কিশোরগঞ্জ-১: সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে বদলে গেল দৃশ্যপট

বিবিধ, নির্বাচন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কিশোরগঞ্জ,বার্তা২৪.কম, | 2023-08-29 19:54:30

যতক্ষণ জীবিত ছিলেন, ততক্ষণ তিনি ছিলেন কিশোরগঞ্জ-১ (সদর ও হোসেনপুর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি)। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনেও বিজয়ী হয়েই মারা গেছেন তিনি। তার প্রার্থিতার সামনে দলের সবাই ছিলেন নিশ্চুপ। এক বাক্যে সবাই তাকেই মেনে নিয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের একমাত্র ও বিকল্পহীন প্রার্থী হিসাবে। কিন্তু সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে আমূল বদলে গেল সেই চিরাচরিত রাজনৈতিক দৃশ্যপট।

বিগত বছরগুলোতে জাতীয় নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন কিশোরগঞ্জ-১ নির্বাচনী আসনের শেষ কথা। দলের নেতা, কর্মী ও এলাকার জনগণ ধরেই নিয়েছিলেন পৈত্রিক এই আসনটি সৈয়দ আশরাফের জন্য নির্ধারিত। ফলে এ আসনে প্রার্থিতা নিয়ে বিশেষ কোনো ঝামেলা হয় নি কখনোই। সৈয়দ আশরাফ দাঁড়াবেন, এই ঘোষণাটি প্রচারিত হলে সবাই দলবদ্ধভাবে তার পক্ষে মাঠে নেমে গেছেন।

সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের আগে বহুজন প্রার্থী হতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত সৈয়দ আশরাফের অনুকূলে কাজ করেন সবাই। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেজো পুত্র রাসেল আহমেদ তুহিন কিশোরগঞ্জ-১ আসনে ব্যাপক জনসংযোগ ও প্রচারণা করার পরেও সৈয়দ আশরাফ দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন জেনে তার সমর্থনে কাজ করেন। ১৪ দলের পক্ষে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে প্রার্থী ছিলেন গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন। তিনিও অবশেষে সৈয়দ আশরাফের পক্ষে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নৌকা প্রতীকের হয়ে মাঠে-ময়দানে কাজ করেন। ফলে বিদেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সৈয়দ আশরাফ নির্বাচনী এলাকায় অনুপস্থিত থেকেও সকলের শ্রম ও সমর্থনে বিপুলভাবে বিজয়ী হন।

বিজয়ী হওয়ার কয়েক দিন পরই মারা যান সৈয়দ আশরাফ। তৎক্ষণাত বদলে যায় কিশোরগঞ্জ-১ আসনের রাজনীতির হালচাল এবং সম্ভাব্য প্রার্থিতার পরিস্থিতি। কে ধরবেন এ আসনের নৌকার হাল, তা এখন 'টক অব দ্য কিশোরগঞ্জ'।

বার্তা২৪.কমের পক্ষে কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও স্থানীয় বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ‘সৈয়দ আশরাফের উপস্থিতির সময়কাল আর তার অবর্তমানের পরিস্থিতিতে আকাশ-পাতাল ফারাক বিরাজমাত্র। আশরাফের সামনে কেউ প্রার্থী হতে চান নি। আশরাফের অনুপস্থিতিতে বহুজন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী হতে ইচ্ছুক।’

কিশোরগঞ্জ-১ আসনে ‘ইচ্ছুক’ প্রার্থীর তালিকায় দুইজন পরিচিত, প্রকাশ্য ও পূর্বনির্ধারিত। একজন হলেন সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী হিসাবে ঘোষিত কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ূন, যিনি দলের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য। আরেক জন আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলের পক্ষ থেকে নৌকার দাবিদার অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, যিনি গণতন্ত্রী পার্টির হয়ে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন এবং পরে সৈয়দ আশরাফের সমর্থনে তা প্রত্যাহার করেন।

সৈয়দ আশরাফের জীবদ্দশায় নির্বাচনী মাঠের আরেক লড়াকু প্রার্থী ছিলেন রাষ্ট্রপতির মেজো পুত্র রাসেল আহমেদ তুহিন, যিনি ব্যাপক জনসংযোগ ও প্রচারণা চালালেও সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রার্থী হন নি। সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুজনিত রাজনৈতিক শূন্যতা পূর্ণ করার জন্য তিনি প্রবলভাবে মাঠে নামবেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছে।

সবচেয়ে নাটকীয় বিষয় হচ্ছে, সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে তার একমাত্র সন্তান সৈয়দা রিমা ইসলামকে প্রার্থী করার একটি প্রবল চাপ জনমনে বিরাজ করছে। পলিটিক্যাল স্পটলাইটের আলো ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ও কর্মসূত্রে বসবাসকারী আশরাফকন্যাকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। তিনি প্রার্থী হতে চাইলে সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুশোকের ঘনীভূত আবেগ তার দিকে সঞ্চারিত হবে এবং দলীয় সমর্থন ও জনরায়ের প্লাবনে তিনিই বিনা বাধায় বিজয়ী হবেন। কিশোরগঞ্জ-১ আসনে সৈয়দ আশরাফের রক্ত ও রাজনীতির উত্তরাধিকার রূপে সৈয়দা রিমা ইসলামের আগমনের বিষয়টি সুনিশ্চিত না হলেও সে সম্ভাবনাকে কেউ এখনই নাকচ করছেন না। তিনি ইংল্যান্ড থেকে সব কিছু গুছিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরে আসছেন, আপাতত এমনটিই পরিবারের পক্ষ থেকে বার্তা২৪.কমকে বলা হয়েছে।

অগ্যতা সৈয়দা রিমা ইসলাম শেষ পর্যন্ত কোনো কারণে যদি রাজনীতি ও নির্বাচনে আভির্ভূত না হন, তাহলে সৈয়দ পরিবারের মধ্য থেকে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে অন্য কাউকে প্রার্থী করার চিন্তা-ভাবনাও করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সৈয়দ আশরাফের আপন ভাইদের মধ্য থেকে কোনো একজন অথবা চাচাতো ভাই সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।    

কিশোরগঞ্জ-১ আসনের রাজনীতি ও নির্বাচনী হিসাব সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে সম্পূর্ণ বদলে গেছে। দৃশ্যপট এখন পুরোপুরি ভিন্ন। আওয়ামী লীগের মধ্যেও এ আসনকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নানা রকমের মেরুকরণ। বিভিন্ন উৎসাহী নেতার মধ্যেও নির্বাচন করার একটি সুপ্ত বাসনা কাজ করছে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলের পক্ষ থেকে তাদের কাউকে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে রয়েছে প্রবল চাপ।

সব কিছু সামাল দিয়ে শেষ পর্যন্ত সৈয়দ আশরাফের আসনে কে নৌকার হাল ধরেন, তা জানতে আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। দেশের এই গুরুত্ববহ নির্বাচনী আসনকে কেন্দ্র করে হয়ত সৃষ্টি হবে রাজনৈতিক চমক ও উত্তেজনা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর