ভোটারদের ভোটমুখী করাই চ্যালেঞ্জ

, নির্বাচন

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা | 2023-08-30 00:56:04

দশ বছর আগেও যেকোনো পর্যায়ের নির্বাচন এলেই মানুষের ভেতর এক ধরনের উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করত। কে হবেন চেয়ারম্যান-মেম্বার আর কে হবেন সংসদ সদস্য—এসব নিয়ে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্র আলোচনার ঝড় উঠত। ভোটের দিন পাড়া-মহল্লায় মানুষজন দল বেঁধে ভোট দিতে যেতেন। অনেক বাড়িতে ভালোমন্দ খাওয়ার আয়োজনও থাকত।

সেই সংস্কৃতি এখন একেবারেই উঠে গেছে বলা চলে। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চলছে। কেন এত কম ভোটার উপস্থিতি তাই নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশন নানা যুক্তি দেখালেও ভোটারদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই তাতে। অন্যদিকে বিরোধী পক্ষ বলছেন ভোট প্রদানের সংস্কৃতি নষ্ট করেছে সরকার, তাই মানুষের আগ্রহ কম।

এই জল্পনা-কল্পনার মধ্যে আবার শুরু হয়েছে নির্বাচনী হাওয়া। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং ৫টি সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীরা সরগরম। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ থাকলেও বিরোধী পক্ষের মুখে শুধুই অভিযোগ। তবে দুই পক্ষের কেউই ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনার কথা বলছেন না।

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে, বিএনপি এখনো তাদের প্রার্থী দেয়নি। অন্যদিকে ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যবসায়ী নেতা শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। এছাড়া যশোর-৬ আসনের  আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন চাকলাদার, গাইবান্ধা-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উম্মে কুলসুম, বগুড়া-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহাদারা মান্নান এবং বাগেরহাট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন আমিরুল ইসলাম মিলন।

এরা সবাই প্রার্থী চূড়ান্ত হবার পর নিজ এলাকায় আনন্দ মিছিল কেউ বা মিষ্টি বিতরণ করেছেন। ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করার সময় তাদের হাতে নেই, এমনটিই মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। যাদের ভোটে এমপি হবেন তাদের মতামত নেওয়ার জন্য উঠান বৈঠক বা মতবিনিময় সভা করার সময়ও তাদের হাতে নেই।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতি নিয়ে হয়েছে নানান সমালোচনা। সেই নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে প্রার্থীদের ভোটার প্রীতি কতটুক কার্যকর ছিল। সরকারি দল ও বিরোধী দলের মেয়র প্রার্থীরা রাস্তায় রাস্তায় সভা-সমাবেশ করেছেন, মাইকিং করেছেন, গান বাজিয়ে উৎসব করেছেন, কিন্তু ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়ার বিষয়টি তারা খুব একটা আমলেই নেননি।

ঢাকার কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা তো কেউ ভোট চাননি, গলি দিয়ে যাওয়ার সময় হাত নেড়ে দেখান—এটা তো ভোট চাওয়ার নমুনা না। আগে তো প্রতিজন ভোটারের কাছে ভোট চাইত।

মোহাম্মদপুর টিক্কাপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা নূর হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, বয়স তো ৬৫ পার করলাম। নির্বাচন বহু দেখেছি, এভাবে রাস্তায় রাস্তায় দৌড়াইয়া ভোট চাইতে দেখি নাই। মানুষের এত কি ঠেকা যে, ভোট দিতে যাবে। আর গেলেই যদি সেখানে গোলমাল হয় কে রক্ষা করবে?

তাই এবার উপ-নির্বাচন ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটার টানতে নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে বিশেষ যৌথসভায় এ নির্দেশনা দেন তিনি।

যৌথসভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চারটি আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছি। প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য সর্বাত্মকভাবে অংশ নিতে হবে। সবার উদ্দেশ্য থাকবে যাতে ভোটার উপস্থিতিটা বেশি হয়। আমরা বিষয়টা চেষ্টা করে দেখতে পারি।

নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থা ফেরাতে না পারলে ভোটারদের ভোটমুখী করা চ্যালেঞ্জ বলে জানালেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর ভোটারদের আস্থা, অনাস্থার বিষয়টি উপস্থিতির পরিমাপক। এজন্য নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিশ্চিত করতে হবে তারা কতটুক সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই নির্বাচনী প্রতিযোগিতামূলক, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। নির্বাচন ছিল একটা উৎসবমুখর পরিবেশ, সেই ব্যবস্থাটা একেবারে ধুলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ভোটারদের ভোটমুখী করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জ। আগে ওই সব প্রতিষ্ঠানকে অর্থবহ করতে হবে যারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করবে। নির্বাচন কমিশনে যোগ্য নেতৃত্ব আনতে পারলে মানুষের ভেতর আস্থা ফিরে আসবে। সদ্য শেষ হওয়া সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি সত্যিকার অর্থে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে চায় তাহলে তাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। তা না হলে এই যে ভোট বিমুখ মানুষ তাদের ফেরানো কঠিন হয়ে যাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর