস বুক অব রেকর্ড’ এ নাম লেখান। তিনি ৮ বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ ১৯ বার ফিল্মফেয়ার মনোনয়ন পান। এছাড়া তাকে ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হয়।

১৯৯৪ সালে তাকে ‘দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার’ দেওয়া হয়। ১৯৯৮ সালে পাকিস্তান সরকার তাকে সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘নিশান-ই-ইমতিয়াজ’ প্রদান করেন। ২০১৫ সালে ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মবিভূষণ’ পুরস্কার প্রদান করেন।

এ আর রহমান:

১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারি ভারতের তামিলনাড়ুতে জন্মগ্রহণ করেন এ এস দিলীপ কুমার। তার পিতার নাম আর কে শেখর। তিনি ছিলেন তামিল সিনেমার গানের সুরকার। মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবাকে হারান দিলীপ। তিন বোন ও মাসহ ৫ সদস্যের পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে বালক দিলীপের উপর।

১৯৮৮ সালে দিলীপ যখন ২১ বছরের যুবক তখন তার এক বোন গুরুতর অসুস্থ হন। সম্ভব সব কিছুই করা হয়েছিল তার জন্য। কিন্তু তিনি ভালো হচ্ছিলেন না। সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। তখন পরিবারের এক বন্ধুর উপদেশে তারা এক মুসলিম পীর শেখ আব্দুল কাদের জিলানীর কাছে যান। যিনি পীর কাদরি নামেও পরিচিত ছিলেন।

পীরের দোয়ার তার বোন দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন। ঘটনাটি তাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তিনি পুরো পরিবারসহ ইসলাম গ্রহণ করেন। এ এস দিলীপ কুমার হয়ে যান আবদুল রহমান।

আবদুল রহমানের মা জ্যোতিষ বিদ্যায় বিশ্বাসী ছিলেন। তারা ধর্মান্তরিত হওয়ার পর এক জ্যোতিষীর কাছে গেলে আবদুল রহমানের সংক্ষিপ্ত নাম এ আর রহমান রাখার উপদেশ দেন। তিনি বলেন, 'নামের আগে দুটি সংক্ষিপ্ত বর্ণ থাকলে দিলীপ বিখ্যাত হয়ে উঠবেন।'

সব সময় বিখ্যাত হয়ে উঠার স্বপ্ন দেখতেন দিলীপ। জ্যোতিষীর কথা গভীরভাবে বিশ্বাস করেছিলেন তিনি।

কিন্তু আবদুল রহমানকে সংক্ষিপ্ত করলে হয় এ রহমান। এ জটিলতা কাটাতে দিলীপ দ্বিতীয় দফা নাম পরিবর্তন করেন। তৎকালীন বিখ্যাত তবলা বাদক আল্লাহ রাখার নামানুসারে তিনি আল্লাহ রাখা রহমান (এ আর রহমান) নাম গ্রহণ করেন।

এ আর রহমান অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ইসলাম আমাকে শান্তি দিয়েছে। দিলীপ রূপে আমি একটা হীনমন্যতায় ভুগতাম। এ আর রহমান হয়ে আমার মনে হয় পুনর্জন্ম লাভ করেছি।’

তামিল ও হিন্দি সিনেমায় সুর দেওয়া ছাড়াও তিনি লন্ডন, আমেরিকা ও চীনা ছবিতে সুর দেন। সংগীত জীবনে জাতীয় পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন এ আর রহমান। ম্লামডগ মিলিয়নিয়ার ছবির জন্য দুটি ‘অস্কার’ পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর